জাহাজ কেনায় ফের সরব বিএসসি ও বেসরকারি খাত
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩২ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

দেশের সমুদ্র পরিবহন বাণিজ্যে গতি আনতে আগামী মাসে নতুন দুটি জাহাজ বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের বহরে যুক্ত হচ্ছে। এছাড়া ডিসেম্বরের মধ্যে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকায় আরও তিনটি জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শেষ করতে বিএসসিকে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। একইসঙ্গে সাড়ে সাত শতাংশ শুল্কহার প্রত্যাহার করায় বেসরকারি পর্যায়ে শুরু হয়েছে জাহাজ কেনা। প্রথম পর্যায়ে ওমেরা শিপিং এবং ভ্যানগার্ড মেরিন কিনতে যাচ্ছে দুটি মাদার ভ্যাসেল ও মাদার ট্যাংক।
আগামী অক্টোবর মাসেই রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন-বিএসসির বহরে যুক্ত হচ্ছে চীনে তৈরি দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার। নিজস্ব অর্থায়নে বিএসসি জাহাজ দুটি কিনলেও এ নিয়ে রোববার সম্পন্ন হবে সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি সাক্ষর। একইসঙ্গে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আরও তিনটি নতুন জাহাজ কিনতে বিএসসিকে নির্দেশনা দিয়েছে বর্তমান সরকার। এক্ষেত্রে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার এই তিনটি জাহাজ দাম পরিশোধে এগিয়ে এসেছে সরকার। তবে দামের ছোট্ট একটি অংশ পরিশোধ হবে বিএসসির নিজস্ব তহবিল থেকে।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, ‘যে কোম্পানি সবচেয়ে ভালো অফার করবে বেসড অন টেকনিক্যাল অফার এজ ওয়েলস ফাইনান্সিয়াল অফার দুইটা কম্বাইন করে যে টেন্ডার বেস্ট টেন্ডার হবে তার কাছ থেকে জাহাজ কেনা হবে। ম্যাক্সিমাম অর্থায়ন আমাদের বাংলাদেশ সরকার করবে।’
এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে হঠাৎ করেই জাহাজ কেনার উপর সাড়ে সাত শতাংশ করে শুল্কারোপ করে সরকার। আর এতেই বাংলাদেশি মালিকদের জাহাজ কেনা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। তবে শেষ পর্যন্ত সরকার আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে শুল্কারোপ প্রত্যাহার করার পরই পরই শুরু হয় জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া।
চট্টগ্রাম নৌ-বাণিজ্য দফতরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ বলেন, ‘ওমেরা গ্যালাক্সি নামে একটি ট্যাংকার জাহাজ প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার টন ডেডওয়েটের ওই জাহাজ তারা ক্রয় প্রক্রিয়ার ভিতরে আছে। গ্রেট রয়েল ওটিও প্রায় ৬৫ হাজার টন ডেডওয়েটের জাহাজ আমাদের বহরে সংযুক্ত হবে।’
নৌ বাণিজ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এক সপ্তাহের মধ্যেই ভ্যানগার্ড মেরিটাইম ৬০ হাজার মেট্রিক টন বহন ক্ষমতার এমভি গ্রেট রয়েল নামে একটি বাল্ক ক্যারিয়ার এবং ওমেরা শিপিংয়ের ১ লাখ ১৫ টন বহন ক্ষমতার ওমেরা গ্যালাক্সি নামে মাদার ট্যাংকার কিনতে যাচ্ছে। আর বিএসসি ডিসেম্বরের দিকে যে তিনটি নতুন জাহাজ কিনবে তার মধ্যে দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার এবং অপরটি হবে তেল পরিবাহনের জন্য মাদার ট্যাংকার।
মার্চেন্ট মেরিন অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, ‘পাঁচটা জাহাজ যেই পরিমাণ কার্গো ক্যারি করবে সেই পরিমাণ ফ্রেড বাংলাদেশ সরকার সরকারের কোষাগারে থাকবে এবং এই পাঁচটা জাহাজ তো শুধু একটা ট্রেড করবে না, মাল্টিপল ট্রেড করবে এবং এটার বেনিফিশিয়ারি মাল্টিপল ট্রেড হবে। বহু ইম্পোর্ট এবং এক্সপোর্টের
ক্ষেত্রে এটা হবে।’
বর্তমানে বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজ থেকে নিজ দেশের মাত্র ১১ শতাংশ পণ্য পরিবহন সম্ভব। অথচ আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অনুযায়ী, যে কোনো দেশের সমুদ্র বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ দেশিয় ক্যারিয়ার, ৪০ শতাংশ বিদেশি ক্যারিয়ার এবং বাকি ২০ শতাংশ দেশি ও বিদেশি ক্যারিয়ার যৌথভাবে পরিচালনা করে। প্রয়োজনীয় ক্যারিয়ার না থাকায় ভাড়া হিসেবে বছরে লাখ লাখ মার্কিন ডলার চলে যাচ্ছি বিদেশি জাহাজ মালিকদের কাছে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. আরিফ বলেন, ‘যত বেশি জাহাজ আমাদের দেশী জাহাজ হবে, পতাকাবাহী জাহাজ হবে, সারা পৃথিবীতে যেমন আমাদের সুনাম বাড়বে সেই সঙ্গে দেশের বিপুল পরিমাণে ডলার সাশ্রয় হবে।’
জাতিসংঘের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আন্কটার্ডের জাহাজের মালিকানায় থাকা দেশগুলোর সবশেষ তালিকায় ৩৫তম স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ। অবশ্য এতে পণ্যবাহী জাহাজের সঙ্গে সমুদ্রগামী মাছ ধরা জাহাজকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আমার বার্তা/এল/এমই