পিআর নয় আরপিও অনুযায়ী ভোট, ফেব্রুয়ারির অপেক্ষায় সিইসি
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:৩২ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

জাতীয় নির্বাচনের আগে সব গোলমাল ঠিক হয়ে যাবে এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা হবে-এমন কথা বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, বিদ্যমান সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী ফেব্রুয়ারিতে ভোটের জন্য অপেক্ষায় সবাই। রমজানের আগে ভোটের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। ভোটের দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা হবে। কেউ ফাউল করতে নামবেন না।
১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮ সালের ভোটের আগেও গোলমাল হয়েছিল মন্তব্য করে সিইসি বলেন, নির্বাচনের সময় এলে সব ঠান্ডা হয়ে যাবে। সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরিতে সর্বশক্তি দিয়ে নামবে ইসি।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
বিকেলে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কানাডার অভিজ্ঞতা, শাপলা নিয়ে কাড়াকাড়ি, জাতীয় পার্টিকে সংলাপের আমন্ত্রণ, পিআর পদ্ধতি, পোস্টাল ভোট, নতুন দল নিবন্ধন, নির্বাচনী পরিবেশ ও ইসির ভোট প্রস্তুতিসহ সার্বিক বিষয়ে কথা বলেন সিইসি।
দুই সপ্তাহের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সিইসি বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা বলছেন ইসির ওপর কনফিডেন্স রি-স্টোর করতে। আমাদের ওপর অনাস্থার ভাব রয়েছে। আমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা দিয়েছি। নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর ও অংশগ্রহণমূলক করতে ইসির উদ্যোগ, আইন সংস্কার বিষয়ে জানিয়েছি। প্রবাসী বাংলাদেশিরা খুবই সন্তুষ্ট।
সিইসির উপস্থিতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আস্থা, বিশ্বাস বেড়েছে বলে জানান তিনি।
‘আমার উপস্থিতি সেখানে তাদের হাইলেভেলে কনফিডেন্স এনেছে। প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ভোটিং, এটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আপনারা শরিক হন, অংশগ্রহণ করুন; এতে আমাদের চেষ্টা ফলপ্রসূ হবে।’ আইটি সাপোপোর্টেড পোস্টাল ভোটিংয়ের সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপগুলো কানাডার দুই শহরে মতবিনিময়ে তুলে ধরেন সিইসি।
তিনি বলেন, পোস্টাল ভোটিং অনেক সহজভাবে ডেলিভার করতে পারবো। টরন্টো, অটোয়ায় সবার আগ্রহ দেখেছি। সরকারও সহযোগিতা করছে। প্রবাসীরা এবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করা গেলেও মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীদের একসঙ্গে আলোচনার তাগিদও এসেছে।
এ প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, অর্ধেক প্রবাসী মধ্যপ্রাচ্যে রয়েছেন। কিন্তু সবাইকে এক জায়গায় এনে কথা বলা সহজ নয়। এখানে নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমেরিকা, জাপান, কানাডায় সহজ হচ্ছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে নানা কারণে একসঙ্গে এনে প্রচার কাজ সহজ হচ্ছে না।
কানাডা সফরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দ্রুত সমস্যার সমাধান করার কথা জানান তিনি। আমরা যথেষ্ট সফলতা পাবো আশা করি। যেসব গ্যাপ রয়েছে, তা পূরণ করে নিতে পারবো। সহজভাবে নিবন্ধন করে নিতে পারবো।
>> নতুন দল নিবন্ধনে কেন বিলম্ব
সেপেম্বরের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধন শেষ করার কথা ছিল। ২২টি দলের সরেজমিনে তদন্ত শেষে নিবন্ধনযোগ্যদের বিষয়ে আপত্তি আছে কি না পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু কিছু দলের বিষয়ে আরও যাচাইয়ের সুবিধার্থে সময় লাগছে।
সিইসি বলেন, কাজ দ্রুত চলছে। টার্গেট ছিল এ মাসে করে ফেলতে পারবো। বিভিন্ন দল নানান অভিযোগ নিয়ে আসছে। আমাদের কিছু অতিরিক্ত ইনফরমেশন কালেক্ট করতে হচ্ছে। নিশ্চিত হতে হচ্ছে, তারা সঠিকভাবে দিয়েছে তথ্য। এজন্য সময় লাগছে।
তিনি জানান, দলে বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে বিজ্ঞপ্তি দিলেও চূড়ান্ত নয়। কারও আপত্তি-অভিযোগ এলে তা নিষ্পত্তি করতে হবে। এরপর চূড়ান্ত হবে।
কোন কোন দল নিবন্ধন পাচ্ছে তা বলতে নারাজ সিইসি। ‘গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তথ্য সংগ্রহ নয়, আমাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে কাজ চলছে’।
>> শাপলা নিয়ে এখন কেন এত কথা
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আগে নাগরিক ঐক্য শাপলা প্রতীক দাবি করলে তা নাকচ করে দেয় নির্বাচন কমিশন। এরপরও কেন এতে আলোচনা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সিইসি।
তিনি বলেন, এনসিপি শাপলা চেয়েছে এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অথচ শপলা চেয়েছিল নাগরিক ঐক্য, তারা প্রথম চেয়েছিল। তখন আলোচনায় আনেনি। এখন কেন এত আলোচনা? নাগরিক ঐক্যকে শাপলা দেইনি আমরা। সচিব এ বিষয়ে বলেছেন, আর বলতে চাই না।
নির্বাচনী প্রতীকের চূড়ান্ত তালিকা বুধবার জারি হয়েছে। বিকল্প প্রতীক চেয়ে আবেদনের জন্য ইসি সচিব জানালেও এনসিপি ফের শাপলা প্রতীক চেয়ে আবেদন করে।
এ বিষয়ে সিইসি বলেন, চিঠি নিয়ে কমিশনে বসে সিদ্ধান্ত নেবো। একা সিদ্ধান্ত নেবো না। আমাদের কমিশনের সভায় আলোচনার পর পরবর্তী কাযক্রম সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবো। কমিশন সভার আলোচনার পর কথা হবে।
এনসিপির প্রসঙ্গ টেনে তিনি জানান, যে কোনো দল চিঠি দিতে পারে। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া দল এনসিপি। চিঠি দেওয়ায় অসুবিধা নেই। দল তো দেবেই। রাজনীতিবিদরা দেশের স্বার্থে সব কিছু একামোডেট করেন। চিঠি বিবেচনা করবো, কি করা যায় দেখা যাক।
নাগরিক ঐক্য তাদের সংরক্ষিত প্রতীকের পরিবর্তে শাপলা চেয়েছে। এটা দেওয়া যাবে না বলে দিয়েছি। তারপর এনসিপি দেয়েছে। প্রথমটা নাগরিক ঐক্যের., প্রথমটা দিইনি। এনসিপি তো দ্বিতীয়বার আবার দিল। কমিশন সিদ্ধান্তের আগে তো বলা যাবে না। নাগরিক ঐক্যের বিষয়েও কমিশন সিদ্ধন্ত নিয়েছে। এবারও এনসিপির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
>> হুমকি মনে করি না, এনসিপি দেশপ্রেমিক
‘দলটিকে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ না দিলে তা কীভাবে আদায় করতে হয় জানা আছে’ মন্তব্য করেন এনসিপি নেতারা। এ প্রতীকের বাইরে অন্য কোনো প্রতীক নেবে না এনসিপি- এখন কি করবে ইসি এটা কি থ্রেট? একজন সাংবাদিক এমন প্রশ্ন করলে সিইসি বলেন, ‘রাজনীতিবিদরা অনেক কথা বলতে পারেন। আমরা তো জবাব দিতে পারবো না, শ্রোতা। আমাদের কাজ আইন মোতাবেক করবো। এটা হুমকি মনে করি না। তারা তো দেশদ্রোহী না, তারা দেশপ্রেমিক। দেশের জন্য, আমাদের জন্য হুমকি মনে করি না।’
>> ফেব্রুয়ারির ভোটের চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে
ফেব্রুয়ারির ভোট নিয়ে নানান ধরনের আলোচনার প্রসঙ্গের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার জন্যই চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। এজন্য যা যা করা দরকার সবই করছি। প্রধান উপদেষ্টাও নিউইয়র্কে যার সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। আমরা এ ঐতিহাসিক নির্বাচনের জন্য কাজ করছি।
এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা লাগবে ও ইসির আন্তরিক রয়েছে বলে জানান তিনি।
আমরা কারও কথায় চলছি না। আইন-কানুন ও সংবিধান অনুযায়ী, সরল সোজা পথে চলতে চাই। বাঁকা পথে বা কারও ফেভারের জন্য কাজ করছি না। রাজনৈতিক দল আমাদের মূল স্টেকহোল্ডার। তাদের সহযোগিতা ছাড়া সুন্দর নির্বাচন সম্ভব নয়। আশা করি কেউ ফাউল করবে না, সব ঠান্ডা হয়ে যাবে।
আগামী নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরিতে ইসি সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে বলে জানান সিইসি।
একজন সম্পাদকের কলামকে উদ্ধৃত করে এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সম্পাদক লিখেছেন-সব খেলোয়াড যদি ফাউল করার জন্য মাঠে নামে ম্যাচ পণ্ড করা ছাড়া উপায় নেই। সবাই ফাউল করার জন্য মাঠে নামলে তো মুশকিল। কেউ যেন ফাউল না করে সে বিষয়ে আমরা তৎপর। নির্বাচনে কেউ ফাউল করতে নামবে না, ভালো নিয়তে নামবেন আশা করি।’ রাজনৈতিক সমঝোতার আশাও করেন তিনি।
আমাকে কেউ বলেনি, ইলেকশনে ফাউল করার জন্য নামবেন। আশা করি, সবাই সহযোগিতা করবে। সরকার দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ঐকমত্য কমিশন তো সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিভিন্ন দলের চার-পাঁচজন নিউইয়র্কেও গেছেন, সেখানেও আলোচনা হবে আশা করি। রাজনীতিবিদদের ওপর আমার আস্থা রয়েছে।
ভোট সামনে রেখে গণ্ডগোলের চেষ্টা হলেও অতীতের মতো সব ঠান্ডা হয়ে যাবে বলে মনে করেন সিইসি।
এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, ১৯৯১ সালে অনেক গোলমাল হয়েছে। পরে সব ঠান্ডা হয়ে গেছে। ৯৬ এর ইলেকশনের আগেও গোলমাল হয়ে সব ঠান্ডা। ২০০৮ সালেও এ রকম গোলমাল হয়েছে। সব ঠান্ডা হয়ে যাবে, নানা মত থাকবে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে সবাই এক জায়গায় আসবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি জানান, ভোটে সেনা থাকবে। ইসিও সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করবে।
কোনো রাজনীতিবিদ ফাউল খেলার জন্য নির্বাচনের মাঠে নামবে বলেননি। তারা চাচ্ছেন সুন্দরভাবে খেলতে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাচ্ছেন। আমরা লেভেলে প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করবো। আমি খুব কনফিডেন্ট; কোনো ভয় পাওয়ার কারণ নেই।
>> জাপা নিয়ে কনফিউজড সিইসি
ইসির সংলাপে জাতীয় পার্টি আমন্ত্রণ পাবে কি না তা সময়ই বলবে-জানান সিইসি। জিএম কাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ইসিতে নিবন্ধিত। এরই মধ্যে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদারের একাংশ মূল জাপা দাবি করে ইসিতে চিঠি দিয়েছে।
জাপাকে ইসি সংলাপে ডাকবে কি না? জানতে চাইলে সিইসি বলেন, সময় আসুক দেখব। এখনো তো সংলাপ শুরু করেনি। ঐকমত্য কমিশন এখনো সংলাপ করছে। আমরা একটু পরে করবো। সিভিল সোসাইটিসহ অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করে শেষ দিকে দলের সঙ্গে বসবো। এখন (জাপা নিয়ে) রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে, দেখি কি অবস্থা।
জাপার ভাঙনের মধ্যে কোনটি আসল জাপা তা নিয়ে কনফিউজড সিইসি। জাতীয় পার্টি ৫টি পেয়েছি, আপনারা কয়টি পেয়েছেন। লাঙ্গলের দাবিদার তো একাধিক। জাপা বললে আমি কনফিউজড, হাফ ডজন আছে। এজন্য কনফিউজড। সময় এলে দেখবেন, ভাবতে দেন।
>> পিআর নয়, আরপিও অনুযায়ী ভোট, ফেব্রুয়ারির অপেক্ষায় সিইসি
সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির ভোটের দাবিতে সোচ্চার অনেক দল। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনী আইন ও সংবিধানের বাইরে যাবে না ইসি।
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ভোট আমাদের আরপিও অনুযায়ী হবে। পিআর তো আরপিও তে নেই। আরপিও বদলিয়ে অন্য একটা দিলে হয় তখন। আইন না বদলালে তো হয় না। আমাকে আরপিও মেনে চলতে হয়।
তিনি জানান, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনে আইন বদলাতে হবে। সংবিধান, আরপিও বদলাতে হবে। পিআর নিয়ে কথা বললে আবার আমার বিরুদ্ধে কথা হবে, কথা বলতে চাই না বলেও মন্তব্য করেন সিইসি।
দলগুলোর সমঝোতার আশা করে তিনি বলেন, আমি ফেব্রুয়ারির জন্য অপেক্ষা করছি। নির্বাচন আয়োজনের জন্য অপেক্ষা করছি। সংবিধান-আরপিওতে যা আছে সে অনুযায়ী হবে। ভোটের দিনের দুই মাস আগে তফসিল হবে। রোজার আগে নির্বাচন হবে।
ভোট পর্যবেক্ষণে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা যত আসে তাতে মানা নেই ইসির।
এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, বিদেশিদের নিয়ে আসব না, যত আসতে চায় আসুক। দেশি-বিদেশি যত আসতে চায় আসুক। লুকানো চাপানোর কিছু নেই, ভয়ের কিছু নেই।
আমার বার্তা/এমই