শেয়ারবাজার পুনর্গঠন করতে দুষ্টচক্র থেকে বের হতে হবে: আমীর খসরু

প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৫ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

শেয়ারবাজার পুনর্গঠন ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এটিকে দুষ্টচক্র থেকে বের করে ভালোচক্রে আনতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

সোমবার (১৪ জুলাই) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকারেজ হাউজ মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) আয়োজিত পুঁজিবাজারবিষয়ক এক কর্মশালায় এ কথা বলেন তিনি।

আমীর খসরু বলেন, আমাদের পুঁজিবাজার একটি দুষ্টচক্রে পরিণত হয়েছে। যদি এটিকে দুষ্টচক্র থেকে রূপান্তর করে নৈতিক বা সদাচারপূর্ণ চর্চা অনুসরণ করতে পারি, তাহলে এটি একটি সঠিক রূপ পাবে।

তিনি বলেন, ভালোচর্চা এবং নীতিনির্ধারণে সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি দেখলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে। বর্তমানে আমাদের বাজার এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামো অতিমাত্রায় নিয়ন্ত্রিত ও সীমাবদ্ধ। বিএসইসির প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত—এই সিদ্ধান্ত বাজারে ইতিবাচক না নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, বিএসইসিকে একটি পূর্ণাঙ্গ পেশাদার সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে এবং এর কর্মকাণ্ড ও দৃষ্টিভঙ্গিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। বিদেশি বা বাইরের লোক নিয়োগের পরিবর্তে স্থানীয় জনবল দিয়ে সংস্থাটি পরিচালনা করা উচিত, যাতে অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা তৈরি হয়। পুঁজিবাজারকে যুগোপযোগী করতে হবে এবং ভালো মানের কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, বাজারে যেসব দুর্বল ও অপ্রয়োজনীয় কোম্পানি রয়েছে, সেগুলো পরিষ্কার করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি পরিষ্কার বার্তা পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি—বাংলাদেশের পুঁজিবাজার আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে এবং এটি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বচ্ছ। তখনই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হবে।

পুঁজিবাজার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর রাজনৈতিক চাপের বিষয়টি উল্লেখ করে খসরু বলেন, বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে তারা রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ভিত্তিতে বিএসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পদে নিয়োগ দেবে না।

‘আমরা যদি ক্ষমতায় আসি, তাহলে পুঁজিবাজার নিজেদের করে নেবো। পুঁজিবাজার যদি নিজের মতো করে না নেওয়া যায়, তাহলে এটিকে সক্রিয় ও স্থিতিশীল করা সম্ভব নয়,’—তিনি যোগ করেন।

আমীর খসরু আরও বলেন, পুঁজিবাজারকে আমরা শুধু বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের জন্য একটি ক্যাপিটাল সোর্সিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখি—এই ধারণা ভুল। এটা সরকারের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যাপিটাল সোর্সিং মেকানিজম। সরকার নিজেও এই বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে বিভিন্ন খাতের ব্যয় পরিচালনা করতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা এখনো এই সঠিক ধারণাটির দিকে যেতে পারিনি।

তিনি বলেন, যে কোনো সরকার যদি চায়, তারা পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের খরচ, উন্নয়ন ব্যয় কিংবা বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে পারে। তবে আমরা সেই পর্যায়ে এখনো পৌঁছাতে পারিনি। সুতরাং পুঁজিবাজার পুনর্গঠনের আগে আমাদের আগে এই ‘ক্যাপিটাল মার্কেট’ ধারণাটিকে সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। নইলে কাঠামোগত পরিবর্তন অর্থবোধক হবে না।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এ কে এম হাবিবুর রহমান, ডিএসই পরিচালক মিনহাজ মান্নান, ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম এবং ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) সভাপতি গোলাম সামদানী ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা।

আমার বার্তা/এল/এমই