জেলেনস্কির পর এবার হোয়াইট হাউজে নাস্তানাবুদ হলেন দ. আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট

প্রকাশ : ২২ মে ২০২৫, ১৫:৫৪ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

রামাফোসাকে কথিত নিধনযজ্ঞের খবর দেখাচ্ছেন ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পর এবার হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের কাছে নাজেহাল হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা।

বুধবার (২১ মে) ওভাল অফিসে আয়োজিত বৈঠকে আমন্ত্রিত অতিথি রামাফোসার সরকারের বিরুদ্ধে শেতাঙ্গ গণহত্যা ও ভূমি দখলের অভিযোগ আনেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

ট্রাম্পের অভিযোগ, অনেক মানুষ (দক্ষিণ আফ্রিকার শেতাঙ্গ সম্প্রদায়) মনে করছেন, তারা নিপীড়নের শিকার। তারা যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় চাইছেন।

তিনি আরও দাবি করেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গদের জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে তারা হত্যার শিকার হচ্ছেন।

ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের পর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে কিছুটা টানাপড়েন চলছে। ওভাল অফিসের গদিতে বসার পর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট- দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য সহায়তা বন্ধ করেছেন, দেশটির সংখ্যালঘু শেতাঙ্গ সম্প্রদায় আফ্রিক্যানারদের আশ্রয় দানে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োজিত দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছেন এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা দায়েরের জন্য কড়া সমালোচনা করেছেন।

এমতাবস্থায়, দুদেশের সম্পর্ক মেরামত করার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে গিয়েছিলেন রামাফোসা। সঙ্গে ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার তিনজন জনপ্রিয় গলফ খেলোয়াড়।

বৈঠকের শুরুতেই রামাফোসা বলে দিয়েছিলেন, তিনি মূলত বাণিজ্য নিয়ে আলাপ করতে চান। তবে খুবই দক্ষতার সঙ্গে আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে রামাফোসাকে একগাদা অভিযোগের শরে বিদ্ধ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গদের প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ নিয়ে তিনি চিন্তিত। কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন এবং একটি ভিডিওকে নিজের দাবির স্বপক্ষে প্রমাণ হিসেবে হাজির করেন তিনি।

ভিডিওটি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের এক বিক্ষোভ থেকে নেওয়া, যা এক কৃষক দম্পতির হত্যাকাণ্ডের পর হয়েছিল। ভিডিওতে কবরের কয়েকটি দৃশ্য ব্যবহার করা হয়। পরে জানা যায়, ওই কবরগুলো প্রতীকী, বিক্ষোভের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়।

জেলেনস্কির মতো ট্রাম্পের সঙ্গে বাকযুদ্ধে জড়াতে চাননি রামাফোসা। তিনি বরং শান্তভাবে সব অভিযোগ শুনে ধীর গলায় বলেছেন, শেতাঙ্গ কৃষক গণহত্যার অভিযোগ যদি সত্য হতো, তবে এই তিন ভদ্রলোক (আমন্ত্রিত গলফ খেলোয়াড়) আমার সঙ্গে থাকতেন না।

তবে তার উত্তরে সন্তুষ্ট হননি ট্রাম্প। তিনি দাবি করেন, মার্কিন প্রশাসনের কাছে এরকম হাজারো খবর আছে। সবগুলোর যথাযথ জবাব দিতে হবে।

ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্নভাবে বৈশ্বিক নেতাদের হেনস্তা করেছেন ট্রাম্প। এর আগে, বিভিন্ন সংস্থার প্রধানকে হোয়াইট হাউজে ডেকে নিয়ে দেখা না করেই ফেরত পাঠিয়েছেন তিনি। আর জেলেনস্কির সঙ্গে তার পাড়ার মোড়ল ধরনের আচরণ তো বিশ্ববাসী সরাসরিই দেখেছে। এরপর থেকে কেউ ট্রাম্পের আমন্ত্রণে হোয়াইট হাউজে যাবেন কিনা, সেটা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা।

অন্তত এক দশক ধরে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের বিরুদ্ধে শেতাঙ্গ গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষত, দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক হোয়াইট হাউজে সম্পৃক্ত হওয়ার পর থেকে এই অভিযোগ আরও জোরালোভাবে উত্থাপিত হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মত, মূলত রামাফোসা সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ হিসেবে এসব অভিযোগ তোলা হয়।

দীর্ঘদিনের বর্ণবাদী ও বৈষম্যমূলক শাসনের পর ১৯৯৪ সালে নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটির দীর্ঘদিনের বৈষম্যমূলক সম্পত্তি বণ্টনে সমতা আনার লক্ষ্যেই নতুন ভূমি সংস্কার আইন করা হয়েছে বলে দাবি করে আসছে সরকার।

দক্ষিণ আফ্রিকায় খুন খারাবির হার বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে, হত্যার শিকার অধিকাংশ ব্যক্তিই কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ভুক্ত।


আমার বার্তা/এমই