স্বৈরাচারী শাসনের নিষ্ঠুর শিকার হয় শ্রমিক ও মেহনতি মানুষ

প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১৫:৫৭ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন ডেস্ক:

গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, ন্যায্য মজুরি ও রুটি-রুজি সুরক্ষার দাবিতে ট্রেড ইউনিয়নসমূহের সমাবেশে নেতারা বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের অনুপস্থিতির প্রধান শিকার হয় শ্রমিক ও মেহনতি মানুষ। 

সরকারের ন্যূনতম জবাবদিহিতা না থাকলে চরম অভাব ও শোষণে নিপতিত হয় নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। তারা যখন জীবন ও জীবিকার অধিকার রক্ষার দাবিতে রাস্তায় নামে তখন স্বৈরাচারী-কর্তৃত্ববাদী শাসকরা নিরস্ত্র মানুষের ওপরে গুলি চালাতে দ্বিধা করে না। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার তার ব্যতিক্রম নয়। তারা ন্যায্য মজুরির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপরে গুলি চালিয়েছে। ভোট ও ভাতের অধিকারের দাবিতে আন্দোলনরত মানুষকে নিষ্ঠুর নির্যাতনের মধ্য দিয়ে দমন করছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল জাতীয় প্রেসক্লা, কদমফুল ফোঁয়ারা ঘুরে মণি সিংহ সড়কে মুক্তিভবনে এসে শেষ হয়।

নেতৃবৃন্দ বলেন, ন্যায্য মজুরি ও রুটি-রুজি সুরক্ষার জন্যই দেশের মানুষের সামনে আজ ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা জরুরি কর্তব্য। সমাবেশ থেকে চলমান একতরফা নির্বাচনের তফসিল বাতিল ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানানো হয়।

গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের উপদেষ্টা আবদুল্লাহ ক্বাফী রতনের সভাপতিত্বে ও রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম নাদিমের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রাকসুর সাবেক ভিপি কৃষকনেতা রাগীব আহসান মুন্না, বিআইডব্লিউটিসি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান হাবিব লাবলু, গার্মেন্ট টিইউসির সহ-সভাপতি জলি তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীম, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহ-সভাপতি জামসেদ আনোয়ার তপন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনের আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা লিপি, বাংলাদেশ বিপ্লবী সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের দপ্তর সম্পাদক হযরত আলী, রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস, পাটকল শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ গোফরান, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম প্রমুখ।

সমাবেশে নেতারা বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের ন্যূনতম ভোটাধিকার হরণ করেছে। তারা তাদের পৃষ্ঠপোষক দেশি-বিদেশি মালিকশ্রেণির স্বার্থে অব্যাহতভাবে শ্রমিক অধিকার সংকুচিত করে চলেছে। সংবিধান প্রদত্ত শ্রমিকের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নানা কৌশলে ও আইনের মারপ্যাঁচে কেড়ে নেয়া হয়েছে। শ্রমিক ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত। ন্যায্য মজুরি ও শ্রমিক অধিকারের দাবিতে কথা বললে হামলা-মামলা-নির্যাতন এমনকি গুলি করে শ্রমিক হত্যা করা হচ্ছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, এমন অনাচার চিরস্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে মেনে নেয়া যায় না। তারা বলেন, আইয়ুব শাহী, এরশাদের মতো স্বৈরচারের পতন এ দেশের শ্রমিক-জনতা গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ঘটিয়েছিল। বর্তমান কর্তৃত্ববাদী শাসন ও স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধেও একটি গণঅভ্যুত্থান আসন্ন।

সমাবেশে নেতারা আরও বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার দেশের অর্থনীতিকে চরম বিপর্যয়ের প্রান্তে নিয়ে গেছে। জোর করে ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশের শিল্প, রপ্তানি, প্রবাসী মানবসম্পদ, ভবিষ্যত প্রজন্মের নিরাপত্তাকে চরম ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তারা বলেন, মেগা ঋণের জাল ও সীমাহীন লুটপাট, অর্থপাচারের করে অর্থনীতিকে ফোঁকলা করে ফেলার পর এখন সরকার একটি একতরফা নির্বাচনের মধ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশকে একঘরে অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

বিজিএমইএ সভাপতি গণমাধ্যমে বলেছেন ঘোষিত নিম্নতম মজুরির চেয়ে অধিক হারে বর্তমানে শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছে উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, মালিকপক্ষ স্বীকার করেছে মজুরি বৃদ্ধির নামে শ্রমিকদের সাথে একটি প্রহসন সংঘটিত হয়েছে। গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি বোর্ড কর্তৃক ঘোষিত চূড়ান্ত মজুরি কাঠামো গ্রহণযোগ্য নয়। শ্রমিকরা বর্তমান বাজারে বাঁচার মতো মজুরিও পায়নি।

আমার বার্তা/জেএইচ/এমই