অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরু করবে রাশিয়া-ইউক্রেন : ট্রাম্প
প্রকাশ : ২০ মে ২০২৫, ১১:০৬ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন “অবিলম্বে” যুদ্ধবিরতি ও শান্তিচুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দুই ঘণ্টার ফোনালাপের পর এক বিবৃতিতে তিনি এই ঘোষণা দেন।
মঙ্গলবার (২০ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ট্রাম্প বলেন, পুতিনের সঙ্গে আলোচনা “খুব ভালো” হয়েছে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার শর্তগুলো দুই দেশের মধ্যেই আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করতে হবে। তবে ট্রাম্পের আশাবাদী বক্তব্যের পরেও যুদ্ধবিরতি বা চূড়ান্ত শান্তিচুক্তি খুব কাছাকাছি—এমন কোনো ইঙ্গিত এখনো পাওয়া যাচ্ছে না।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, তিনি ইউক্রেনের সঙ্গে একটি সম্ভাব্য শান্তি সমঝোতা নিয়ে আলোচনায় প্রস্তুত। অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একে “একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়” বলে উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রকে আলোচনায় সক্রিয় থাকার আহ্বান জানান।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইতোমধ্যে জেলেনস্কিকেও এই আলোচনা শুরু হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন। দ্বিতীয় ফোনালাপে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিশন প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনসহ ফ্রান্স, জার্মানি, ফিনল্যান্ড এবং ইতালির নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, “যুদ্ধ শেষ করার জন্য আলোচনার শর্তগুলো ঠিক করবে দুই পক্ষ। কারণ, কেবল তারাই জানে আলোচনার প্রকৃত বিবরণ।”
অন্যদিকে জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেন, এই আলোচনা যেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় প্রতিনিধি নিয়েই হয়। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যদি নিজেকে সরিয়ে নেয়, তবে একমাত্র লাভবান হবেন পুতিন।”
প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, তারা একটি শান্তি-সমঝোতার খসড়া প্রস্তুত করতে রাজি, যাতে “মীমাংসার নীতিমালা ও একটি সময়সীমা” নির্ধারণ থাকবে। এতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের যুদ্ধবিরতির কথাও উল্লেখ থাকবে, যদি দুই পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছায়।
পুতিনের উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট যুদ্ধবিরতির সময়সীমা এখনো ঠিক হয়নি। তবে ট্রাম্প দ্রুত কোনো চুক্তি চাচ্ছেন।
ট্রাম্পের সঙ্গে আলাপের পর জেলেনস্কি আবারও বলেন, তারা “পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি” চান। আর রাশিয়া যদি রাজি না হয়, তাহলে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি আগেই সতর্ক করে বলেছিলেন, ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে যেন কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয়।
তার ভাষায়, “এটা আমাদের নীতিগত বিষয়”। তিনি বলেন, পুতিনের প্রস্তাবিত ‘মেমোরেন্ডাম’ সম্পর্কে ইউক্রেন এখনো বিস্তারিত কিছু জানে না। আমরা কোনো কাগজপত্র হাতে পেলে, তখন নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করব।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট ভন ডার লিয়েন বলেন, “ট্রাম্পের শান্তিচেষ্টা প্রশংসনীয়। যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় সক্রিয় থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি জানান, পোপ লিওর প্রস্তাবিত মধ্যস্থতা ও আলোচনা আয়োজনের স্থান হিসেবে ভ্যাটিকানের প্রস্তাবকে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য নেতারা ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন।
মূলত এর আগে পুতিন তুরস্কে সরাসরি বৈঠকের জন্য জেলেনস্কির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এরপর ভ্যাটিকানকে আলোচনার ভেন্যু হিসেবে প্রস্তাব দেন পোপ।
রাশিয়া অবশ্য আগে একাধিকবার অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে। ৮-১১ মে পর্যন্ত একবার এবং ইস্টার উপলক্ষ্যে ৩০ ঘণ্টার জন্য আরেকবার। কিন্তু কিয়েভ বলেছে, পুতিনের ওপর বিশ্বাস রাখা যায় না এবং একটি নিরবচ্ছিন্ন ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।
তবে উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতি চলাকালীন একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের শত শত অভিযোগ তুলেছিল।
আমার বার্তা/জেএই