যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী চার্লি কার্ককে গুলি করে হত্যা
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১৫ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও তরুণ রক্ষণশীলদের প্রভাবশালী নেতা চার্লি কার্ককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। দেশটির উটাহর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেওয়ার সময় মঞ্চেই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এই ঘটনাটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও রক্ষণশীল রাজনৈতিক কর্মী চার্লি কার্ককে উটাহ অঙ্গরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয় অনুষ্ঠানে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাটিকে পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে কার্কের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন ট্রাম্প। ৩১ বছর বয়সী কার্ক ছিলেন রক্ষণশীল যুব সংগঠন টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ–এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “মহান এবং কিংবদন্তি চার্লি কার্ক আর নেই। যুক্তরাষ্ট্রের তরুণদের হৃদয় আর কেউ এত ভালো বুঝতে পারেনি। সবাই তাকে ভালোবাসত, বিশেষ করে আমিও। এখন তিনি আমাদের মাঝে নেই।”
ট্রাম্প ঘোষণা দেন, কার্কের স্মরণে রোববার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
উটাহ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উটাহ ভ্যালি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় এক গুলিতে নিহত হন কার্ক। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, বক্তৃতার সময় হঠাৎ গুলির শব্দ হয়। মুহূর্তেই কার্ক চেয়ার থেকে পড়ে যান এবং আতঙ্কিত শিক্ষার্থীরা দৌড়ে পালান।
উটাহ গভর্নর স্পেন্সার কক্স একে “রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড” আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটা আমাদের অঙ্গরাজ্যের জন্য অন্ধকার দিন, পুরো জাতির জন্যই এক শোকাবহ দিন”। তিনি জানান, কার্ক শুধু রাজনীতিবিদই ছিলেন না, ছিলেন দুই সন্তানের পিতা ও একজন স্বামী।
ডেমোক্র্যাটরাও এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও বারাক ওবামা এক যৌথ বার্তায় বলেন, “আমাদের দেশে এই ধরনের সহিংসতার কোনো জায়গা নেই। এটা এখনই বন্ধ করতে হবে।”
এছাড়া বাইডেন তার স্ত্রী জিলসহ কার্কের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম ঘটনাটিকে “ঘৃণ্য, জঘন্য ও নিন্দনীয়” বলে মন্তব্য করেছেন।
কার্ককে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার মুহূর্তে তিনি শ্রোতাদের এক প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। শ্রোতা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, গত ১০ বছরে কতজন ট্রান্সজেন্ডার আমেরিকান গণগুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে। কার্ক উত্তর দেন, “অনেক বেশি”। এরপরই তিনি আরেক প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
উটাহ ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক সেফটির কমিশনার বো ম্যাসন জানিয়েছেন, কালো পোশাক পরিহিত সন্দেহভাজন একজন ছাদ থেকে গুলি চালাতে পারে। নিরাপত্তা ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তবে এতে ছবির মান খুব একটা স্পষ্ট নয়।
এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল জানান, সন্দেহভাজন হিসেবে একজনকে আটক করা হলেও জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত অব্যাহত আছে এবং ধাপে ধাপে তথ্য প্রকাশ করা হবে।
মার্কিন গণমাধ্যমে কার্ককে তরুণ রক্ষণশীলদের মধ্যে ‘রকস্টার’ বলা হতো। ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচন প্রচারণায় সমর্থন গড়ে তুলতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। কলেজ ক্যাম্পাসে তার আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিপরীত মতের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক দেখতে ভিড় জমাতো হাজারো মানুষ।
ঘটনার সময় উপস্থিত সাবেক রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান জেসন চাফেটজ ফক্স নিউজকে বলেন, “আমি গুলির শব্দ শুনেছি এবং দেখেছি কার্ক হঠাৎ পেছনে পড়ে গেলেন। যদিও রক্ত দেখিনি, কিন্তু তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন নিশ্চিত।”
তিনি আরও জানান, অনুষ্ঠানে পুলিশি উপস্থিতি খুবই সীমিত ছিল।
আল জাজিরা বলছে, এই হত্যাকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতার ধারাবাহিকতার সর্বশেষ উদাহরণ। এর আগে গত বছর ট্রাম্পের ওপর হত্যাচেষ্টা, আর চলতি বছরের জুনে এক ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা ও তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছিল।
আমার বার্তা/জেএইচ