শিশুশ্রমে আরও ১২ লাখ শিশু, চারজনে এক শিশুর রক্তে সীসা

এমআইসিএস জরিপে ভয়াবহ চিত্র

প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:৪০ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

দেশজুড়ে শিশুশ্রম বেড়ে নতুন করে আরও ১২ লাখ শিশু ঝুঁকিতে পড়েছে। একইসঙ্গে ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী চার শিশুর মধ্যে প্রায় একজনের রক্তে পাওয়া গেছে অতিরিক্ত সীসা, যা সরাসরি মস্তিষ্কের বিকাশে আঘাত হানে। ইউনিসেফ ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর যৌথ জরিপ এমআইসিএস ২০২৫–এর প্রাথমিক ফলাফল বলছে, দেশের শিশুস্বাস্থ্য, সুরক্ষা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে বড় ধরনের সতর্কসংকেত জ্বলে উঠেছে।

রোববার (১৬ নভেম্বর) রাজধানীর একটি অডিটোরিয়ামে জরিপের ফল প্রকাশ করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ও ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স। ৬৩ হাজার পরিবারের ওপর করা এই জরিপে পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্যানিটেশন থেকে শুরু করে শিশুশ্রম ও সহিংসতা— সব ক্ষেত্রেই এক অসম বাস্তবতা উঠে এসেছে।

জরিপে দেখা গেছে, ১২–৫৯ মাস বয়সী শিশুদের ৩৮ শতাংশের রক্তে সীসার মাত্রা নিরাপদ সীমার ওপরে। ঢাকায় এই হার সবচেয়ে বেশি ৬৫ শতাংশ। সচ্ছল পরিবারেও সমস্যা তীব্র; দূষণে আক্রান্ত শিশুদের প্রায় অর্ধেকই তুলনামূলক স্বচ্ছল পরিবারের। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের মধ্যেও ৮ শতাংশের রক্তে সীসার অতিরিক্ত উপস্থিতি ধরা পড়েছে।

এ প্রসঙ্গে রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, শিশুমৃত্যু কমা কিংবা বাল্যবিবাহের হার কমার মতো সাফল্য থাকলেও সীসা–দূষণ ও শিশুশ্রম ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সম্ভাবনাকে গুরুতরভাবে হুমকির মুখে ফেলছে। প্রতিটি শিশুর বেঁচে থাকা, শেখা ও বেড়ে ওঠার অধিকার নিশ্চিত না হলে প্রকৃত অগ্রগতি আসবে না।

>> অপুষ্টির হার আবার ঊর্ধ্বমুখী

২০১৯ সালের তুলনায় কম ওজনের শিশু বেড়ে ১২.৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মায়েদের অ্যানিমিয়ার হার ৫২ শতাংশের ওপরে। কিশোরী জন্মহারও বাড়ছে। জরিপ বলছে, মাতৃ–শিশু পুষ্টিতে নতুনভাবে বিনিয়োগ না করলে অবস্থার অবনতি হতে পারে।

জরিপে আরও দেখা গেছে, ৫–১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে শিশুশ্রমের হার বেড়ে ৯.২ শতাংশ হয়েছে, যার মানে আরও ১২ লাখ শিশু শ্রমে ঢুকে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ৮৬ শতাংশ শিশু কোনো না কোনো ধরনের সহিংস আচরণের শিকার হয়েছে।

>> পরিচয় সুরক্ষা নিয়ে বড় ঘাটতি

পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মাত্র ৫৯ শতাংশের নিবন্ধন আছে, আর জন্ম সনদ হাতে আছে মাত্র ৪৭ শতাংশের। ফলে অসংখ্য শিশু এখনো আইনি পরিচয় ও সরকারি সেবার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

জরিপের তথ্য বলছে, নবজাতক মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ২২, যা মোট শিশুমৃত্যুর দুই–তৃতীয়াংশ। দেশে সিজারিয়ান সেকশনের হার বেড়ে ৭৫ শতাংশে পৌঁছেছে। মাত্র ৪৬ শতাংশ নারী গর্ভধারণের প্রথম চার মাসে স্বাস্থ্যসেবা নেন, এটা মাতৃস্বাস্থ্যের বড় ঘাটতি হিসেবেই দেখছে ইউনিসেফ।

>> পানি ও স্যানিটেশন : অগ্রগতি থমকে গেছে

উন্নত স্যানিটেশন সুবিধা ব্যবহার বাড়লেও নিরাপদ পানি ব্যবহারের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯.৩ শতাংশে। পানির উৎসের প্রায় অর্ধেক এবং পরিবারের ৮০ শতাংশ নমুনায় ই. কোলাই দূষণ পাওয়া গেছে। জলবায়ু–সম্পর্কিত দুর্যোগে গত এক বছরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক পানির উৎস।

শিক্ষার মান প্রসঙ্গে জরিপে দেখা গেছে, প্রাথমিকে ভর্তির হার উচ্চ হলেও মাধ্যমিকে উঠতেই উপস্থিতি কমে যায়। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেও অনেক শিশু মৌলিক দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। ইউনিসেফ বলছে, এখনই নীতি নির্ধারণে লক্ষ্যভিত্তিক বিনিয়োগ জরুরি।


আমার বার্তা/এমই