বাবার সাথে শেষ দেখা হলো না কানাডিয়ান প্রবাসী আফরোজার

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৩, ১৩:৪১ | অনলাইন সংস্করণ

  শুকতারা ইসলাম ঐশী

রাজধানী দক্ষিণখানের নদ্দা দক্ষিণ পাড়া এলাকায় আফরোজা বেগম (৪০) নামে এক নারীর অর্থগলিত লাশ উদ্ধার করেছে দক্ষিণখান   থানা পুলিশ।

নিহত নারী কানাডিয়ান প্রবাসী। তিনি নীলফামারির ডোমার উপজেলার নিজভোগডাবুড়ি গ্রামের আতাউল্লাহ মন্ডলের মেয়ে। দুই ভাই বোনের মধ্যে তিনিই বড় ছিলেন।

আফরোজার স্বামী আশরাফুল আলম (৫০) ধারাল বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে নিজ বাড়ির আঙিনাতেই গুম করার উদ্দেশ্যে বালু চাপা দিয়ে রাখে বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। ঘাতক আশরাফুল রাজধানী দক্ষিণখানের নদ্দা দক্ষিণপাড়া শামসুদ্দীন সরকারের ছেলে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত আফরোজার বাবার বরাতে জানা যায়, গত ২৬ মে শনিবার তিনি মেয়েকে দেখতে মেয়ের শ্বশুর বাড়ি আসার উদ্দেশ্যে মেয়ের কথার প্রেক্ষিতে আশকোনা এসে অপেক্ষা করতে থাকেন এবং বারবার মেয়েকে ফোন দিতে থাকে। প্রায় এক ঘণ্টা পর মেয়ের মুঠোফোন থেকে বাবার ফোনে কল আসে। মেয়ের পরিবর্তে কথা হয় মেয়ে জামাইয়ের সাথে। শ্বশুর তার মেয়ে জামাই বাড়ি আসবে অথচ জামাই নাকি বিষয়টা জানেই না। এতে তিনি অবাক হন এবং মেয়ে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে পাশের বাড়িতে আছে বলে জানায় মেয়ে জামাই।

এভাবে চলে যাই বেশ কয়েক ঘণ্টা। সবাই দুপুরে খাবার টেবিলে বাহারি খাবার নিয়ে বসলেও খাবারে মন বসে না তার। অস্থির হয়ে জামাইকে বারবার জিজ্ঞেস করে আমি তো কখন বাসায় এসেছি। তুমি কি এখনো খবর পাঠাওনি? আমার মেয়ে আসছে না কেন?

প্রতিউত্তরে জামাই বলে, আপনার মেয়ে আমার সাথে রাগ করে বনানী চলে গেছে। আমি কিছুক্ষণের মধ্যে নিয়ে আসছি। এই বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। 

কিছু সময় বাইরে কাটিয়ে এসে বলে আপনার মেয়ে নাকি আমার সাথে সংসার করবে না তাই এই বাড়িতে আর আসবে না। আপনার সাথে ফোনে কথা বলবে। সে আরো জানায় কানাডায় নাকি তার খুব জরুরি কাজ পড়ে গেছে সে কালকের মধ্যেই চলে যাবে। তার মেয়ে যাবে এক সপ্তাহ পরে।

কিন্তু মেয়ে জামাইয়ের এমন এলোমেলো কথাগুলো জন্মদাতা বাবার মনে সন্দেহের দানা বাঁধে। বাবা কোন কিছু বুঝে উঠতে না পেরে তাৎক্ষণিক নীলফামারীতে গ্রামের বাড়িতে ছেলে আরিফুলকে দ্রুত ঢাকা আসতে বলে এবং তার সন্দেহ বাড়তে থাকাই তিনি ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে জানান তার মেয়ে নিখোঁজ। এদিকে জামাইও চলে যাচ্ছে কানাডা। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে মেয়ে জামাই কানাডিয়ান নাগরিক হওয়ায় পুলিশ তাকে দ্রুত থানায় গিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করতে বলে।

এদিকে বৃদ্ধ বাবা কোন কিছু বুঝে উঠতে না পেরে ছেলেকে ফোন দিয়ে দ্রুত ঢাকা আসতে বলে। ছেলে নীলফামারী থেকে ঢাকা এসে ভাগিনীকে চুপিসারে বাবা-মায়ের সাথে কি হয়েছে জানতে চাইলে ভাগিনী জানায় বাবা মায়ের অনেক ঝগড়া হয়েছে কিন্তু বাবা আমাদেরকে সিনেমা দেখতে পাঠিয়ে ছিল।

সন্দেহ আরো ঘনীভূত হওয়ায় মৃত আফরোজার ভাই (২৭ মে) তাৎক্ষণিক দক্ষিনখান থানায় তার বোন নিখোঁজ হয়েছে মর্মে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

কিন্তু আফরোজার ঘাতক স্বামী আশরাফুল সবাইকে নয় ছয় বুঝিয়ে নানা কৌশলে ভাগ্নিকে নিয়ে কানাডা চলে যান।

এদিকে সাধারণ ডায়রির তদন্তভার পরে দক্ষিণখান থানার সাব-ইন্সপেক্টর রেজিয়া খাতুনের উপর। রেজিয়া খাতুন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা ও আইনি কৌশলকে কাজে লাগিয়ে সখ্যতা গড়ে তোলে ঘাতক আশরাফুল ও তার পরিবারের সাথে। সমস্ত অপরাধকে ধামাচাপা দিয়ে তাদেরকে রক্ষা করার ছলে হয়ে ওঠে তাদের পরিবারেরই একজন। আর এভাবেই ঘাতক আশরাফুলের কাছ থেকেই স্বীয় স্ত্রী আফরোজা হত্যার লোমহর্ষক কাহিনী, নিজ হাতে বটি দিয়ে খুন করার স্বীকারোক্তি এবং কোথায় পুতে রাখা হয়েছে যাবতীয় বিষয় উদঘাটন করতে সক্ষম হয় সাব-ইন্সপেক্টর রেজিয়া খাতুন। 

পরে লাশ সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট টিম এসে বাড়ির আঙিনা থেকে আফরোজার লাশ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য  ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে প্রেরণ করে।

এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য  ঘাতক আশরাফুলের বাবা, ভাই, বোন, ভাইয়ের স্ত্রী ও ভাতিজিকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। 

এদিকে উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোরশেদ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা দ্রুতই তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। প্রয়োজনে সর্বোচ্চ আইনি প্রচেষ্টায় ও সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী আসামিকে দেশে ফিরিয়ে এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

এবি/ জিয়া