লোডশেডিং আতঙ্ক ছড়িয়ে বন্ধ হচ্ছে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৩, ১৮:২৩ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন ডেস্ক

ডলার সংকটে আগেই বন্ধ হয়ে গেছে কয়লা আমদানি, সর্বশেষ মজুদ ৫০ হজার মেট্রিক টন কয়লা শেষ হচ্ছে । ফলে পুরোপুরি বন্ধ হতে যাচ্ছে দেশের বৃহত্তম ও সর্বাধুনিক পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। কয়লা সংকটে এর আগে গত ২৫ মে একটি ইউনিট বন্ধ হয়েছিল। কয়লার মজুত ফুরিয়ে যাওয়ায় অবশিষ্ট ইউনিটও বন্ধ হতে যাচ্ছে। এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকেও সমাধান মেলেনি।

জ্বালানি সংকটের কারণে ৫ জুনের পর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র সাময়িক সময়ের জন্য পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

এলসি খুলতে দেরি হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী  বলেন, ‘কয়লা আমদানি করতে আরও অন্তত ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগবে।

বাংলাদেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কয়লা না থাকায় এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২ টি ইউনিটের একটিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হলে জাতীয় গ্রিডে অন্তত ১২শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে। এতে দেশে ভয়াবহ লোডশেডিং দেখা দিতে পারে। 

তীব্র গরমে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেড়েছে লোডশেডিং। তার উপরে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে কি অবস্থা হবে তা ভেবে আতঙ্ক বিরাজ করছে সর্বসাধারণের মাঝে। 

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মামুন, বলেন এমনিতেই তো দিনে-রাতে ২-৩ বার কখনো ৪ বার  লোডশেডিং এ ভুগতে হয়ে। এর মধ্যে শুনছি পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাবে। এতে করে নাকি লোডশেডিং আরো বাড়বে। লোডশেডিং যদি আরো বাড়ে তাহলে এই তীব্র গরমে মানুষ বাচঁবে কিভাবে।

সাধারণ ভোক্তারা বলেন, আগে রাজধানী ঢাকায় লোডশেডিং তেমন হতো না। কিন্তু এই বছর বিভিন্ন এলাকায় ৪-৫ বার করে ৫-৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। 

তবে ঢাকার অবস্থা এখন পর্যন্ত এক রকম থাকলেও  বাইরের শহরে এবং গ্রামাঞ্চলে ভয়াবহ লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও কোথাও ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। তীব্র গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় শিশু ও বয়স্কদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

বিসিপিসিএলের একজন প্রকৌশলী জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হলে সারা দেশেই এর প্রভাব পড়বে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলত ডলার সংকটে বিদেশ থেকে কয়লা আনা যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে বাকিতে কয়লা এনে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সচল রাখা হয়েছিল। এতে প্রতিষ্ঠানটির দেনা প্রায় ৩৬ কোটি ডলার। এই বকেয়া পরিশোধ না করলে নতুন করে কয়লা আনা সম্ভব হবে না।

 সংকটের সমাধানে কী করা হচ্ছে এমন প্রশ্নে বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদুল আলম বলেন, চীনা প্রতিষ্ঠান সিএমসিকে এরই মধ্যে ৬০ মিলিয়ন ডলার ফেরত দেওয়া হচ্ছে ।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকার ও আমরা এ মাসের ৩১ তারিখের মধ্যে ১০০ মিলিয়ন ডলার তাদের ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এরই মধ্যে ৬০ মিলিয়ন ডলার পেমেন্ট করা হয়েছে।’

খোরশেদুল আলম বলেন, ‘আমরা আশা করছি এর মাধ্যমে কয়েকদিনের মধ্যেই তাদের কয়লা কেনার অর্থ দিতে রাজি করতে পারবো।’ সিএমসির সাথে এই বিষয়ে আলোচনা শেষে কয়েক দিনের মধ্যেই তারা এলসি খুলতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন খোরশেদুল আলম।

তিনি জানান, এলসি খোলার পর জাহাজ যাবে, কয়লা লোড হবে, তারপর আসবে, আনলোড হবে– সব মিলিয়ে কমপক্ষে ২৫ দিন লাগবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম এখন অনেক কম। তারপরও জ্বালানি নিয়ে আমাদের দেশে কেন এ দুরবস্থা তা বোধগম্য নয়।’

আজকের এই সংকট কিন্তু হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি। কারণ গত ২৭ এপ্রিল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, পিডিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়ে বিসিপিসিএল জানায়, ৬ মাসের বেশি বকেয়া থাকায় সিএমসি পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, 'বকেয়া পরিশোধ না করা পর্যন্ত কয়লা সরবরাহ বন্ধ থাকবে।'

জানা যায়, পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা কিনতে ঋণ দেয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির চীনা অংশীদার চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ব এই সংস্থা আর বাংলাদেশের নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের যৌথ বিনিয়োগে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০২০ সালে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা কেনার দায়িত্ব সিএমসির ওপর, তারা কয়লা কেনার জন্য অর্থ দিয়ে থাকে এবং প্রতি ৬ মাস পরপর কয়লার টাকা আদায় করে ।

শেষ পর্যন্ত বিদ্যুতের এই সংকটের সমাধানের বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত বড় ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়েছে। সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা সঠিক পরিকল্পনায় চললেও প্রাথমিক জ্বালানির ধারাবাহিক সরবরাহ চ্যালেঞ্জে রয়েছে। এ ঘাটতি মেটাতে দেশের বাহির থেকে বিদ্যুৎ আনা হবে। এছাড়াও বিকল্প বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


এবি/টিএ