বার্থিং জটিলতায় সাগরে ভাসছে জাহাজ

প্রকাশ : ১১ মে ২০২৩, ১৪:৫২ | অনলাইন সংস্করণ

  অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

  প্রিন্ট ভার্সন

সংগৃহীত

বাংলাদেশি জাহাজকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান জেটিতে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিদেশি জাহাজগুলোকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ৩ থেকে ৪ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তৈরি পোশাক রফতানিকারকরা। উদ্বেগ জানিয়ে নৌ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে জাহাজ মালিকদের আন্তর্জতিক সংগঠন ওয়ার্ল্ড শিপিং কাউন্সিল ও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।  

গত চার দিন ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান জেটিতে প্রবেশের অনুমতি না পাওয়ায় বন্দরের বহির্নোঙরে অলস দাঁড়িয়ে আছে ওয়াই এম হারমনী নামের কন্টেইনারবাহী জাহাজ। শুধু এই জাহাজই নয়, ইয়াং মিং লাইন নামে আরেকটি শিপিং প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ, সম্প্রতি ক্যাপ ফ্রুটিস ও এমএসসি জুয়ানিতা নামে আরও দুটি জাহাজকে তিন দিন ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছে।  

বাংলাদেশি পতাকাবাহী কিংবা ইউরোপ রুটে চলাচলকারী জাহাজ সরাসরি বন্দরে বার্থিং নেয়ার সুযোগ পেলেও সিঙ্গাপুর-শ্রীলংকার কলম্বো কিংবা মালেয়শিয়ার পেনাং বন্দরকে ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট হিসেবে ব্যবহারকারী জাহাজগুলোকে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। 

মূলত বাংলাদেশ ফ্ল্যাগ ভ্যাসেল প্রোটেকশন অ্যান্ড ইন্টারেস্ট অ্যাক্ট অনুসারে ৮টি বাংলাদেশি পতাকাবাহী ও ৬টি ইউরোপগামী জাহাজের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে গিয়ে অন্যান্য বিশ্বখ্যাত শিপিং প্রতিষ্ঠান ক্ষতির মুখে পড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে ওয়ার্ল্ড শিপিং কাউন্সিল। 
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ফ্ল্যাগ ভ্যাসেল হিসেবে বন্দর ব্যবহারকারীরা বন্দরে সুবিধা পাচ্ছে। আর যারা ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট হিসেবে বন্দর ব্যবহার করে তাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে।   

এদিকে বিশ্ব আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে সমুদ্রগামী বাংলাদেশের ৯৫টি জাহাজের অনুমতি থাকলেও এর মধ্যে মাত্র ৮টি জাহাজ রয়েছে কন্টেইনারবাহী। আর বাকি ৮৭টি বাল্ক জাহাজ হিসেবে চাল, গম, চিনি ও সিমেন্ট ক্লিংকারসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি করে। 

তবে বাংলাদেশি পতাকাবাহী ৮টি জাহাজ মাত্র ৯ শতাংশ পণ্য পরিবহনে সক্ষম হওয়ায় বাকি ৯১ শতাংশ পণ্য পরিবহন করছে বিদেশি মালিকানাধীন প্রায় ১০০টি জাহাজ। এ অবস্থায় আইন মানতে গিয়ে ব্যবাসায়িক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে উল্লেখ করে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীকে একই ধরনের চিঠি দিয়েছে গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। 

বিজিএমইএর সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, প্রতি সপ্তাহেই বন্দরে কার্গো আসে। তবে মাত্র ৮টি জাহাজ চলাচল করায় বিশাল গ্যাপ তৈরি হচ্ছে। এতে সঠিক সময়ে পণ্য পেতে বিলম্ব হচ্ছে। 
অন্যদিকে বন্দরে বাড়তি অবস্থানের জন্য জাহাজ মালিকদের প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা গুনতে হয়। আর বার্থিং জটিলতা নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা থেকে চিঠি পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে সমস্যা সমধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক। 

তিনি বলেন, শিপিং এজেন্টরা জনিয়েছে, তাদের কয়েকটি জাহাজ ২ থেকে ৩ দিন ধরে অপেক্ষা করছে। এ সমস্যা সমাধানে নিয়মিত নজরদারি করা হচ্ছে।  
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর বছরে চার হাজারের বেশি পণ্যবাহী জাহাজ হ্যান্ডলিং করে। যার ৯০ শতাংশই ওয়ার্ল্ড শিপিং কাউন্সিলের অন্তর্ভুক্ত জাহাজ পরিচালনকারী প্রতিষ্ঠান।

এবি/ওজি