বিচারের মুখোমুখি হয়েও হাসিনা উসকানিমূলক মন্তব্য করছেন
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:১২ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক আইনের মান অনুযায়ী বিচার চলছে। বিচারের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও তিনি (শেখ হাসিনা) উসকানিমূলক এবং অস্থিতিশীল মন্তব্য অব্যাহত রেখেছেন।’’ ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ন্যায়বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়েছে।’’
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার স্টাব নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
সাক্ষাৎকালে দুই নেতা বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, জাতিসংঘ সংস্কার, রোহিঙ্গা সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আসিয়ানে বাংলাদেশের যোগদানের প্রচেষ্টা, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার এবং নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ-প্রাপ্তির প্রচেষ্টাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রফেসর ইউনূস গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তাদের অব্যাহত সমর্থনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘‘গত ১৪ মাসে আমাদের সরকারের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন অপ্রতিরোধ্য।’’
তিনি ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘‘দেশের ১২ কোটি ৬০ লাখ ভোটারকে শান্তিপূর্ণভাবে এবং উৎসবের পরিবেশে তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন।’’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আমাদের জনগণ গত ১৫ বছর ধরে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন থেকে বঞ্চিত। এখন তারা অধীর আগ্রহে ফেব্রুয়ারির অপেক্ষায় রয়েছে।’’
প্রফেসর ইউনূস প্রেসিডেন্ট স্টাবকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার চলছে।’’ তিনি উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদে সই করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা গভীর রাজনৈতিক সংস্কারের একটি কাঠামো
রাষ্ট্রপতি স্টাব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্রনীতির দিকনির্দেশনা সম্পর্কেও খোঁজখবর নেন। জবাবে প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে কাজ করছে এবং সক্রিয়ভাবে আসিয়ানের সদস্যপদ পাওয়ার চেষ্টা করছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা বাংলাদেশকে সার্ক ও আসিয়ানের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধন হিসেবে দেখছি। আসিয়ানের সঙ্গে সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনারশিপের জন্য আমাদের আবেদন চূড়ান্ত পূর্ণ সদস্যপদের দিকে একটি পদক্ষেপ।’’
ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বিশ্বব্যাপী কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্রসঙ্ঘের সংস্কারের জরুরি প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
প্রেসিডেন্ট স্টাব বলেন, ‘‘বিশ্ব ব্যবস্থা পাল্টে যাচ্ছে। আমাদের অবশ্যই জাতিসংঘকে শক্তিশালী করতে হবে।’’
একমত হয়ে প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘‘বড় ধরনের বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘ অনেকাংশে অকার্যকর হয়ে পড়েছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তা বাড়ছে এবং জাতিসংঘ মূলত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে অর্থবহভাবে প্রভাব ফেলার ক্ষমতা হারিয়েছে।’’
দুই নেতা দীর্ঘায়িত রোহিঙ্গা সংকট এবং বর্তমানে বাংলাদেশের আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক তহবিল বৃদ্ধির গুরুত্বের বিষয়টিও তুলে ধরেন।
তারা আঞ্চলিক যোগাযোগ বিশেষ করে স্থলবেষ্টিত নেপাল ও ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশের সুযোগ দিতে বাংলাদেশের কৌশলগত ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘‘এই উদ্যোগ এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উল্লেখযোগ্যভাবে ত্বরান্বিত করবে।’’
বৈঠকে জ্বালানি উপদেষ্টা ফৌজুল কবির খান ও এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ উপস্থিত ছিলেন।
আমার বার্তা/এমই