আদালতে ৪০ লাখ বাণিজ্যিক মামলা, দীর্ঘসূত্রিতায় ব্যাহত বিদেশি বিনিয়োগ
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:২৯ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

বাংলাদেশের নিম্ন ও উচ্চ আদালতে বাণিজ্য সংক্রান্ত প্রায় ৪০ লাখ অমীমাংসিত মামলার দীর্ঘসূত্রিতা স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকে ব্যাহত করছে বলে মনে করছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) ডিসিসিআই আয়োজিত ‘ব্যবসায় বিরোধ নিষ্পত্তি ও চুক্তি প্রয়োগ কার্যক্রমের অগ্রগতি’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তরা এসব কথা বলেন।
ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদলের প্রধান মাইকেল মিলার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) ও ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আবদুর রহিম খান উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআইর সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, দেশে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি, বিনিয়োগ ও মেধাস্বত্ত্ব বিষয়ক বিরোধ ক্রমাগত বাড়ার বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাংলাদেশের নিম্ন ও উচ্চ আদালতে বর্তমানে অমীমাংসিত মামলার সংখ্যা প্রায় ৪ মিলিয়ন। মামলা কার্যক্রম পরিচালনার দীর্ঘসূত্রিতা স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকে ব্যাহত করছে এবং ২০০১ সালে আরবিট্রেশন অ্যাক্ট হলেও, তা এখনও ভালোভাবে কার্যকর হয়নি। এ অবস্থার আলোকে অভিজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগের মাধ্যমে তিনি একটি ‘আলাদা কমার্শিয়াল কোর্ট’ স্থাপন এবং আইনি প্রক্রিয়ার সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, জনবহুল এ দেশে আদালতে মামলার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং বিচারিক কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টিকে আরো অসহনীয় করে তুলছে, যার ফলে স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম ক্রমাগত ব্যাহত হচ্ছে। ২০০১ সালে আরবিট্রেশন আইন করা হলেও, বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা যায়নি। বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধগুলো যদি প্রথাগত আদালতের বাইরে গিয়ে মেটানো যায়, তাহলে একদিকে যেমন আদালতের ওপর চাপ কমবে, সেই সঙ্গে বাণিজ্যের পরিবেশেরও উন্নয়ন হবে।
তিনি জানান, কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপনে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে এবং আগামী এক মাসের মধ্যে এটার খসড়া চূড়ান্ত করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তবে বাণিজ্য বিষয়ক আদালতগুলোর বিশেষজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগ দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের ওপর তিনি জোরোরোপ করেন।
বাংলাদেশ নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় সংস্কারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইইউ নিবিড়ভাবে কাজ করেছে, যা এদেশের মানুষের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশনের দিকে যাচ্ছে এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণের জন্য জোরারোপ করছে, তবে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপন করতে হবে, যেটি বিদেশি ও স্থানীয় বিনিয়োগে সম্প্রসারিত করবে। বাংলাদেশের আরবিট্রেশন কার্যক্রম গতি আসলে বর্তমানের বিনিয়োগ স্থবিরতা হ্রাস পাবে রাষ্ট্রদূত মত প্রকাশ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম খান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে চলমান আদালতের কার্যক্রমের বাইরে ‘আইনি সংস্থা’ তৈরি করা যেতে পারে। যার মাধ্যমে বিবাদমান প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তুলনামূলক স্বল্প সময়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার। তিনি বলেন, স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিকট ব্যবসায়িক চুক্তির প্রয়োগের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক, যেখানে আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি। বিশ্বব্যাংকের ডুইং বিজনে রিপোর্টের কন্ট্রাক এনফোর্সমেন্ট সূচকে আমাদের অবস্থান ১৯০টি দেশের মধ্যে ১৮৯তম, যা অত্যন্ত হতাশার বিষয়। ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থ ঋণ আদালতে প্রায় ২৫ হাজার মামলা রয়েছে বিচারাধীন রয়েছে, যা আমাদের আইনি কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রিতাকেই প্রকাশ করে।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্নে সরকারের আন্ত:মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের বেশ অভাব রয়েছে এবং এ অবস্থার উন্নয়ন না হলে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। বাণিজ্যিক বিরোধগুলো সমাধানে আদালতে না গিয়ে, আরবিট্রেশন সেন্টারের মাধ্যমে নিষ্পত্তিতে বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।
আমার বার্তা/এমই