মালয়েশিয়ার বৈচিত্র্যময় খাবার: স্বাদ ও রান্নার অনন‍্য রেসিপি

প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:১৬ | অনলাইন সংস্করণ

  রানা এস এম সোহেল:

মালয়েশিয়া শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই  বিখ্যাত নয় বরং দেশটি তার রকমারি ঐতিহ্যবাহী খাবার ও রান্নার বৈচিত্র্যের জন্যও বিশ্বজুড়ে পরিচিত। মালয়, চাইনিজ, ভারতীয় ও আদিবাসী সংস্কৃতির এক অসাধারণ সংমিশ্রণ এই দেশের খাবারকে করেছে একেবারে অনন্য।

মালয়েশিয়ার এই ঐতিহ্যবাহী খাবারের সাথে পরিচিত করিয়ে দিতে গতকাল বুধবার ( ১লা অক্টোবর ) মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লেডিস অ্যাসোসিয়েশন তথা PERWAKILAN Dhaka এবং ঢাকাস্থ মালয়েশিয়া হাইকমিশনের যৌথ আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ান খাবারের এক অসাধারণ শৈল্পিকতা প্রদর্শন করা হয়। এই অনুষ্ঠানের সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ঢাকাস্থ টিএএস গ্রুপ (TAS Group) এবং এয়ার এশিয়া। 

ঐতিহ্যবাহী খাবারের একজন বিশেষজ্ঞ এবং শেফ হিসেবে অধ্যাপক ডঃ শাহরিম করিম রান্নাকে একটি শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত করেছেন। তিনি বর্তমানে মালয়েশিয়ার বিখ্যাত “ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া” এর খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের খাদ্য পরিষেবা ব্যবস্থাপনা বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। 

মালয়েশিয়ার রন্ধনশৈলী সম্পর্কে ব‍্যাপক জ্ঞান থাকায় তিনি দেশটির সমৃদ্ধ রন্ধনপ্রণালীর স্বীকৃতি ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তা তুলে ধরতে এবং প্রসার বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন ।

তিনি বিশেষ তিন ধরনের খাবার নিজ হাতে রান্না করেন এবং রান্নার ফাঁকে ফাঁকে এর উপকরণ ও রান্নার কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দেন। সেই সাথে কোন খাবার মালয়েশিয়ার কোন অংশে বেশি পাওয়া যায় এবং কোথা থেকে এর উৎপত্তি হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি রান্নার ক্ষেত্রে ধৈর্য্যর উপর বিশেষ গুরুত্ব দেন । রান্না বিষয়ক আগ্রহের কারণ ও অনেক গুণ তিনি তাঁর মায়ের কাছ থেকে পেয়েছেন বলে জানান।

তিনি বলেন, “ "মালয়েশিয়ান খাবার আমাদের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরই প্রতিফলন, যা মূলত মালয়, চীনা, ভারতীয়, বাবা-নিয়োনিয়া এবং আদিবাসী ঐতিহ্যের দ্বারা গঠিত। আমারা আমাদের খাবারের বৈচিত্র্যকে খুব উপভোগ করি এবং একই সাথে একটি ভিন্ন ভিন্ন জাতের খাবারের সমষ্টিকে আমরা আমাদের নিজেদের মতো করে গ্রহণ করেছি।

“বিশ্বায়নের এই যুগে, সাংস্কৃতিক স্থায়িত্বের জন্য আমাদের রন্ধনসম্পর্কীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং প্রচার অপরিহার্য। টাটকা ভেষজ, সুগন্ধি মশলা এবং কালজয়ী রান্নার কৌশলের ব্যবহার মালয়েশিয়ান খাবারের আত্মাকে সংজ্ঞায়িত করে," শেফ করিম আরো যোগ করেন।

এই আয়োজনের মাধ্যমে ড. করিম মালয়েশিয়ান খাবার কীভাবে ধৈর্য্য ও পরিশ্রম করে প্রস্তুত করা হয় তা প্রদর্শনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেন, একই সাথে তিনি যে রন্ধন পদ্ধতি ব্যবহার করেন তার সাংস্কৃতিক তাৎপর্য ও ব্যাখ্যা করেছিলেন।

যেমন তিনি জানান যে, মালয়েশিয়ার দক্ষিণে, খাবারের উপর ইন্দোনেশিয়ান, আরব এবং ভারতীয়দের প্রভাব রয়েছে। মালয়েশিয়ার উত্তরে, পেনাং এর খাবারের উপর দক্ষিণ ভারতীয়দের  অভিবাসনের প্রভাব রয়েছে। ৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঔপনিবেশিক উপস্থিতির পর্তুগিজ প্রভাবও একটি চিহ্ন রেখে গেছে, বিশেষ করে অতুলনীয় সস এবং বেকড পণ্যের ব্যবহারে।

শেফ করিম তিনটি খাবার তৈরি করার পরিকল্পনা করেন যার সবগুলোর মূল উপাদানই ছিল মশলা ও নারকেলের দুধ সেই সঙ্গে ছিল ধৈর্য।তাঁর রান্না গুলি হল:

১. মশলাদার অ্যাঙ্কোভি সাম্বল সাথে নারকেল প্যানকেক

এটি মূলত গ্রামীণ পরিবারে দাদা-দাদীদের দ্বারা তৈরিকৃত একটি বিশেষ ধরনের খাবার। এই নারকেল প্যানকেকের সাথে আমাদের আলু পরোটার কিছুটা মিল পাওয়া যায় । এই প‍্যানকেক একটি নন-স্টিক প্যানে পাতলা করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, তেল দিয়ে সাবধানে ব্রাশ করা হয় এবং ততক্ষণ পর্যন্ত এটি ভাজা হয় যতক্ষণ না এটি মুচমুচে এবং সোনালী হয়ে যায়।

এই সহজ রেসিপিটিও শেফ করিমের শক্তি এবং ক্যারিশমার জন্য উপভোগ্য করে তোলে। প্যানকেকের নারকেলের দুধ দারুণ ভাবে মিশে গিয়ে এক অন্য রকম স্বাদ এনে দেয়, এর সঙ্গে ক্লাসিক সাম্বল সসের একটু ছোঁয়া এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।

২. আনারস-নারকেল গ্রেভি চিংড়ি কারি 

এটি খুবই সুস্বাদু একটি রেসিপি। এই খাবারটি বিশেষভাবে উত্তর মালয়েশিয়ায় বেশ জনপ্রিয়, এতে চাইনিজ এবং থাই উভয় রান্নার প্রভাব লক্ষণীয় । পেঁয়াজ, ব্লু জিন্জার ,ক‍্যান্ডেল নাট এবং বিভিন্ন ধরণের মশলার একটি পেস্ট মিশিয়ে হালকা আঁচে রান্না করা হয়, তারপর তাতে মিষ্টি আনারস যোগ করা হয়েছিল, আনারস মিষ্টি না হলে কিছুটা চিনি এড করা যেতে পারে। 

সবশেষে , হলুদ গাছের পাতা এবং রোদে শুকানো গার্সিনিয়ার ছোঁয়া এই ডিশে একটি অনন্য সুবাস তৈরি করে,এরপর চিংড়িগুলিকে এই পারফেক্ট নারকেল ক্রিমে ১০-১৫ মিনিট হালকা গরমে রান্না করা হয়।চিংড়িগুলি এই মিশ্রণটি ভালভাবে শোষণ করে এবং চারিদিকে এর সুঘ্রাণ ছড়িয়ে দেয়। 

৩. পার্লিস-স্টাইল ম‍্যাংগো স্টিকি রাইস 

এই খাবারটির মুল উপাদান হল স্টিকি রাইস বা আঠালো ভাত। তুলনামূলকভাবে সহজ এর রান্নার পদ্ধতি । কলাপাতার উপর ভাত ২৫ মিনিট ধরে ভাপিয়ে, নারকেলের দুধের সাথে মিশিয়ে আঠালো না হওয়া পর্যন্ত ভাপিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কলা পাতায় ছোট ছোট টুকরো করে কাটা আম, নারকেলের দুধ ৪/৫ মিনিট ধরে অল্প গরম করে ঘন করে এবং তাজা টসটসে ডালিমের বীজের সাথে পরিবেশন করা হয়। এতে কোন মিষ্টি কিছু এড না করে ও এর স্বাদ চমৎকার ও স্বাস্থ্যকর একটি ডেজার্ট হিসেবে বিবেচিত হয়।

বিশেষ এই আয়োজন এর মাধ্যমে বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার খাবারের রেসিপি জনপ্রিয় হবে বলে আশা করা যায়। সবশেষে বাংলাদেশস্হ মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার মোহাম্মাদ সুহাদা ওসমান এর সঙ্গে তাঁর সকল কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিশেষভাবে আমন্ত্রিত TAS Group এর চেয়ারম্যান এবং ম‍্যানেজিং ডিরেক্টর সুস্বাদু খাবার গ্রহণ করেন।


আমার বার্তা/এমই