পুরোনো প্রক্রিয়ায় দুটি টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স পেল এনসিপির ২ নেতা
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩৫ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার যে প্রক্রিয়ায় বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের (টিভি) লাইসেন্স দিত, সেই একই প্রক্রিয়ায় নতুন দুটি টিভির অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। চ্যানেল দুটির নাম ‘নেক্সট টিভি’ ও ‘লাইভ টিভি’।
নেক্সট টিভির লাইসেন্স পেয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক মো. আরিফুর রহমান তুহিন। তিনি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তিনি একটি ইংরেজি দৈনিকের স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। এনসিপি গঠিত হওয়ার পর তিনি দলটির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হন।
লাইভ টিভির লাইসেন্স পেয়েছেন আরিফুর রহমান নামের আরেকজন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বছর ছয়েক আগে পড়াশোনা শেষ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি একটি ইংরেজি দৈনিকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ছিলেন। তিনি জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ছিলেন। তবে এনসিপিতে যোগ দেননি।
টিভি চ্যানেল প্রতিষ্ঠা ও চালানোর মতো আর্থিক সক্ষমতা আরিফুর রহমান তুহিন ও আরিফুর রহমানের আছে কি না, সে প্রশ্ন রয়েছে। কী বিবেচনায় তাঁদের লাইসেন্স দেওয়া হলো, সে বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে প্রশ্ন পাঠানো হয়েছিল। তবে উত্তর পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আগের প্রথা অনুযায়ী নতুন টিভির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
জানা গেছে, নেক্সট টিভির লাইসেন্স পেয়েছেন মো. আরিফুর রহমান তুহিন নামের এক ব্যক্তি। আর লাইভ টিভির লাইসেন্স পেয়েছেন আরিফুর রহমান নামের আরেকজন। সূত্র জানিয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাড়ে ১৫ বছরে ২৮টি টেলিভিশন লাইসেন্স পেয়েছে। এসবের মালিকদের বেশিরভাগ সরকারঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ। তারাই এসব চ্যানেলের লাইসেন্স পেয়েছেন।
বর্তমানে দেশে অনুমোদিত ৫০টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল রয়েছে। এর মধ্যে পূর্ণ সম্প্রচারে রয়েছে মাত্র ৩৬ প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া ১৪টি সম্প্রচারের অপেক্ষায় আছে। অনুমোদিত আইপি টিভি (ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিভিশন) রয়েছে ১৫। টিভি চ্যানেলের আরও কিছু আবেদন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিক বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে পারেন। এ জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র, প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্র (আর্টিকেল অব মেমোরেন্ডাম), ইনকরপোরেশন সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর সনদ, ব্যাংক সলভেন্সি সনদ, প্রকল্প প্রস্তাব এবং ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চ্যানেল পরিচালনার সক্ষমতার অঙ্গীকারনামা জমা দিতে হয়।
আবেদন জমা দেওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হয়। লাইসেন্স অনুমোদনের পর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে ‘ফ্রিকোয়েন্সি ক্লিয়ারেন্স’ নিতে হয়, যা মূলত সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সবুজ সংকেতের ওপর নির্ভর করে।
বাংলাদেশে বেসরকারি টিভি চ্যানেল প্রতিষ্ঠার অনুমোদনের নীতিমালা প্রণয়ন করা হয় ১৯৯৮ সালে। এরপর বিভিন্ন মেয়াদে সরকারগুলো টিভি লাইসেন্স প্রদান করে। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার তিনটি চ্যানেলকে অনুমোদন দেয়। পরে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ১০টি চ্যানেল অনুমোদন পায়।
২০০৯ সালে আবারও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ১০টি চ্যানেলকে লাইসেন্স দেয়। ২০১০ সালে আরও দুটি, ২০১১ সালে তিনটি এবং ২০১৩ সালে আরও ১৫টি চ্যানেলকে লাইসেন্স দেওয়া হয়। - সূত্র: প্রথম আলো
আমার বার্তা/জেএইচ