চামড়া শিল্পে শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের দাবি

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:৩৫ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

বিশ্ব শোভন কর্ম দিবস (৭ অক্টোবর) ২০২৫ উপলক্ষে “বিল্ডিং এ সাসটেইনেবল লেদার সেক্টর ইন বাংলাদেশ” প্রকল্পের আওতায় ওশি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আজ রাজধানীর তেজগাঁওয়ে চ্যানেল আইয়ের মুস্তাফা মনোয়ার স্টুডিওতে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তারা বাংলাদেশের চামড়া শিল্পে শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়ন ও সলিডার সুইসের কারিগরি সহযোগিতায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে চামড়া শিল্পের বর্তমান শ্রমিক অধিকার পরিস্থিতি, নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন, চাকরির নিশ্চয়তা, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিধানের যথাযথ প্রয়োগ, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার তথ্য সংরক্ষণ, রাসায়নিক ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সামাজিক সুরক্ষা এবং আইএলও কনভেনশন ১৫৫, ১৮৭ ও ১৯০ দ্রুত অনুসমর্থনের বিষয়ে বিভিন্ন দাবি ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৃতিবন্ধু মুকিত মজুমদার বাবু। প্রেস ব্রিফিংয়ের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ওশি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপার্সন ড. এস. এম. মোর্শেদ। এতে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)-এর পরিচালক নাজমা ইয়াসমিন, সবুজের অভিযান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মাহমুদা বেগম এবং ওশি ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও প্রকল্প প্রধান মো. আলম হোসেন। অনুষ্ঠানে সহ-বাস্তবায়নকারী সংস্থা প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন, বিলস, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, সবুজের অভিযান ফাউন্ডেশন ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এ বছরের বিশ্ব শোভন কর্ম দিবসের প্রতিপাদ্য “গণতন্ত্রই শোভন কাজের ব্যবস্থা করবে”— উদ্ধৃত করে বক্তারা বলেন, সামাজিক ন্যায়বিচার, শ্রমিকের মর্যাদা ও ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে হলে চামড়া শিল্পে শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা জোরদার করা অপরিহার্য। তারা জানান, বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে আইএলও কনভেনশন ১৫৫, ১৮৭ ও ১৯০ অনুসমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

বক্তারা বলেন, হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তরিত চামড়া শিল্প নগরীতে এখনো উপযুক্ত অবকাঠামো গড়ে না ওঠায় শিল্পের পরিবেশ ও শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) পুরো সক্ষমতায় কার্যকর না হওয়ায় পানি ও পরিবেশ দূষণ বাড়ছে, যা শিল্পের টেকসই উন্নয়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার ২০২৪ সালের নভেম্বরে ট্যানারি শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৮ হাজার ১ টাকা ঘোষণা করলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। পাশাপাশি শ্রম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী চামড়া শিল্পের জন্য পৃথক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি) গঠন প্রক্রিয়াও অনিশ্চয়তায় রয়েছে।

চামড়া শিল্পকে ইপিজেডের আওতায় আনার বিষয়ে মালিক-শ্রমিকসহ অংশীজনদের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি অবিলম্বে বাস্তবায়ন, শ্রম মন্ত্রণালয় ঘোষিত পৃথক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ দ্রুত গঠনসহ চামড়া শিল্পে শোভন ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাত দফা সুপারিশ পেশ করা হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, চামড়া শিল্প বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত, যেখানে প্রায় ১০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মরত। এই শিল্পের সম্ভাবনা অনেক, তবে এলডব্লিউজি (Leather Working Group) সনদ না থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা কমছে প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত।

অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন আয়োজক সংস্থার প্রতিনিধিরা। প্রেস ব্রিফিংটি প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবুর সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হয়। সভাপতির বক্তব্যে মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, “শোভন কর্মপরিবেশ শুধু শ্রমিকের অধিকার নয়, এটি টেকসই শিল্পোন্নয়নের মূল শর্ত। সরকারের পাশাপাশি মালিক ও শ্রমিক সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের চামড়া শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে এখনই কমপ্লায়েন্স ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।”


আমার বার্তা/এমই