চট্টগ্রাম বন্দরের বাড়তি ট্যারিফ অসন্তোষ নিরসনে বৈঠক

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৩৮ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

চট্টগ্রাম বন্দরের বাড়তি ট্যারিফ নিয়ে ব্যবসায়ীদের অসন্তোষ নিরসনে অবশেষে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন নৌ পরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। 

আগামী ১০ নভেম্বর বন্দর ব্যবহারকারী সব পক্ষের সঙ্গে উপদেষ্টার বৈঠকের আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে আলোচনা ছাড়াই ভাড়া বাড়ানো ২১টি বেসরকারি অফডক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনকে (বিকডা) তলব করেছে মন্ত্রণালয়।

বিদেশি কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠানের সুপারিশ অনুযায়ী, নতুন ট্যারিফ কাঠামো বাস্তবায়নের এক মাসের কম সময়ের মধ্যে পর্যালোচনা সভায় বসতে হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরকে। দীর্ঘ ৩৯ বছর পর চট্টগ্রাম বন্দর ট্যারিফ বাড়ালেও তা ছিল নিয়মের চেয়ে অনেক বেশি। এমনকি অভিযোগ রয়েছে আলোচনা ছাড়াই বন্দরের একক সিদ্ধান্তে বেড়েছে এই ট্যারিফ।
 
বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সেলিম রহমান বলেন, কোনো স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলা হয়নি। একক সিদ্ধান্তে বাড়ানো হয়েছে ট্যারিফ। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে ধাপে ধাপে ট্যারিফ নির্ধারণ করা যেত।
 
মূলত প্রতি কেজি আমদানি পণ্যে মাত্র ১২ পয়সা করে ট্যারিফ বেড়েছে বলে বন্দর দাবি করলেও প্রকৃত অর্থে বেড়েছে ৪১ থেকে ৬০ শতাংশ। ট্যারিফের অংশ হিসেবে গেট ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় ধর্মঘট ডেকে এক প্রকার বন্দর অচল করে দিয়েছিল পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা। এনিয়ে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে কঠোর আপত্তি ওঠায় ক্ষোভ প্রশমনে আগামী ১০ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর ভবনে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন নৌ পরিবহন উপদেষ্টা।
 
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, চট্টগ্রামের বন্দরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ১০ নভেম্বর বিকেলে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলবেন নৌ উপদেষ্টা। সেখানে বন্দরের চার্জ, ট্যারিফসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
 
এদিকে, মার্কিন ডলারের সঙ্গে টাকার দরের তারতম্যের অভিযোগ এনে তিন বছরের ব্যবধানে ৩০ থেকে ৬২ শতাংশ ট্যারিফ বাড়িয়েছে ২১টি বেসরকারি অফডক। অথচ ট্যারিফ বাড়ানো ক্ষেত্রে নির্ধারিত কমিটির সঙ্গে আলোচনার বিধান থাকলেও এখানে তা মানা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
 
এ অবস্থায় ৯ নভেম্বর নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় বিকডাকে অভিযোগের জবাব দিতে বলা হয়েছে। বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব বলেন, ব্যয় বাড়ানোটা অনুমোদনহীন বলে মনে করছেন স্টেকহোল্ডাররা। তাই তারা নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে আগামী ৯ নভেম্বরের সভায় আলোচনা হবে।
 
দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে বছরে অন্তত আড়াই লাখ কোটি টাকার পণ্য ওঠানামা হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। তা থেকে লাভ হচ্ছে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। আবার এসব পণ্য ওঠানামার মাধ্যমে ২১টি অফডকের লাভ হাজার কোটি টাকা। তবে এরপরেও বন্দর এবং অফডকের বাড়তি ট্যারিফ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে ব্যবসায়ী ও বন্দর ব্যবহারকারীদের।
 
বন্দর এবং অফডকগুলোর এই বাড়তি ট্যারিফ দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যকে যেমন বিপর্যয়ের মুখে ফেলছে, তেমনি অনিশ্চিত করে তুলছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা। এ অবস্থায় নৌ উপদেষ্টার সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈঠকে বসার পাশাপাশি বিকডাকে মন্ত্রণালয়ের তলব করায় অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।
 
এমএসসি শিপিংয়ের হেড অব অপারেশন আজমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, একটি এলসিএল কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে খালাস করতে আগে ২৯২ ডলার বন্দরকে চার্জ দিতে হতো। এখন সেটা বেড়ে ১৩৩৫ ডলারে মতো হয়ে গেছে, ভ্যাটসহ যা ১৫৮৪ ডলার। যা অনেক বেশি হয়ে গেছে।
 
উল্লেখ্য, এক মাস পিছিয়ে গত ১৫ অক্টোবর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর এবং পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে ২১টি বেসরকারি অফডক নতুন ট্যারিফ সিস্টেম কার্যকর করেছে।

আমার বার্তা/এল/এমই