সাবেক আইনমন্ত্রীর ‘বান্ধবী’ তৌফিকার অবৈধ সম্পদের পাহাড়
দুদকের অনুসন্ধান
প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৫, ১০:২২ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

সিটিজেন ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান তৌফিকা আফতাব ওরফে তৌফিকা করিমের নামে ৫৬ কোটিরও বেশি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে ৪০ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদ এবং ১৮ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে। তৌফিকা করিম সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী হিসেবে পরিচিত। দুদকের অনুসন্ধান দল শিগগিরই তার বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে জানিয়েছেন সংস্থার একজন পরিচালক।
এ ছাড়া তৌফিকার স্বামী আফতাবুল ইসলামের বিরুদ্ধেও পৃথক অনুসন্ধান চলছে।
তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালীন মন্ত্রিসভায় আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠতার সুবাদে বিচারাঙ্গনে অঘোষিত প্রভাব বিস্তার করেছিলেন তৌফিকা করিম। উচ্চ আদালত থেকে শুরু করে নিম্ন আদালত পর্যন্ত তার প্রভাব বিস্তৃত ছিল। গুরুত্বপূর্ণ মামলায় প্রভাব খাটিয়ে পছন্দসই রায় ও জামিন আদায় করেন তিনি।
এর আগেই দুদক তৌফিকার ৩৮টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করে, যেখানে ৪৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকারও বেশি স্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা মূল্যের একটি বিলাসবহুল বাড়ি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও সিটিজেন ব্যাংকে ২৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা এবং সিটিজেন ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার শেয়ারের খোঁজও মিলেছে।
জানা গেছে, সিটিজেন ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় আনিসুল হক ৪০০ কোটি টাকা জামানত ও ২০০ কোটি টাকা চলতি মূলধন দেন। প্রথমে তার মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হলেও তার মৃত্যুর পর তৌফিকা করিমকে চেয়ারম্যান করা হয়। ব্যাংক ও বিচার বিভাগের নেপথ্যে তৌফিকাই ছিলেন আইনমন্ত্রীর চালিকাশক্তি। তৌফিকার সন্তানদের কানাডায় বাড়ি করে দেওয়ার পাশাপাশি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ৪০ শতাংশ শেয়ারও তার রয়েছে বলে জানা গেছে। তিনি ওই টিভি চ্যানেলের নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
গত বছরের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ১৯ সেপ্টেম্বর সিটিজেন ব্যাংকের পদ ছাড়েন তৌফিকা। এরপর তাকে টেলিভিশনের দায়িত্ব থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।
দুদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী, আইনমন্ত্রীর হয়ে তদবির নিয়ন্ত্রণ করতেন তার ব্যক্তিগত সহকারী অ্যাডভোকেট রাশেদুল কাওসার ভূঁইয়া জীবন। পরে জীবন কসবা উপজেলা চেয়ারম্যান হলে তদবিরের অর্থ লেনদেনের দায়িত্ব নেন তৌফিকা করিম। তিনি আনিসুল হকের এক ভাগ্নেকে সঙ্গে নিয়ে বহু চাঞ্চল্যকর মামলায় জামিন ও রায় ‘ব্যবস্থার’ গ্যারান্টি দিতেন। বিতর্কিত বিচারপতি নিয়োগ, সাব-রেজিস্ট্রার বদলি, জেলা জজ পদায়ন ইত্যাদি নিয়ে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি এসব প্রস্তাবে লেখা থাকত ‘প্রধানমন্ত্রীর ডিজায়ার’ বলেও দাবি করেছে একটি সূত্র।
দুদকের একজন কর্মকর্তা জানান, আনিসুল হক ও তৌফিকা করিম গত এক দশকে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন—এমন অভিযোগ রয়েছে। তবে যথাযথ প্রমাণ এখনও মেলেনি। তৌফিকার ছেলে কানাডায় অবস্থান করছেন এবং সেখানে বিপুল সম্পদ গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানা গেছে। তার স্বামী আফতাবুল ইসলাম এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বেনামে তৌফিকার বড় অঙ্কের বিনিয়োগ রয়েছে বলেও সন্দেহ করছে কমিশন।
দুদকের উপপরিচালক ও অনুসন্ধান দলের প্রধান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘তৌফিকা করিমের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শিগগিরই কমিশনে জমা দেওয়া হবে।’
এ ছাড়া তৌফিকা করিমের অর্থ পাচার সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে পৃথক তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আমার বার্তা/জেএইচ