অক্টোবর মাসেই মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পের কাজ শুরু

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:০৭ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

 

সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা অর্থায়ন নিশ্চিত হওয়ায় অক্টোবর মাসেই কক্সবাজারের মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের জেটি, টার্মিনাল শেড এবং কনটেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে। এর মধ্যে জাপানি উন্নয়ন সংস্থা জাইকা সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে, বাকি এক হাজার কোটি টাকা জোগান দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আরও দশ হাজার কোটি টাকার সিভিল ওয়ার্ক এবং যন্ত্রপাতি কেনার কাজও দ্রুত শুরু হবে।

অন্তত ৪ বছর আগে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছিল ১৪ মিটার গভীরতা ও ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ নৌ চ্যানেল। তবে নানা জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে আটকে ছিল মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ। অবশেষে সেই জট খুলতে শুরু করেছে। আগামী অক্টোবরের মধ্যে জাহাজ ভেড়ার জেটি, টার্মিনাল শেড এবং কনটেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ কাজ শুরু করার অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে পেন্টা ওশান এবং টোয়া কর্পোরেশন নামে দুটি জাপানি প্রতিষ্ঠান।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘মাতারবাড়ি টার্মিনাল চালু হলে সেখানে ১৩ থেকে ১৪ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারবে। এখন চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোচ্চ ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ আসে, যেগুলোতে দুই থেকে আড়াই হাজার কনটেইনার বহন করা যায়। কিন্তু মাতারবাড়ি চালু হলে ৭ থেকে ৮ হাজার কনটেইনারবাহী বড় জাহাজ আসতে পারবে। যা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে।’
 
১৭ হাজার কোটি টাকার মাতারবাড়ি প্রকল্পের প্রথম ধাপে সিভিল ওয়ার্কে খরচ হবে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যন্ত্রপাতি কেনার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯০০ কোটি টাকা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যয় হবে ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানি প্রতিষ্ঠান জাইকা ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দেবে, আর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বহন করবে বাকি ১ হাজার কোটি টাকা।
 
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরে ৪৬০ মিটার দীর্ঘ একটি ডেডিকেটেড কনটেইনার জেটি এবং ৩০০ মিটার দীর্ঘ একটি মাল্টি পারপাস জেটি নির্মাণ করা হবে। সেখানে অন্তত ১০ হাজার কনটেইনার ধারণক্ষমতার একটি টার্মিনালও থাকবে। বন্দরের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৩০ সালে ১১ লাখ এবং ২০৪১ সালে ২৬ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা।
 
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘লজিস্টিক সাপ্লাই আরও কার্যকর করতে হলে বন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা বাড়াতে হবে। এজন্য কার্গোর মূল উৎস বা কোর তৈরি করতে হবে, যেখান থেকে সরবরাহ আসবে। আর এ লক্ষ্যে মাতারবাড়িতে শিল্প এলাকা বা মেরিটাইম ম্যানুফ্যাকচারিং হাব গড়ে তুলতে হবে।’
 
বন্দর হিসেবে আনুষ্ঠানিক কাজ শুরুর আগেই মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লাবোঝাই জাহাজ ভিড়তে শুরু করেছে। এতে করে শুধু পণ্য পরিবহন নয়, পুরো এলাকাতেই পরিকল্পিতভাবে শিল্পায়নের সুযোগ তৈরি হয়েছে। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের সাবেক প্রকল্প পরিচালক জাফর আলম বলেন, ‘মাতারবাড়ি হবে এই অঞ্চলের ডিপসি পোর্ট, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এ কারণেই মাতারবাড়িতে বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
 
গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চীন ও ভারত এ ধরনের গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে আগ্রহ দেখালেও ভূ-রাজনৈতিক জটিলতা এড়াতে শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব দেয়া হয় জাপানকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করবে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর।

আমার বার্তা/এল/এমই