ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের আগে সৌদির বার্তা: ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা চাই
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:১৬ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

চলতি মাসে ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন সৌদির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)। সফরকালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। তবে সৌদি যুবরাজ যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেলেও ইসরায়েলের সঙ্গে সহসাই সম্পর্ক স্থাপন হচ্ছে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছে রিয়াদ। তারা বিশেষ বার্তায় জানিয়েছে, আগে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা চাই, তারপর ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক।
দীর্ঘদিনের বৈরিতার পর ইসরায়েল-সৌদি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হলে তা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে পারে। এতে অঞ্চলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবও আরও বাড়বে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
২০২০ সালের আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কো ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে। ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, আমরা আশা করছি শিগগিরই আরও দেশ, বিশেষ করে সৌদি আরব, এই চুক্তিতে যুক্ত হবে।
তবে সৌদি আরব নিজস্ব কূটনৈতিক চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিয়েছে, তাদের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার আগে একটি কার্যকর ও নির্দিষ্ট রোডম্যাপের ভিত্তিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
দুটি উপসাগরীয় সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, গত ১৮ নভেম্বর হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প-এমবিএস বৈঠকের আগে কূটনৈতিক কোনো বিভ্রান্তি এড়াতে এবং দুই দেশের অবস্থান সমন্বয় করতেই এমন বার্তা দিয়েছে রিয়াদ।
সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জনাথন প্যানিকফ বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্পষ্ট পথ ছাড়া এমবিএস এখনই ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনের সম্ভাবনা দেখছেন না।
তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে এমবিএস ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের আরও জোরালো সমর্থন চাইবেন।
ইসলামের জন্মভূমি এবং মক্কা-মদিনার অভিভাবক হিসেবে সৌদি আরবের জন্য ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া শুধু কূটনৈতিক পদক্ষেপ নয়, এটি তাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও ধর্মীয় মর্যাদার সঙ্গেও জড়িত।
তাছাড়া গাজায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ব্যাপক সামরিক অভিযানের কারণে আরব বিশ্বে ইসরায়েলবিরোধী জনমত এখনো প্রবল।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মনাল রাদওয়ান বলেছেন, ইসরায়েলের গাজা থেকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার, আন্তর্জাতিক সুরক্ষা বাহিনী মোতায়েন এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা—এই তিনটি পদক্ষেপ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য।
অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ঘোর বিরোধী। তাই ট্রাম্প যতই আশাবাদী হোন না কেন, রিয়াদ মনে করছে, এই অবস্থায় সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়।
ট্রাম্প-সালমান বৈঠকে প্রতিরক্ষা ইস্যু
সৌদি আরব ট্রাম্প-এমবিএস বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দু করতে চাইছে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও বিনিয়োগ চুক্তিকে।
বিশ্লেষকদের মতে, দুই দেশের মধ্যে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি উপসাগরীয় অঞ্চলে আরও শক্ত করবে।
তবে ওই চুক্তি কংগ্রেস অনুমোদিত পূর্ণাঙ্গ চুক্তি নয়, বরং কাতারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার মতোই একটি সীমিত সহযোগিতা চুক্তি হতে পারে।
এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা খাতে যৌথভাবে কাজ করবে। ভবিষ্যতে এটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তিতে রূপ নিতে পারে, যদি ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে অগ্রগতি হয়।
গালফ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান আবদুলআজিজ সাগর বলেন, গাজায় সংঘাতের পর থেকে আলোচনার প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে। সৌদি আরব এখন তার জাতীয় নিরাপত্তা চাহিদাকে আলাদা করে গুরুত্ব দিতে চাইছে। তবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের মূল শর্তই রয়ে গেছে। - সূত্র: রয়টার্স
আমার বার্তা/এমই
