নিউইয়র্কে ভারতের তীব্র সমালোচনা করলেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১৫ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

নিউইয়র্কে এশিয়া সোসাইটি ও এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউট আয়োজিত অনুষ্ঠানে কথা বলেন ড. ইউনূস

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বসেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশন। এই অধিবেশনে যোগ দিতে এখন নিউইয়র্কে আছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

অধিবেশনের ফাঁকে বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এশিয়া সোসাইটি ও এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউট আয়োজিত এক অনুষ্ঠানেও যোগ দেন তিনি। সেখানে আলাপচারিতার সময়  আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার গুরুত্বের ওপর জোর দেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় ভারত-বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সম্পর্ক নিয়েও বেশ কিছু কথা বলেন তিনি, যেখানে ভারতের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা উঠে আসে।  

ড. ইউনূস বলেন, আমাদের আঞ্চলিক অর্থনীতির কথা ভাবা উচিত। এটাই আমাদের করা উচিত। কিন্তু বর্তমানে ভারতীয়দের সঙ্গে আমাদের সমস্যা হচ্ছে, কারণ তারা আমাদের শিক্ষার্থীদের কার্যকলাপ পছন্দ করছে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও তরুণদের মৃত্যুর জন্য দায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে ভারত। এটি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করেছে। পাশাপাশি ভারত থেকে অনেক মিথ্যা খবরও ছড়ানো হয়েছে, যা খুবই খারাপ বিষয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এসবের সঙ্গে তালেবানের প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত খবর যুক্ত করা হয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যমে। এমনকি তারা বলেছে, আমি নিজেও নাকি তালেবান। 

এ সময় মজার ছ‌লে তিনি ব‌লেন, আমার দাড়ি নেই, বাড়িতে রেখে এসেছি।

সার্কসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থার গুরুত্ব তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, আপনারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন। বাংলাদেশও আপনার অঞ্চলে বিনিয়োগ করবে। এটাই সার্কের ধারণা। সার্কের পুরো ধারণা বাংলাদেশে জন্মেছে এবং বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের রাজধানীতে এই ধারণা প্রচার করেছে। সার্ক একটি পরিবারের মতো, যার মূল ভাবনা ছিল দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে একত্রিত করা। তরুণরা যেন একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে, শিক্ষা ও ব্যবসায় অংশগ্রহণ করতে পারে।

তি‌নি বলেন, একে অপরের দেশে সফর করা, বন্ধুত্ব গড়ে তোলা, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে পড়াশোনা করা এবং দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটাই মূল ধারণা। তবে কিছুকাল আগে এটি কোনো এক দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খায়নি। তাই আমরা এটিকে স্থগিত করতে বাধ্য হই। আমরা দুঃখিত, এবং সবাইকে আবারও একত্রিত করতে চাই। এটাই আমাদের সমস্যার সমাধানের একমাত্র পথ।

ড. ইউনূস বলেন, আমি বলেছিলাম, প্রতিবেশী দেশগুলো যেমন নেপাল, ভুটান, এবং ভারতের সাতটি রাজ্যের কথাও ভাবুন। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে সাতটি রাজ্য রয়েছে, যাদের সমুদ্র সংযোগ নেই। এগুলো ল্যান্ডলকড অঞ্চল।

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে রোহিঙ্গা সংকটের কোথাও উঠে আসে। তিনি বলেন, আসিয়ানের বর্তমান চেয়ার মালয়েশিয়া। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই সমঝোতায় আসা সহজ নয়, বিশেষ করে মিয়ানমার, যাদের রোহিঙ্গা বিষয়ক সমস্যা রয়েছে। তারা হয়তো এগিয়ে আসবে না, তবে আমরা কাজ চা‌লি‌য়ে যাব। আমরা মনে করি না, এটি মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে স্থায়ী দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করবে। আমাদের তা করার দরকার নেই। তাই সব সমস্যা সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গারা চাইলে মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবে, তাদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা ও পেশায় ফিরে যেতে পারবে।

তি‌নি আরও বলেন, আমাদের মিয়ানমারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকবে। একে অপরের সঙ্গে বিরোধ করা কারো জন্যই উপকারী নয়। তাই সমস্যার সমাধান করতে হবে।


আমার বার্তা/এমই