মন্দা মোকাবিলায় সাহসী বৈশ্বিক নীতির আহ্বান আইএমএফ প্রধানের
প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪২ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

বৈশ্বিক বৈষম্য বাড়ছে। কমছে প্রবৃদ্ধি। একই সঙ্গে বাড়ছে ঋণের চাপ। এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্ব নেতাদের সাহসী ও সমন্বিত নীতি সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘জরুরি পদক্ষেপ না নিলে বৈশ্বিক অর্থনীতি কম প্রবৃদ্ধি ও উচ্চ ঋণে আটকে যাবে।’
জর্জিয়েভা বলেন, ‘গত এক বছরে বিশ্ব অর্থনীতি বড় ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। ডিজিটালাইজেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জনসংখ্যার ধারা ও বৈশ্বিক বাণিজ্য-নীতির রদবদল বিশ্ব অর্থনীতিকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক ধাক্কা সামলে নিলেও সামনের দিনগুলো তেমন আশাব্যঞ্জক নয়। আগামী পাঁচ বছরের জন্য বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ শতাংশে, যা যুদ্ধপরবর্তী দীর্ঘমেয়াদি গড় ৩ দশমিক ৭ শতাংশের তুলনায় অনেক নিচে।
অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দেশগুলোকে এখনই স্থিতিশীলতা রক্ষা, ঋণ টেকসই রাখা এবং প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। সময় বদলাচ্ছে, নীতিনির্ধারণ আরও জটিল হচ্ছে, তবে চ্যালেঞ্জের মধ্যেই সুযোগ লুকিয়ে আছে। এখনই সেই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।’
সদস্য দেশগুলোর ঋণের সুদ কমাতে চার্জ ও সারচার্জ নীতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা বছরে প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করবে। এতে যেমন সদস্য দেশগুলোর চাপ কমবে, তেমনি আইএমএফের আর্থিক সুরক্ষা আরও শক্ত হবে
দেশীয় সংস্কার ও বৈশ্বিক সহযোগিতার তাগিদ
আইএমএফ প্রধানের মতে, ‘প্রথমেই প্রতিটি দেশকে নিজেদের অর্থনীতি গোছাতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, স্থানীয় প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী করা এবং ভবিষ্যতের ধাক্কা মোকাবিলায় আর্থিক সুরক্ষা পুনর্গঠন জরুরি। পাশাপাশি আর্থিক স্থিতিশীলতা জোরদার করা ছাড়া স্থায়িত্ব আসবে না।’
তবে তিনি মনে করেন, ‘অনেক চ্যালেঞ্জ জাতীয় সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। তাই দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতামূলক নীতি গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।’
আইএমএফের পদক্ষেপ
জর্জিয়েভা বলেন, ‘আইএমএফ এরই মধ্যে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থানে রেখেছে। তাদের ব্যালান্স শিট দৃঢ় এবং সুরক্ষা তহবিলও লক্ষ্যমাত্রার বেশি। করোনার সময় যে ঋণসীমা বাড়ানো হয়েছিল, তা বজায় রাখা হয়েছে, যেন সংকটে থাকা দেশগুলো যথেষ্ট সহায়তা পেতে পারে।’
দারিদ্র্য বিমোচন ও প্রবৃদ্ধি তহবিল সংস্কারের মাধ্যমে দরিদ্র দেশগুলোকে সহায়তার সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে বলে জানান জর্জিয়েভা।
‘সদস্য দেশগুলোর ঋণের সুদ কমাতে চার্জ ও সারচার্জ নীতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা বছরে প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করবে। এতে যেমন সদস্য দেশগুলোর চাপ কমবে, তেমনি আইএমএফের আর্থিক সুরক্ষাও আরও শক্ত হবে।’ বলেন তিনি।
সমন্বিত ভবিষ্যতের দৃষ্টি
আইএমএফ প্রধান মনে করেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক নিরাপত্তার শর্ত তৈরিই তাদের মূল দায়িত্ব। বৈষম্য বেড়ে যাওয়া ও ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি নতুন চাপে থাকলেও সাহসী নীতি সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব।’
আএমএফ প্রধান আরও বলেন, ‘সময় বদলায়, কিন্তু আমাদের লক্ষ্য অপরিবর্তিত। সঠিক নীতি প্রয়োগ করতে পারলে আরও ভারসাম্যপূর্ণ, টেকসই ও সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়া সম্ভব।’