রোববার শুরু টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন, এ টিকা নিরাপদ
প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:১৬ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন আগামী রোববার (১২ অক্টোবর) থেকে শুরু হচ্ছে। এক মাসব্যাপী এ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ৯ মাস থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত প্রায় ৫ কোটি শিশু-কিশোরকে এই টিকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৫’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ সহকারী এ কথা জানান। কার্যকর ও নিরাপদ হওয়ায় নির্দ্বিধায় সবাইকে টিকা নেওয়া আহ্বান জানান বিশেষ সহকারী।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৪৬ বছর ধরে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) চলছে। বিভিন্ন সংক্রামক রোগজনিত মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সারাদেশে টিকাদান কর্মসূচি সফলভাবে চলছে। টিকাদান কর্মসূচির ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশ একটি ভালো উদাহরণ হিসেবে সব সময় পরিগণিত হয়। টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশ সর্বশেষ সংযোজন করতে যাচ্ছে টাইফয়েডের বিরুদ্ধে একটি টিকা (টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন)। টাইফয়েডের বিরুদ্ধে বেশ কিছু টিকা আছে। এই টিকা সবচেয়ে বেশি কার্যকর ও নিরাপদ।
আগামী ১২ অক্টোবর থেকে সারাদেশে প্রায় ৫ কোটি শিশু-কিশোরের মধ্যে এই টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা হচ্ছে। আগামী একমাস ধরে এই টিকাদান কর্মসূচি চলবে।
এই টিকা ৯ মাস বয়স থেকে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত সব শিশু-কিশোরকে দেওয়া হবে জানিয়ে বিশেষ সহকারী বলেন, নবম শ্রেণি পর্যন্ত যারা থাকবে তাদের এই টিকা দেওয়া হবে। বিনামূল্যে এই টিকা দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যাচাই করা (প্রি-কোয়ালিফাইড) টিকা। বাংলাদেশ সরকার কখনোই নিরাপত্তার বিষয় নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সাধারণত কর্মসূচিতে কোনো ভ্যাকসিন অন্তর্ভুক্ত করে না। অতএব আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে এ টিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এটার মান সম্পর্কিত বিষয় নিশ্চিত করা হয়েছে। এরপর এটা আমাদের জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
>> যে কারণে এ ক্যাম্পেইন
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, চার বছর আগের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের যে শিশু মৃত্যু তার দুই-তৃতীয়াংশ টাইফয়েডের কারণে হয়েছে। আমরা আশা করি যদি টাইফয়েড প্রতিরোধ করা যায়, এটা শুধু শিশু মৃত্যু রোধই করবে না সামগ্রিকভাবে সব জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিশাল পরিমাণ টাইফয়েডজনিত রোগের যে বোঝা সেটি কমাবে।
তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে টাইফয়েড রোগের চিকিৎসায় সাধারণত অনেকগুলো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়; যেগুলো পর্যায়ক্রমে তার কার্যকারিতা হারাচ্ছে। এই টিকার মাধ্যমে যদি টাইফয়েড রোগীর সংখ্যা কমে, ফলে এর প্রতিরোধে জীবাণুর উদ্ভব অনেক বেশি ধীর হবে। অ্যান্টিবায়োটিকগুলো তাদের কার্যকারিতা সংরক্ষণ করতে পারবে। অন্যান্য রোগেও ব্যবহারের উপযোগিতা থাকবে তখন।
সায়েদুর রহমান বলেন, এই টিকা ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে টাইফয়েড মুক্ত করা, টাইফয়েড রোগের বোঝা কমানো এবং অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কমানো, সব মিলিয়ে মানুষের উৎপাদন সক্ষমতা সু-স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এ টিকা মাইল ফলক হবে।
এরই মধ্যে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ এই টিকা নিতে অনলাইনে নিবন্ধন করেছে। ম্যানুয়ালিও ১৫ শতাংশ মানুষ নিবন্ধন করেছে। আমরা আহ্বান জানাই বাকিরাও যাতে এভাবে রেজিস্ট্রেশনটা সেরে নেন।
>> জন্ম সনদ ছাড়াও নিবন্ধন করা যাবে
এই টিকা নিতে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক নয় বলেও জানান বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, এটা এড়িয়েও ম্যানুয়ালি রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব।
টাইফয়েডের টিকা নিতে এরই মধ্যে ১ কোটি ৬৮ লাখ অনলাইনে নিবন্ধন করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ম্যানুয়ালি মিলিয়ে অর্ধেকের কাছাকাছি নিবন্ধন হয়েছে। স্কুল খুললে আরও দ্রুত নিবন্ধন হবে।
প্রথমে স্থায়ী ও অস্থায়ী টিকা কেন্দ্রগুলোতে টিকা দেওয়া হবে। পরবর্তীতে ঘরে ঘরে গিয়ে টিকা দেওয়া হবে বলেও জানান সায়েদুর রহমান। তিনি আরও বলেন, এই টিকাদান প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত কোনো ব্যক্তি সার্ভিস চার্জ বা অন্য কোনো নামে কোনো টাকা আদায় করতে পারবে না।
>> পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় রয়েছে প্রস্তুতি
সায়েদুর রহমান বলেন, সারা বিশ্বব্যাপী এই টিকা বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছাড়াই শিশুরা গ্রহণ করছে। পাকিস্তান, নেপাল ও বিভিন্ন দেশে এই টিকা দেওয়া হচ্ছে। টিসিভি টিকা দেওয়ার পর সামান্য প্রতিক্রিয়া, যেমন- টিকা দেওয়ার স্থানে চামড়া লাল হওয়া, ফুলে যাওয়া, সামান্য ব্যথা, অল্প জ্বর, মাথা ব্যথা, ক্লান্তি ভাব, এবং মাংসপেশিতে ব্যথা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে; যেগুলি এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।
তিনি বলেন, টিকাদান পরবর্তী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একটি কিট সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও যদি কোনো ঘটনা ঘটে সেজন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এ সংক্রান্ত কমিটিতে যারা আছেন তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আমরা আশঙ্কা করি না, কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির উপ-পরিচালক মো. শাহরিয়ার সাজ্জাদ জানান, টাইফয়েডের এ টিকা ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি, কিন্তু কারিগরি সহযোগিতা করেছে ইংল্যান্ডের গ্লাক্সো স্মিথক্লাইন। সরকারের যে রুটিন টিকাদান কর্মসূচি, এর ৩০ শতাংশ টিকা সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে আসে। এখন পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে আরও ১০৯টি দেশে সরবরাহ করা হয়।
>> সরকারের কোনো খরচ নেই
এ টিকাদান কর্মসূচি খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে ইপিআই উপ-পরিচালক বলেন, এ টিকাদান কর্মসূচিতে সরকারের কোনো খরচ হচ্ছে না। টিকা ও প্রচারণাসহ সব পুরো খরচ দিচ্ছে ‘গ্যাভি, দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স’।
তিনি বলেন, এবার সবাইকে দেওয়ার জন্য টিকা আমাদের কাছে মজুত আছে। ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বা নবম শ্রেণি পর্যন্ত সংখ্যা নির্ধারণ করে এই পরিমাণ টিকার মজুত আমাদের কাছে আছে।
স্বাস্থ্য সহকারীদের আন্দোলনের বিষয় সায়েদুর রহমান বলেন, আমরা মনে করি না তারা এতটা ইনসেন্সিবল হবেন। টিকাদান কর্মসূচিকে ঝুঁকিগ্রস্ত করে, ৫ কোটি শিশুকে টাইফয়েড রোগের মুখে ফেলে তারা দাবি আদায় করবেন। এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটবে বলে আমরা মনে করি না। তাদের সঙ্গে যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে সেটা আমরা বিশ্বাস করতে চাই।
পথ শিশুরা যাতে এই টিকাদান কর্মসূচি থেকে বাদ না যায় এজন্য এনজিও ব্যুরোতে মিটিং চলছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
বিশেষ সহকারী আরও বলেন, ভ্যাকসিনটা আবিষ্কারের পর ৬ বছর পার হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায়নি যে, একবার দেওয়ার পর কতদিন পর আবার এই টিকা দিতে হবে, দিলে কত বছরের জন্য প্রটেকশন থাকবে। এখন পর্যন্ত যেটুকু তথ্য-প্রমাণ আছে সেই অনুযায়ী একবার দেওয়ার পর তিন থেকে সাত বছরের মতো একটা সময়কাল প্রোটেক্টেড থাকে বলে ধারণা করি। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আরও তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে বুঝতে পারবো যে চার বা পাঁচ বছর পর এটি আবার দিতে হবে কি না।
আমার বার্তা/এমই