ভারতীয় চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে তলব করে কড়া প্রতিক্রিয়া পাকিস্তানের
প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৫, ১৫:০১ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলা ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা যুদ্ধের রূপ ধারণ করতে চলেছে ইতোমধ্যে। দুই সপ্তাহ ধরে চলা হুমকি-ধমকির পর এবার বাস্তবিকই পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরের কয়েকটি স্থানে বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে দিয়েছে ভারত। মঙ্গলবার (৬ মে) গভীর রাতে আকস্মিক এ হামলার জেরে ভারতের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স গীতিকা শ্রীবাস্তবকে জরুরি তলব করেছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর এ নিয়ে একটি বিবৃতিও প্রকাশ করেছে তারা, যেখানে কড়া ভাষায় ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বুধবার (৭ মে) পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান, আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে ভারতের অপ্রত্যাশিত আক্রমণের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানাতে দূতকে ডাকা হয়েছে। তাকে জানানো হয়েছে, ভারতের এই নির্লজ্জ আগ্রাসন পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলেছে, এই আক্রমণ জাতিসংঘের সনদ, আন্তর্জাতিক আইন এবং রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠিত নীতিমালার লঙ্ঘন। ভারত এই শত্রুভাবাপন্ন আচরণের বৈধতা দিতে যে ভিত্তিহীন যুক্তি উপস্থাপন করেছে, পাকিস্তান তা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। ভারতীয় পক্ষকে সতর্ক করা হয়েছে; এই ধরনের বেপরোয়া আচরণ আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। পরোক্ষভাবে পাকিস্তান এ হামলায় জড়িত, এমন অভিযোগ তুলে বুধবার দেশটির সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় দেশটি। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। স্থগিত করে দেওয়া হয় ভারতের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্যও।
এরপর থেকে দুদেশের পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকিতে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করে পরিস্থিতি, রীতিমতো যুদ্ধের রূপ ধারণ করেছে যা এখন। বুধবার (৭ মে) ভোররাতে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি শহরে একযোগে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। ভারতীয় সামরিক সূত্র জানিয়েছে, দেশটির তিন বাহিনী- স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনী সমন্বিতভাবে এ অপারেশন চালিয়েছে। পাকিস্তানে এই অপারেশনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’।
হামলার পর সামাজিক মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে বিশ্ববাসীর উদ্দেশে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। পোস্টে তিনি বলেছেন, বিশ্বকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা দেখাতে হবে। অন্যদিকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য ও বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ সত্ত্বেও পাকিস্তান তাদের ভূখণ্ড থেকে পরিচালিত সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলোর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পাকিস্তান ইতোমধ্যে বিশ্বের কাছে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে একটি পরিচিতি তৈরি করেছে। পেহেলগামে হামলা পর তদন্তে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা উঠে এসেছে। কারণ এই গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে পাকিস্তান যোগাযোগ রক্ষা করেছিল।
এদিকে ভারতের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, মূলত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মোহাম্মদ এবং হিজবুল্লাহ মুজাহিদীন গোষ্ঠীর অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তারা, যেখানে অন্তত ৭০ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।
আমার বার্তা/জেএইচ