রাজসাক্ষী আবজালুলের জবানবন্দিতে ৬ লাশ পোড়ানোর রোমহর্ষক বর্ণনা

প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:৫৯ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

রাজসাক্ষী আবজালুলের জবানবন্দিতে ৬ লাশ পোড়ানোর রোমহর্ষক বর্ণনা। ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দিনে ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় ছয় মরদেহ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জন আসামির বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিয়েছেন রাজসাক্ষী এসআই শেখ আবজালুল হক। সেই মরদেহ কীভাবে পোড়ানো হয়েছে এবং এই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত এর রোমহর্ষক বর্ণনা উঠে এসেছে এই পুলিশ কর্মকর্তার জবানবন্দিতে।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) বেলা ১১টার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে জবানবন্দি দেওয়া শুরু করেন তিনি। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

জবানবন্দিতে ঘটনার পুরো বর্ণনা তুলে ধরেন রাজসাক্ষী আবজালুল। যদিও মরদেহ পোড়ানোর সময় তিনি ছিলেন না। তবে ১৫ আগস্ট নিজের ইস্যু করা অস্ত্র জমা দিতে এসে জানতে পারেন লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার কথা। আশুলিয়া থানার তৎকালীন ওসি সায়েদ ও এএসআই বিশ্বজিৎ মিলে ছয়টি মরদেহ পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেন বলে জানান তিনি।

সবশেষ তিনি ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা চান। শহীদদের জন্য কিছু করতে না পারার জন্য আক্ষেপও প্রকাশ করেন।

গত ২১ আগস্ট এ মামলায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২। ওই সময় উপস্থিত আট আসামির সাতজনই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তবে দোষ স্বীকার করেন এসআই শেখ আবজালুল হক। একইসঙ্গে রাজসাক্ষী হতে চেয়ে মামলার ব্যাপারে যা জানেন সব আদালতের কাছে বলতে চান এই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে তার দোষ স্বীকারের অংশটুকু রেকর্ড করা হয়। একইসঙ্গে লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজসাক্ষী হওয়ার অনুমতি পান তিনি।

গত ৫ নভেম্বর ২২ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন প্রত্যক্ষদর্শী শাহরিয়ার হোসেন সজীব। তিনি জানান, তার সামনেই একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এমনকি তার বন্ধু সাজ্জাদ হোসেন সজলকেও আগুনে পুড়িয়ে দেয় পুলিশ। পরে তাকে জেরা করেন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

গত ৩০ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন গুলিবিদ্ধ হওয়া ভুক্তভোগী সানি মৃধা। ২১ নম্বর সাক্ষী হিসেবে দেওয়া জবানবন্দিতে পুলিশের গুলিতে নিজে আহত হওয়ার কথা জানান তিনি। একইসঙ্গে গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার নির্মমতার দৃশ্যের বিবরণ দেন। গত ২৯ অক্টোবর জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন আশুলিয়া থানার এসআই মো. আশরাফুল হাসান। তিনি একই থানার ওসির নির্দেশে চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল রাইফেলের ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেন বলে জানিয়েছেন। পরে থানায় জমা দেন এ আলামত।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম দিনের মতো সাক্ষ্য দেন শহীদ আস সাবুরের ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম ও শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের বাবা মো. খলিলুর রহমান। এর আগের দিন সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার সেই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা তুলে ধরেন তিনি।

এ মামলায় গ্রেফতার আট আসামি হলেন— ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুল। তবে সাবেক এমপি সাইফুলসহ আটজন এখনো পলাতক রয়েছেন।


আমার বার্তা/জেএইচ