এআইয়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপের ভিত্তিতে বিজ্ঞাপন দেখাবে মেটা
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:৪৫ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট ‘মেটা এআই’-এর সঙ্গে ব্যবহারকারীদের কথোপকথনের ভিত্তিতে আরও ব্যক্তিগতকৃত বিজ্ঞাপন দেখানোর পরিকল্পনা করছে ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটা। আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে এই পরিবর্তন কার্যকর হবে। এর ফলে ব্যবহারকারীরা চ্যাটবটে যেসব বিষয়ে কথা বলবেন, সে অনুযায়ী তাদের কাছে বিজ্ঞাপন পৌঁছানো আরও সহজ হবে মেটার জন্য।
মেটা ইতিমধ্যে তাদের প্ল্যাটফর্মগুলোতে ব্যবহারকারীদের পোস্ট, ক্লিক ও যোগাযোগের ভিত্তিতে বিজ্ঞাপন দেখায়। তবে চ্যাটবটের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার তথ্য জানার মাধ্যমে কোম্পানিটি জানতে পারবে ব্যবহারকারীরা কী ধরনের পণ্য খুঁজছেন, কোথায় ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন বা কোন সমস্যা সমাধানের জন্য কোন পণ্যের প্রয়োজন।
গতকাল বুধবার মেটা তাদের ব্লগ পোস্টে জানিয়েছে, ‘অন্যান্য ব্যক্তিগত পরিষেবার মতোই, আমরা আপনার কার্যকলাপের ভিত্তিতে বিজ্ঞাপন ও বিষয়বস্তু সাজিয়ে থাকি। এর ফলে আপনার আগ্রহ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আপনার অভিজ্ঞতাও উন্নত হয়। অনেকে আশা করেন তাদের মিথস্ক্রিয়া তাদের কাছে যা দেখাচ্ছে, তাকে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলবে। শিগগিরই এআইয়ের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়াও এমন একটি সংকেত হবে, যা আমরা মানুষের অভিজ্ঞতা উন্নত করতে ব্যবহার করব।’
বিজ্ঞাপন ছাড়াও মেটা এআই থেকে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করে প্ল্যাটফর্মগুলোতে ব্যবহারকারীরা কী ধরনের কনটেন্ট দেখবেন, তা-ও নির্ধারণ করা হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ব্যবহারকারী চ্যাটবটে হাইকিং নিয়ে কথা বলেন, তাহলে মেটা বুঝতে পারবে যে তিনি এ বিষয়ে আগ্রহী এবং তাকে হাইকিং সম্পর্কিত আরও কনটেন্ট দেখাবে।
তবে এতে মেটার ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। অর্থাৎ, কেউ যদি চ্যাটবটের সঙ্গে সম্পর্কের সমস্যা বা ব্যক্তিগত কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলেন (অনেকে এখন চ্যাটবটকে থেরাপিস্টের মতো ব্যবহার করেন), তাহলে যেন তার ভিত্তিতে ভুল বা ক্ষতিকারক কনটেন্ট দেখানো না হয়।
কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, মেটা এআইয়ের মাসিক ব্যবহারকারী সংখ্যা ১০০ কোটি। তবে তারা নিয়মিত চ্যাটবট ব্যবহার করেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ বা একক মেটা এআই অ্যাপের মাধ্যমে চ্যাটবটের সঙ্গে কথা বলা যায়।
বিজ্ঞাপন ব্যবসা থেকে মেটা ইতিমধ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করছে। গত প্রান্তিকে তাদের বিজ্ঞাপন রাজস্ব ছিল ৪ হাজার ৬ ৫০ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এই আয় ২১ শতাংশের বেশি বেড়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে মেটার শেয়ার প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে এবং অক্টোবরের ১ তারিখ পর্যন্ত এর বাজারমূল্য ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
ভবিষ্যতে মানুষ গুগল বা সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করার পরিবর্তে এআই চ্যাটবটের মাধ্যমেই অনলাইন কেনাকাটা করতে চাইবে বলে মনে করেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা। মেটার প্রতিদ্বন্দ্বী ওপেনএআইয়ের সম্প্রতি তাদের চ্যাটবট চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের সরাসরি নির্দিষ্ট জিনিস কেনার সুবিধা চালু করেছে। তবে এটি বর্তমানে বিজ্ঞাপনভিত্তিক ব্যবসা নয়।
মেটা ব্যবহারকারীদের তাদের ‘অ্যাড প্রিফারেন্স’ টুল ব্যবহারের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন টার্গেটিংয়ের জন্য বিষয় যুক্ত বা অপসারণ করার সুযোগ দেবে। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ফিডের কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের জন্যও একই ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
মেটা আরও জানিয়েছে, তারা ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি, যৌন অভিযোজন (Sexual orientation) রাজনৈতিক মতামত, স্বাস্থ্য, জাতিগত বা নৃতাত্ত্বিক উৎস, দার্শনিক বিশ্বাস বা ট্রেড ইউনিয়ন সদস্য সংক্রান্ত চ্যাটবটের সঙ্গে কথোপকথনের ভিত্তিতে ব্যক্তিগতকৃত বিজ্ঞাপন দেবে না।
এর আগে মেটা এআই অ্যাপ চালু হওয়ার পরে ব্যবহারকারীরা ভুলবশত ব্যক্তিগত চ্যাট (সম্পর্কের সমস্যা বা আর্থিক বিষয় নিয়ে) জনসমক্ষে শেয়ার করে ফেলেছেন। পরে মেটা একটি পপ-আপ যোগ করে, যা ব্যবহারকারীদের ‘ডিসকভার’ নামক ফিডে কোনো এআই কথোপকথন প্রকাশ করার আগে সতর্ক করে।
গত সপ্তাহে সেই ‘ডিসকভার’ ফিডকে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে ‘ভাইবস’ নামে একটি নতুন ফিড দিয়ে। - তথ্যসূত্র: সিএনএন
আমার বার্তা/এমই