অপরাজনীতি দূর করে ছাত্র সংগঠনের সুষ্ঠু চর্চা প্রয়োজন

প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:৫১ | অনলাইন সংস্করণ

  সিদরাতুল মুনতাহা:

মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলা কোনো সমাধান নয়। আমাদের যদি মাথাব্যথা হয়, আমরা ওষুধের মাধ্যমে সেই ব্যথা দূর করার চেষ্টা করি এবং সঠিক ট্রিটমেন্ট হলে সেই মাথাব্যথা পুরোপুরি দূর করা ও সম্ভব হয়। দেশে ঠিক তেমনই অপরাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য তা দমন করার জায়গায় সমগ্র ছাত্র রাজনীতি বন্ধের নামে নানান ঘটনা ঘটে চলেছে বর্তমানে।

একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশে রাজনীতি থাকবে, রাজনৈতিক দল থাকবে, রাজনৈতিক চর্চা ও অনুশীলন থাকবে এবং তরুণ সমাজ বা ছাত্রছাত্রীরা এই রাজনৈতিক চর্চায় অংশগ্রহণ করবে - এটাই স্বাভাবিক, কেননা আগামীতে দেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে এই তরুণ ছাত্র সমাজের হাত ধরেই। তাই ছাত্রদের মাঝে এই রাজনৈতিক চর্চা বজায় রাখতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ছাত্র সংগঠন। ছাত্র সংগঠন হলো এমন একটি সংগঠন যা ছাত্রছাত্রীদের কল্যাণ ও অধিকার নিশ্চিতকরণ, তাদের সমস্যার সমাধান এবং শিক্ষাক্ষেত্রে গুণগত মান উন্নয়নে কাজ করে। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীরা কেন ছাত্র রাজনীতিকে ভয় পাচ্ছে এবং এর বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে এই প্রশ্ন থেকেই যায়। এর কারণ হিসেবে দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছাত্র সংগঠন পরিচালনার নামে অপরাজনীতির চর্চা হয় যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যতম একটি আতঙ্কের বিষয়। চলমান ছাত্র রাজনীতি বন্ধের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পেছনে অন্যতম কারণ হলো অপরাজনীতি। ছাত্র রাজনীতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে নিতান্তই একটি নেতিবাচক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে অপরাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের জন্যই।

রাজনীতির নামে অপরাজনীতির বিস্তারের কারণেই মূলত সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজনীতিবিমুখ। কেননা পথভ্রষ্ট রূপ নিয়েছে বর্তমান ছাত্র রাজনীতি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন সমালোচনার মধ্য দিয়ে চলেছে ছাত্র রাজনীতি যা তার অতীতের আদর্শ ও গৌরব হারিয়ে ফেলছে। অতীতে তাকালেই দেখতে পাই, পূর্বে আমাদের দেশের নানা অর্জনে ছাত্র রাজনীতি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। যেমন: ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ৬ দফা, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ গণতান্ত্রিক সকল আন্দোলনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে ছাত্রনেতারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, হলের সিট নৈরাজ্য, ইভটিজিং, র‍্যাগিং, ধর্ষণ, শিক্ষার্থী খুন ও শিক্ষক লাঞ্ছিতসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে ছাত্রদের নৈতিকতা ও মনুষ্যত্ব মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে যা রাজনীতির অপচর্চা বা অপরাজনীতির ই বহিঃপ্রকাশ। ২০১৯ সালে আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের পর ছাত্র রাজনীতি নিয়ে বুয়েট সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীর মধ্যেই ছাত্র রাজনীতি নিয়ে পূর্বের তুলনায় আরো বেশি ভয় কাজ করে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতেই বুয়েট কর্তৃপক্ষ ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিল। বর্তমানে ছাত্র রাজনীতি পুনরায় চালু করা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে দেখা গেছে, বুয়েটের প্রায় ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ই ছাত্র রাজনীতি চায় না এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী ই তাদের এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র নিপীড়ন, র‍্যাগিং, হল দখল ইত্যাদি কার্যকলাপ সুষ্ঠু রাজনীতির পরিচয় নয়, এগুলো অপরাজনীতি। ছাত্র রাজনীতির নামে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা যেভাবে র‍্যাগিং নামক সংস্কৃতির চর্চা করে এবং প্রশ্রয় দেয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে, তা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষতি বয়ে আনে। তবে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করলেই যে স্থায়ী কোনো সমাধান আনা যাবে এর কোনো নিশ্চয়তা আছে বলে আমি মনে করিনা। বরং অশুভ চক্রের তৎপরতা থেকে মুক্তি পেতে অপরাজনীতি দূর করে সুষ্ঠুভাবে ছাত্র সংগঠন পরিচালনা ও চর্চা করতে পারলেই মূলত এর সমাধান মিলবে। সেই সাথে যদি কোনো ছাত্র সংগঠনের সদস্য রাজনীতির নামে অপরাজনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করে তাহলে তৎক্ষণাৎ আইনগত ব্যবস্থা নিলে এই অপরাজনীতি মাথাচড়া দিয়ে উঠতে পারে না। গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখতে এবং অপরাজনীতি রুখে দিতে বাংলাদেশ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ও মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ক্যাম্পাসে সুশৃঙ্খল অবস্থা বজায় রাখতে অপরাধ ও অপরাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তোলা এবং ছাত্র সংগঠনের সুষ্ঠু চর্চা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।


আমার বার্তা/সিদরাতুল মুনতাহা/এমই