চীনের সঙ্গে ‘বাণিজ্যিক দ্বন্দ্বে’ অর্থনৈতিক ধসের মুখে জাপান

প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:৫০ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

অর্থনৈতিক চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে জাপান। বিশ্লেষকরা বলছেন, তাইওয়ান ইস্যু নিয়ে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক দ্বন্দ্বে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ধসের মুখে পড়তে পারে দেশটি। পাশের দেশগুলোর সঙ্গে জাপানের সম্পর্কের অবনতির আশঙ্কাও করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। এদিকে তাইওয়ান ইস্যুতে উস্কানিমূলক বক্তব্যের জেরে রাজনৈতিক চাপ বাড়ছে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির ওপর।

চলতি মাসের শুরুতে এক বক্তব্য জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চীন, তাইওয়ানের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করলে জাপানের সামরিক বাহিনী তা প্রতিহত করতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর ফাটল ধরে চীন-জাপানের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বে।

শুরু হয় দুই দেশের বাণিজ্যিক দ্বন্দ। এতে ক্ষতির মুখে পড়তে শুরু করেছে বিশ্বের চতুর্থ অর্থনীতির দেশ জাপান। এরইমধ্যে চীনের বাজারে সামুদ্রিক পণ্যের প্রবেশ বন্ধ ঘোষণা করেছে বেইজিং। দেশটির বিভিন্ন শহরে বয়কট করা হয়েছে জাপানি শিল্পীদের কনসার্ট। সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে বেশকিছু ফ্লাইটও বাতিল করা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দুইদেশের মধ্যে এ উত্তেজনা অব্যাহত থাকলে আরও দুর্বল হয়ে পড়বে চীনা বাজারনির্ভর জাপানি অর্থব্যবস্থা। চীনের ইয়োকোহামা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপকের মতে, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কারণে সৃষ্ট বর্তমান বিরোধে জাপানের ব্যাপক অর্থনৈতিক দুর্বলতাকে সামনে নিয়ে আসবে।

চীনের ইয়োকোহামা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক লিউ কিয়াংবিন বলেন, ‘জাপান প্রযুক্তিগত পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে চীনা বাজারের উপর নির্ভরশীল। গেল বছর, জাপান ৭ শতাধিক পণ্য চীন থেকে আমদানি করেছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের দ্বিগুণেরও বেশি। চীন দক্ষতার সাথে অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে সক্ষম, কিন্তু জাপান তা পারবে না।’

এছাড়া বিশ্বব্যাপী বিরল খনিজ মজুদের ৩৭ শতাংশ চীনের নিয়ন্ত্রণে। সেখানেও চীনের ওপর নির্ভরশীল জাপান। দেশটির সৌর এবং ব্যাটারি খাতগুলোতে চাইনিজ ফটোভোলটাইক প্রযুক্তির ব্যবহার ৪০ শতাংশেরও বেশি। ক্ষতির মুখে পড়তে পারে দেশটির পর্যটন শিল্পও।

২০২৪ সালে জাপানে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের মধ্যে ৩০ শতাংশেরও বেশি ছিল চাইনিজ। নিরাপত্তার কারণে চীনা নাগরিকদের জাপান ভ্রমণ এড়াতে পরামর্শ দিয়েছে দেশটির সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে বেশকিছু টিকিট বাতিলের ঘটনাও ঘটেছে।

সানায়ে তাকাইচির উস্কানিমূলক বক্তব্যের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরাও। জাপানের সঙ্গে অন্যান্য দেশের আঞ্চলিক সম্পর্কের অবনতির আশঙ্কা করছেন তারা।

রিবিল্ডিং কোরিয়া পার্টির ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্য কিম জুন-হিউং বলেন, ‘এ ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য অনুচিত। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান বা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য চীনের একটি মৌলিক নীতি রয়েছে। তাই তাইওয়ানের ভাগ্যকে জাপানের ভাগ্য দাবি করা অগ্রহণযোগ্য।’

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিন ঝিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তাকাইচির মন্তব্য উদ্বেগজনক। চীন এবং এশিয়ার বিভিন্ন অংশে জাপানি নৃশংসতার ইতিহাসের প্রেক্ষিতে এ বক্তব্যে চীন বিরক্ত হবে। এটি এমন একটি ঘটনা যা উত্তেজনা বৃদ্ধি করবে এবং এ অঞ্চলে জাপানের প্রতি আমাদের আস্থাও কমে আসবে।’

এদিকে এরই মধ্যে অভ্যন্তরীণ চাপের মুখোমুখি হচ্ছেন তাকাইচি। জাপানের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক নেতারাও তার বক্তব্যের প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। দেশটির প্রধান বিরোধী দল চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের আহ্বানও জানিয়েছেন।

আমার বার্তা/এল/এমই