সরাসরি রোদে বের না হওয়ার পারামর্শ ডাক্তারের

তীব্র গরম-তাপদাহে বিপর্যস্ত জনজীবন, রয়েছে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি

২-৩ দিনের মধ্যেই বৃষ্টি,৩-৪ দিন চলবে তাপদাহ

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৩, ২১:০৬ | অনলাইন সংস্করণ

  তারেক আহমেদ

মৌসুমী ফল তালের আটি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন আমিনুল ইসলাম। এটাকে কেউ বলে তালের শাস, কেউ বলে তালের কুই, কেউ বলে তালের আটি। যে নামেই ডাকি না কেন  গরমকে কেন্দ্র করেই তার ব্যবসা। নরম রসালো তালের আটি খেয়ে মানুষ কিছুটা স্বস্তি লাভ করে। কিন্তু গত কয়েক দিনের গরমে আমিনুলের তালের আটির বিক্রি নেই বললেই চলে। তীব্র গরমের কারণে তালের আটির নরম রসালো অংশটুকু পর্যন্ত গরম হয়ে যায় ফলে মানুষ এখন আর খাচ্ছে না। 

সেগুনবাগিচায় তালের আটির বিক্রেতা আমিনুল বলেন, গত ৩ দিনের গরমে মানুষ এখন আর তালের শাস খায় না। কারণ একটা খাওয়ার পরে যখন দেখে ভিতরে গরম হয়ে আছে । তখন আর খেতে চায় না। এমন চলতে থাকলে আমার সংসার চালাবো কিভাবে।

তীব্র তাপদাহে বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন ছুটতে হচ্ছে সবাইকে । তবে সব চেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষকে, যাদেরকে প্রতিদিন রাস্তায় বের হতে হয়। গত কয়েক দিনের গরমের সঙ্গে বাড়তি উপসর্গ হয়ে যুক্ত হয়েছে তীব্র তাপদাহ। মানুষ রোদের তীব্রতা থেকে একটু স্বস্তির জন্য গাছের নিচে বা কোন ছায়ায় আশ্রয় নিয়েও স্বস্তি পাচ্ছে না ।কারণ তীব্র তাপদাহ এবং ভ্যাপসা গরম, ফ্যানের বাতাস, হাত পাখার বাতাস সবই গরম তাপ দেয়। একদিকে গরমের কষ্ট অন্যদিকে জীবিকার চিন্তা। সবকিছু মিলিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।

 সিএনজি চালক,রিক্সচালদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, গরমের কারণে রাস্তায় যাত্রী কম, আবার বেশি সময় চালাতেও পারিনা। 

দিনমজুরসহ  সবারই এক কথা, গরমে কাজ কমে গেছে।  আগের মতো খাটতেও পারিনা। কারণ গরমে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। 

পথচারী রকি দাস, হাটতে হাটতে ক্লান্ত হয়ে দেখলাম ফুটপাতের পাশে গাছের নিচে দাড়িয়েছেন। কাছে যেতেই বললেন, এতো গরমে হাটতে খুবই কষ্ট হয়। অথচ বিজয়নগর থেকে প্রেসক্লাবে যেতে রিক্সায় উঠতে ইচ্ছে করে না।  

একে তো মানুষ গরম-তাপদাহে হাঁসফাঁস করছে এখন তার সঙ্গে  যুক্ত হয়েছে লোডশেডিং। ফলে সবকিছু মিলিয়ে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হাসপাতলে বাড়ছে গরম কেন্দ্রীক রোগীর সংখ্য। গরমে সাধারণ মানুষকে প্রয়োজন ছাড়া রোদে বের না হওয়ার পরামর্শ দেন ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের ইমারজেন্সি মেডিক্যাল অফিসার ডাক্তার নাভিম কবির প্রতিক। 

তিনি বলেন, খুব বেশি প্রয়োজন না হলে তীব্র রোদে বের না হওয়াই ভালো। এছাড়া গরমে হিট স্ট্রকের ঝুঁকি থাকে সবচেয়ে বেশি। কারণ শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে হিট স্ট্রোক হয়। এই ঝুঁকি এড়াতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। শ্রমিক যারা কাজ করেন তাদের কিছু সময় পরপর ছায়ার মধ্যে আসতে হবে। বিশ্রাম নিয়ে তারপর আবারও কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে ছাতা মাথায় কাজ করতে হবে।  গরমে যেইসব সমস্যা দেখা দেয় তার অন্যতম একটা কারণ হলো পানি শূন্যতা। তাই বেশি বেশি পানি পান করতে হবে।

গরমে অতিষ্ঠ সবার আলোচনার বিষয় শান্তির পরশ বুলাতে কবে নামবে বৃষ্টি , কবে কমবে তাপদাহ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।

তাপপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়েছে- মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা আগামী ৪ থেকে ৫ দিন অব্যাহত থাকতে পারে।

এছাড়া রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।

আজকের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৭.৮ ডিগ্রী সে. এবং সর্বনিন্ম তাপমাত্রা ছিলো ২৯.২ ডিগ্রী সে. ।

এবি/টিএ