গরিবের পাঙাশ-তেলাপিয়া-ব্রয়লারে আগুন, শুক্রবার এলেই বাড়ে দাম

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:১০ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

সবজির বাজারে স্বস্তি ফিরতে শুরু করলেও মাছ ও মাংসের বাজারে দাম এখনো চড়া। সপ্তাহ ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে ব্রয়লারসহ সব ধরনের মুরগির দামই বেড়েছে। বেড়েছে গরীবের ইলিশ খ্যাত পাঙাশ-তেলাপিয়া মাছের দামও। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরবরাহ কমানোর অজুহাত দেখিয়ে প্রতি শুক্রবার বিক্রেতারা মাছ-মাংসের দাম বাড়াচ্ছেন।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর রামপুরা-বনশ্রী এলাকার বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাজার করতে আসা ক্রেতারা বলছেন, সংসারে অর্থের যোগান না বাড়লেও সব দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সংসার চালানো এখন দায়। বাজারে গেলে মনে হয় সব পণ্য হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। মাছ-মাংস যেন বিলাসী খাবার হয়ে গেছে।

একমাসে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বাড়ার পর ব্রয়লার মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি দরে। সোনালি মুরগিও ২৬০ টাকা থেকে বেড়ে ২৮০ টাকায় উঠেছে। দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে নতুন বাজারের বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, বাজারে চাহিদা বেড়েছে, সরবরাহ তুলনামূলক কম। দুর্গাপূজা সামনে, তাই দাম আরও বাড়তে পারে।

তবে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি দোকানেই পর্যাপ্ত মুরগি রয়েছে। ফলে ক্রেতাদের অনেকে দাম বাড়ানোর যুক্তি মানতে নারাজ। ক্রেতা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, প্রতি সপ্তাহে যদি দাম এভাবে বাড়তে থাকে, তাহলে তো মুরগিও খাবারের তালিকা থেকে বাদ যাবে। গরুর মাংস কিনতে পারি না, ভালো মাছ কিনতে পারি না, এখন যদি মুরগিও না পাই তাহলে চলবে কীভাবে?

>> গরু-খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত

গরুর মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে খাসির মাংসে চড়া দাম দেখা গিয়েছে। প্রকারভেদে কেজিপ্রতি ১,০০০ থেকে ১,২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, খাসির জোগান কম থাকায় দাম কমার সুযোগ নেই।

রামপুরা বাজারের মাংস বিক্রেতা আব্দুল আলী বলেন, গরুর মাংসের বাজার গত দুই বছর যাবৎ এক জায়গায় পড়ে আছে। যারা একটু ভালো কোয়ালিটি ঠিক রাখে, তারা ৮০০ টাকা করে বিক্রি করে। তাছাড়া বাকি প্রায় সবাই ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে।

>> মাছের বাজারে আগুন

বাজারে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন মাছের ক্রেতারা। গত এক মাসে মাছের দাম কেজিপ্রতি ৪০-৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এখন বাজারে মাঝারি ইলিশ কেজিপ্রতি ২,৩০০-২,৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৭০০-৮০০ গ্রামের ইলিশের দাম ১,৭০০-১,৮০০ টাকা। সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে ছোট আকারের ইলিশ, যা ৪-৫টি মিলে এক কেজি হয়, দাম ৭০০ টাকা।

বিক্রেতা আবদুল কাদের জানান, ইলিশের সরবরাহ কম, তার ওপর রপ্তানির চাপ আছে। এ কারণে দাম বাড়ছে।

অন্য মাছের মধ্যে রুই কেজিপ্রতি ৩৫০-৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ টাকা, পাঙাশ ২২০-২৫০ টাকা, পাবদা ৪০০-৪৫০ টাকা, বাইলা ৮৫০ টাকা, টেংরা ৮০০ টাকা ও চিংড়ি কেজিপ্রতি ১,০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সম্প্রতি বাদামি ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১৫০ টাকায় উঠলেও এখন কমে ১৪০ টাকায় নেমেছে। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, বাড়তি দাম দ্রুত কার্যকর হয়, কিন্তু কমতে সময় নেয়।

শ্যামবাজারে বাজার করতে আসা দিনমজুর ছলেমান মিয়া বলেন, গরুর মাংস কিনতে পারি না, খাসি তো স্বপ্নের জিনিস। এখন মাছেও হাত বাড়ানো যায় না। বাচ্চাদের জন্য কখনো-কখনো মুরগি কিনতাম, সেটাও এখন কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

সরকারি চাকরিজীবী সেলিনা আক্তার বলেন, বাজারে কোনো কিছুতেই দরদামের সুযোগ নেই। বিক্রেতারা যা দাম বলেন, তাই দিতে হয়। খেটে-খাওয়া মানুষের জন্য এভাবে বাজার চালানো দিন দিন অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।


আমার বার্তা/এমই