ট্রাম্পের নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে কমছে বিদেশি পর্যটক

প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:২৭ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ক্রমাগত কমছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতি, শুল্কযুদ্ধ ও ভিসা জটিলতার কারণে দেশটিতে ভ্রমণে আগ্রহ হারাচ্ছেন পর্যটকেরা।

এমন অবস্থায় ২০২৫ সালে দেশটিতে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও পর্যটন ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সরকারি প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি পর্যটকের আগমন গত বছরের তুলনায় ৩ শতাংশ কমেছে। জানুয়ারির শেষ দিকে ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে প্রায় প্রতি মাসেই এ ধরনের পতন দেখা যাচ্ছে। গত ছয় মাসের মধ্যে পাঁচ মাসেই যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি দর্শনার্থীর সংখ্যা কমেছে।

ওয়াশিংটন ডিসি ভ্রমণে আসা ব্রাজিলের নাগরিক লুইজ ফ্রানসিনে আল জাজিরাকে বলেন, “সবাই আতঙ্কিত, ভীত। অভিবাসন নিয়ে অতিরিক্ত রাজনীতি হচ্ছে।”

বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, ট্রাম্পের শুল্কনীতি, অভিবাসন দমন অভিযান এবং কানাডা ও গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণ প্রসঙ্গে তার বিতর্কিত মন্তব্য বিদেশি পর্যটকদের দূরে ঠেলে দিচ্ছে।

ক্যাটো ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ রায়ান বর্ন আল জাজিরাকে বলেন, পর্যটক হ্রাস ট্রাম্পের বক্তব্য ও নীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। তার ভাষায়, “পর্যটকের সংখ্যায় এই পতন প্রেসিডেন্টের বাণিজ্যযুদ্ধ এবং অভিবাসন আইনে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে এসেছে।”

ট্রাভেল গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্যুরিজম ইকোনমিক্স জানিয়েছে, ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক আগমন ৮.২ শতাংশ কমবে। যদিও এটি আগের ৯.৪ শতাংশ পতনের পূর্বাভাস থেকে সামান্য ভালো, তবে মহামারির আগের পর্যটকের সংখ্যার তুলনায় অনেক নিচে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, মে, জুন ও জুলাইয়ে যে ভ্রমণ ধস নেমেছে, তা সামনের মাসগুলোতেও অব্যাহত থাকতে পারে।

জুলাইয়ের হিসাবে কানাডা ও মেক্সিকোর পর্যটক গণনায় ধরা না পড়লেও কানাডিয়ান ভ্রমণকারীর সংখ্যা বিশেষভাবে কমেছে। ২০২৪ সালের তুলনায় এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে আসা কানাডিয়ান পর্যটকের সংখ্যা এক-চতুর্থাংশ কমেছে।

অপরদিকে, জুন ও জুলাইয়ে প্রায় দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো বেশি সংখ্যক মার্কিন নাগরিক গাড়ি চালিয়ে কানাডায় গেছেন, যা এর বিপরীতে কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারীর সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে বলে পরিসংখ্যান দিয়েছে কানাডার জাতীয় সংস্থা স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা।

মেক্সিকো ব্যতিক্রম হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে পর্যটন বাড়িয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের মে পর্যন্ত মধ্য আমেরিকা থেকে আগমন বেড়েছে ৩ শতাংশ এবং দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ০.৭ শতাংশ। তবে পশ্চিম ইউরোপ থেকে আগমন কমেছে ২.৩ শতাংশ।

শীর্ষ ১০টি বিদেশি পর্যটক প্রেরণকারী দেশের মধ্যে কেবল জাপান ও ইতালি থেকে ভ্রমণ বেড়েছে। ভারতের পর্যটক কমেছে ৫.৫ শতাংশ এবং চীনের প্রায় ১৪ শতাংশ। ট্রাম্পের কঠোর শুল্ক, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং চীনা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক মন্তব্য এই সংখ্যা কমার পেছনে ভূমিকা রেখেছে।

মূলত চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরার পর ট্রাম্প আগের মতো কঠোর নীতি আরও জোরদার করেছেন। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশকে টার্গেট করে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা পুনরুজ্জীবিত করা, ভিসা অনুমোদনের নিয়ম কঠোর করা এবং ব্যাপক অভিবাসন অভিযান চালানোও এর মধ্যে রয়েছে। পাশাপাশি বৈদেশিক পণ্যে শুল্ক চাপানোও বিদেশি নাগরিকদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রকে অনাকাঙ্ক্ষিত গন্তব্য করে তুলেছে।

এছাড়া চলতি বছরের অক্টোবরের ১ তারিখ থেকে “ভিসা ইন্টিগ্রিটি ফি” নামে নতুন ২৫০ ডলার ফি চালু হচ্ছে, যা মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, ভারত, ব্রাজিল ও চীনের মতো ভিসা ওয়েভার-বহির্ভূত দেশের নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য। এ অতিরিক্ত চার্জে ভিসার মোট খরচ দাঁড়াবে ৪৪২ ডলার, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ ভ্রমণ ফিগুলোর একটি বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন।

ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল জানিয়েছে, ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি পর্যটকের ব্যয় নেমে আসবে ১৬৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে, যা ২০২৪ সালে ছিল ১৮১ বিলিয়ন ডলার।


আমার বার্তা/জেএইচ