জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত

প্রকাশ : ১০ মে ২০২৩, ১২:০৪ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন ডেস্ক

সারাদেশে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বইছে। তবে রাজশাহী, খুলনা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও নেত্রকোনা জেলায় প্রচণ্ড তাপমাত্রায় গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। বিশেষ করে শহরগুলোতে গরমের তীব্রতা আরো বেশি। তাছাড়া শ্রমজীবী মানুষের জন্য এই গরম আরো কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। তার ওপর বিদ্যুতের লোডশেডিং জনজীবনকে করে তুলেছে আরো দুর্বিসহ। 

গরমের এই অবস্থাতেই গ্রামাঞ্চলে দৈনিক প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানা যায়, জ্বালানি সংকটের কারণে বন্ধ পড়ে আছে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিশেষ করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো কয়লার অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। ডলার সংকটের কারণে দ্রুত এর কোনো সুরাহা হবে বলেও মনে করছেন না সংশ্লিষ্টরা। 

এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, আগামী দিনগুলোতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট আরও তীব্র হতে পারে।

মাঝখানে কয়েক দিন বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকায় লোডশেডিংয়ের তীব্রতা কমে এসেছিল।

সম্প্রতি দেশের তাপমাত্রা কয়েকদিনের মধ্যে বৃদ্ধি পাওয়ায় আবার ফিরে এসেছে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা। আরইবির এক কর্মকর্তা জানান, গড়ে প্রতিদিন এক হাজার মেগাওয়াট বেশি লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

জানা যায়, পিডিবির পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে কয়লাভিত্তিক মেগা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালিয়ে সামাল দেবে লোডশেডিং। কিন্তু সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও গ্যাসচালিত বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায়।

ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নির্মিত ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন শুরু থেকেই অনিয়মিত। গত বছরের ডিসেম্বরে উৎপাদনে আসা ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট এ পর্যন্ত কয়েক দফায় বন্ধ হয়েছে। কখনো এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকে কারিগরি কারণে, কখনো বন্ধ হয় কয়লার সংকটে। সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ ছিল যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে। চার দিন পর পুনরায় উৎপাদনে এলেও ২৪ এপ্রিল থেকে বন্ধ আছে পর্যাপ্ত কয়লার সংস্থান করতে না পারায়। 

জ্বালানি সাশ্রয় করতে গিয়ে সরকার এরই মধ্যে কমিয়ে দিয়েছে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন।

অপরদিকে গ্যাস সংকটের কারণেও পিডিবি বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। পিডিবির গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চাহিদার বিপরীতে অর্ধেকও গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছে না। ফলে গ্যাসভিত্তিক উৎপাদনও অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। 

অপরদিকে, কয়লার অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে আছে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। এটি দেশের সবচেয়ে বড় তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে কয়লা আমদানি করতে না পারায় কেন্দ্রটির উৎপাদন ঝুঁকির মুখে। ডলার সংকটের কারণে পাওনা পরিশোধ করতে না পারায় গত জানুয়ারিতে কয়লা দেওয়া বন্ধ করে দেয় সরবরাহকারী।

সূত্রে জানা যায়, ‘গ্যাস-সংকটের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকার পাশাপাশি কয়লার অভাবে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের ওপর চাপ বেড়েছে। এ জন্য লোডশেডিংও বেড়েছে আগের তুলনায়।’

কবে নাগাদ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হবে তা এখনি বলা যাচ্ছে না, তাবে আশার কথা হলো খুব শিগগিরই চট্টগ্রাম বন্দরে কয়লা নিয়ে জাহাজ ভিড়বে এমন প্রত্যাশা করা হচ্ছে। 

এবি/ জিয়া