প্রবীণ ও কর্মাহত সাংবাদিকদের ভাতাসহ তিন দফা দাবি

প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৩, ১৮:৪৬ | অনলাইন সংস্করণ

  বিশেষ প্রতিনিধি

প্রবীণ ও কর্মাহত সাংবাদিকদের সম্মানজনক মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন প্রবীণ ও কর্মাহত সাংবাদিক কল্যাণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ। প্রবীণ ও কর্মাহতরা কোন অভিযোগ দিলে তা দ্রুত ৩ মাসের মধ্যে নিস্পত্তিসহ গণ-মাধ্যমকর্মী আইন-২০২২ এর অন্তর্ভুক্ত সাংবাদিকদের স্বার্থবিরোধী সকল ধারা বাতিল করারও দাবি জানান তারা।

গতকাল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রবীণ ও কর্মাহত সাংবাদিক কল্যাণ পরিষদ আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচী অনুষ্ঠানে প্রবীণ নেতৃবৃন্দরা এসব দাবির কথা তুলে ধরেন।  দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচী অনুষ্ঠানে পরিষদের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা এ কে এম করম আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অবস্থান কর্মসূচী অনুষ্ঠানে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিকদার আবদুস সালাম এর সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পরিষদের সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চিফ রিপোর্টার আবু সাঈদ, দৈনিক সকালের সময়ের সিনিয়র সাংবাদিক এম শাহজাহান সাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম ইকবাল, দপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কবি মহসিন হোসাইন, সি কে সরকার, দৈনিক বাংলাদেশের আলোর সিনিয়র সাংবাদিক আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, সাংবাদিকদের কোনো অবসর বা অবসর ভাতা নেই। ৬০ বছর বয়সেও অনেকে কর্মরত আছেন আবার অনেকে রোগাক্রান্ত, চলাচল করতে পারছেন না। এ বয়সে অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না। সারাজীবন সেবা বিলিয়ে দিলেও আজ তাদের জন্য কোনো সেবা নেই। তাই প্রবীণ ও কর্মাহত সাংবাদিকরা সরকারের কাছে সম্মানজনক মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতাসহ তিন দফার দাবি তুলে ধরেন।

বক্তারা আরো বলেন, বেঁচে থাকলে আপনিও একদিন প্রবীণ হবেন এবং একটি দুর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না’ চিরদিন মানুষ শিশু আর যুবক থাকে না। বেঁচে থাকলে তাকেও একদিন প্রবীণের খাতায় নাম লেখাতে হবে। যিনি প্রবীণ তিনি একদিকে রোগাক্রান্ত আরেক দিকে বার্ধক্যের ভারে ন্যূব্জ। অনেকের সন্তানরা দেখাশুনা করেন, কেউবা করে না। অনেকের সন্তান নাই। তিনি না পারছেন আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে, না পারছেন নিজের ঘরে থাকতে। দিন কাটছে মানবেতর, কারো কাছে বলতে পারছেন না বলে বক্তারা জানান। 

জাতীয় প্রেস ক্লাবে সারাজীবন কাটিয়েও আজ অর্থের অভাবে অনেক সাংবাদিক ক্লাবে আসতে পারছেন না। সারাজীবন লেখনির মাধ্যমে সেবা বিলিয়ে দিয়েছেন আজ তার জন্য সেবা নেই। চাকরিশেষে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পেনশন/অবসর ভাতা দিচ্ছে। বৃদ্ধ বয়সে আরামে আয়াশে তাদের জীবন কাটছে, কিন্তু সাংবাদিকদের? জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকরি শর্তাবলী) আইন ২০২২’-এ যে কটি ধারা সংযোজন করা হয়েছে তার কোনো ধারায়ই প্রবীণ ও কর্মাহত সাংবাদিকদের বিষয়টি উল্লেখ নেই। ‘গণমাধ্যমকর্মী আইন-২০২২’ এর ধারায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে ‘প্রবীণ ও কর্মাহত সাংবাদিক’দের সম্মানজনক মাসিক ভাতার বিষয়টি।

সমাজের বুদ্ধিজীবী, জ্ঞানী-গুণীজনরা যখন তাদের মতামত তুলে ধরেন তখন সাংবাদিকদের বলা হয়- “রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ, সমাজের দর্পণ, ইত্যাদি...। এই সাংবাদিকদের ৬০ বছর চাকরিসীমা পার হওয়ার আগেই খালি হাতে অফিস থেকে বের করে দিচ্ছেন, বৃদ্ধ বয়সে মামলা করেও টাকা পাচ্ছেন না, যখন অর্থের অভাবে, বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, তখন কেউ খোঁজও নিচ্ছেন না।

উল্লেখ্য, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় স্বাধীনতার স্বপক্ষের ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অবিচল প্রবীণ ও কর্মাহত (কর্মকালীন যারা পঙ্গুত্ববরণ করেছেন) সাংবাদিকদের নিয়ে গত ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি ‘প্রবীণ ও কর্মাহত সাংবাদিক কল্যাণ পরিষদ’ সাংবাদিকদের কল্যাণে কাজ করার জন্য গঠন করার পর ভাতার দাবিতে বিভিন্ন সময়ে ইতোমধ্যে মানববন্ধন, আলোচনা সভার আয়োজন এবং মহান স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ জন্মজয়ন্তীসহ জাতীয় দিবস উপলক্ষে ‘প্রবীণ বার্তা’ নামে স্মরণিকা প্রকাশ করে লেখনির মাধ্যমে ভাতার দাবিটি তুলে ধরা হয়। ‘প্রবীণ ও কর্মাহত সাংবাদিকদের সম্মানজনক মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতার দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি ইতিপূবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও পাঠানো হয়েছে। অতএব যাতে আমাদের ন্যায্য দাবিগুলো সরকার আমলে নিয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন করেন সে লক্ষ্যে আজ রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পুনরায় অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

এ কর্মসূচি থেকে স্পষ্ট বলা হয়েছে, যতোদিন পর্যন্ত মাসিক ভাতার দাবি বাস্তবায়ন না হবে ততদিন পর্যন্ত প্রবীণ সাংবাদিকরা অধিকার আদায়ে  সভা, সেমিনার, মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাব আমরা। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা সাংবাদিক বান্ধব। তিনি সাংবাদিকদের জন্য ‘সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট’ গঠন করেছেন। সম্মানজনক মাসিক প্রবীণ ও কর্মাহত সাংবাদিক ভাতার বিষয়টি জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকরি শর্তাবলী) আইন ২০২২’ এ যাতে উল্লেখ করা হয় এবং দ্রুত বাস্তবায়ন করে ‘প্রবীণ ও কর্মাহত সাংবাদিক’দের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব হয় সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সহযোগিতা কামনা করেছেন এসব প্রবীণ সাংবাদিকগণ।

এবি/ জিয়া