নিউইয়র্কে ইসলামোফোবিয়ার কোনো স্থান নেই, প্রথম ভাষণে মামদানি
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৪:৩০ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

আমেরিকার নিউইয়র্কের ১০০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে তরুণ এবং প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন ডেমোক্র্যাট সমর্থিত প্রার্থী জোহরান মামদানি (৩৪)।
তিনি গুরুত্বপূর্ণ এই মার্কিন সিটির ১১১তম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলেন। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে পরাজিত করে ইতিহাস গড়েছেন মামদানি।
নিউইয়র্কবাসী তরুণ বামপন্থী জোহরান মামদানিকে তাদের পরবর্তী মেয়র নির্বাচিত করার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটরা দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের গভর্নর পদেও জয়লাভ করেছেন।
এর মাধ্য দিয়ে মার্কিন ভোটাররা ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি আগাম সতর্কীকরণ বার্তা পাঠিয়েছেন।
জয়ের পর তার প্রথম জনসভায় মামদানি বলেছেন, 'নিউইয়র্কে ইসলামোফোবিয়ার কোনও স্থান নেই'। নিউইয়র্কবাসী আমাকে "পরিবর্তনের জন্য ম্যান্ডেট" এবং "একটি নতুন ধরণের রাজনীতির জন্য ম্যান্ডেট" প্রদান করেছেন।
মামদানি বলেন, আমার বন্ধুরা, আমরা একটি রাজনৈতিক রাজবংশের পতন ঘটিয়েছি। আমি পরাজিত প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুওমোকে (৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছেন) ব্যক্তিগত ভাবে শুভকামনা জানাই। নিউইয়র্কের নতুন প্রজন্মকে ধন্যবাদ, আমরা তোমাদের জন্য লড়াই করব কারণ আমরা তোমাদেরই। নিউইয়র্ক শহর এই মুহূর্তে নিঃশ্বাস নিচ্ছে, আমরা এতদিন ধরে আমাদের নিঃশ্বাস আটকে রেখেছি।
নিউইয়র্ক অভিবাসীদের শহর হিসেবেই থাকবে। অভিবাসীদের দ্বারা নির্মিত, অভিবাসীদের দ্বারা পরিচালিত এবং আজ রাত থেকে একজন অভিবাসীর নেতৃত্বে।
আপনি একজন অভিবাসী হোন বা ট্রান্স জেন্ডার হোন- আমরা সব নগরবাসীকে সমানভাবেই ভালোবাসী। ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে ফেডারেল চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, জিনিসপত্রের দাম কমার অপেক্ষায় থাকা সিঙ্গেল মাদার অথবা অন্য কেউ যাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে- আপনার সংগ্রামও এখন থেকে আমাদের। আমার মা এবং বাবা ছাড়াও আপনাদের কাছে আপনাদের ছেলে হতে পেরে খুব গর্বিত।
মামদানি বলেন, আমি তরুণ এবং আমি একজন মুসলিম। আমি মুসলিম হওয়ার জন্য ক্ষমা চাইতে রাজি নই। নিউইয়র্ক শহরে আর আপনাকে ইসলামোফোবিয়ায় ভুগতে হবে না।
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর কথা উদ্ধৃত করে মামদানি বলেন, ইতিহাসে এমন মুহূর্ত খুব কমই আসে, যখন আমরা পুরাতন থেকে নতুনের দিকে পা রাখি, যখন একটি যুগ শেষ হয় এবং দীর্ঘকাল ধরে চাপা পড়ে থাকা যখন একটি জাতির আত্মা মুক্তি পায়।
রাজনৈতিক অন্ধকারের এই শহর এই মুহূর্তে হবে আলোকিতো। আমরা আবার আলো জ্বলতে অক্লান্ত পরিশ্রম করব। নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার একসাথে চলবে।
মামদানি বলেন, নিউইয়র্কে দশ লক্ষের বেশি মুসলিম এখন থেকে মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করবেন। অনেক মুসলিমকেই পরিচয় লুকিয়ে রাখতে হয়, ভয় ও সামাজিক চাপে থাকতে হয়।
‘প্রত্যেক মুসলিমের স্বপ্ন হলো, অন্য যেকোনো নিউ ইয়র্কবাসীর মতো স্বাভাবিকভাবে বাঁচা। কিন্তু আমাদের বলা হয় কম আশা করতে, ঘৃণা ও গোঁড়ামি সহ্য করতে। এখন আর তা হবে না।’
ইসলামোফোবিয়া নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলার কারণে জোহরান মামদানি ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সসহ একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তির সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
মেয়র নির্বাচনে মামদানির এই অবস্থান মুসলিম অধিকার ও পরিচয় নিয়ে নতুন আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
এর আগে ২৪ অক্টোবর ব্রঙ্কসের এক মসজিদের বাইরে সমাবেশে তিনি বলেন, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হামলার পর তাঁর খালা কীভাবে হিজাব পরে পাতাল রেলে যাতায়াত করতে ভয় পেতেন, অনিরাপদ বোধ করতেন।
আমার বার্তা/এমই
