বন্দরে আটকা ১৪ হাজার কনটেইনার, রপ্তানিতে বড় শিডিউল বিপর্যয়
প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২৫, ১৯:২৯ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টানা দুদিনের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রামের ১৯টি বেসরকারি ডিপোতে আটকা পড়েছে রপ্তানি পণ্যবাহী প্রায় ১৪ হাজার কনটেইনার। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্রেতাদের কাছে শিডিউল অনুযায়ী সময়মতো পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। যা রপ্তানিমুখী বিভিন্ন শিল্পকে ক্ষতির মুখে ফেলেছে।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় এনবিআরের শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার হলেও এর আগে শুল্কায়ন না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যেতে পারেনি তিনটি কনটেইনারবাহী জাহাজ। বন্দর সূত্রে জানা গেছে, জাহাজ তিনটিতে রপ্তানির তিন হাজার ৬৮০ টিইইউ কনটেইনার যাওয়ার কথা ছিল। কাস্টমসের শাটডাউন কর্মসূচির কারণে কনটেইনারগুলো জাহাজীকরণ সম্ভব হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রোববার কাস্টমসের কর্মসূচি প্রত্যাহার হলেও নির্ধারিত সময়ে জাহাজীকরণ করতে না পারা কনটেইনারগুলোর এখন আর সময়মতো বন্দর ছাড়ার সুযোগ নেই।
কাস্টমস কর্মকর্তাদের শাটডাউন কর্মসূচির কারণে দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত পোশাকশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুদিনে শিডিউল অনুযায়ী, কনটেইনার জাহাজীকরণ না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে ক্রেতাদের কাছে পণ্য পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে তৈরি পোশাক মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ পরিচালক এসএম আবু তৈয়ব জাগো নিউজকে বলেন, কাস্টমসের শাটডাউন কর্মসূচির কারণে বন্দরে আমার কনটেইনারও আটকা পড়েছে। আমার মতো অনেকের প্রতিষ্ঠানের পণ্য শিডিউল থাকলেও জাহাজীকরণ হয়নি। আবার আমদানি পণ্যও খালাস নেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন জাহাজের ডেমারেজও আমাদের বহন করতে হবে। এতে পুরো শিল্প ক্ষতির মুখে পড়বে।
কাস্টমসের অনুমোদন ছাড়া বন্দর থেকে আমদানি পণ্য খালাস বা পণ্য রপ্তানির কার্যক্রম করার সুযোগ থাকে না। শাটডাউন কর্মসূচির কারণে গত শনিবার থেকে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাস্টমস কর্মকর্তারা কর্মস্থলে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে কোনো নথি অনুমোদন করা যায়নি।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ডিপো থেকে রপ্তানির কনটেইনার না আসায় তিনটি জাহাজ গন্তব্যে ছেড়ে যেতে পারেনি। এ তিন জাহাজের মধ্যে ‘হং ডা জিন-৬৮’ নামের একটি জাহাজে এক হাজার ৬৬৬ টিইইউ কনটেইনার রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল। সোমবার সকাল পর্যন্ত জাহাজটি এনসিটি-৩ নম্বর বার্থে আটকা ছিল।
একই ভাবে এক হাজার ৪৬০ টিইইউ কনটেইনার রপ্তানির কথা ছিল ‘এক্সপ্রেস নিলওয়ালা’ জাহাজটির। কিন্তু কনটেইনার না ওঠায় জাহাজটি এনসিটি-৫ নম্বর বার্থে বসা ছিল। পাশাপাশি গিয়ারড ভ্যাসেল ‘এএস সিসিলিয়া’ জাহাজ ৫৬৪ টিইইউ কনটেইনার নিয়ে সিঙ্গাপুর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কনটেইনার না ওঠায় সোমবার সকালেও জাহাজটি জিসিবি-৮ জেটিতে বসা ছিল।
এএস সিসিলিয়া জাহাজটির লোকাল এজেন্ট মেডিটেরানিয়ান শিপিং কোম্পানির (এমএসসি) হেড অব অপারেশন অ্যান্ড লজিস্টিকস আজমীর হোসেন চৌধুরী বলেন, ডিপো থেকে রপ্তানি কনটেইনার না আসায় জাহাজটির বন্দর ছাড়া সম্ভব হয়নি। এ জাহাজের কনটেইনারগুলো সিঙ্গাপুরে নেওয়ার কথা ছিল। কনটেইনারগুলো সিঙ্গাপুর থেকে ইউরোপ ও আমেরিকাগামী বড় জাহাজে তুলে দেওয়ার সিডিউল ছিল। এখন সময়মতো কনটেইনারগুলো গন্তব্যে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।
কাস্টমস কর্মকর্তাদের কর্মসূচিতে দুদিনের ব্যবধানে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে ২৫৭০ টিইইউ কনটেইনার বেড়েছে। দুইদিন শুল্কায়ন বন্ধ থাকায় মাত্র ৯১৩ টিইইউ কনটেইনার পণ্য খালাস হয়েছে, যেগুলোর নথি আগে শুল্কায়ন করা ছিল।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে ৪১ হাজার ৫৩২ টিইইউ কনটেইনার ছিল। এরমধ্যে সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় জাহাজ থেকে কনটেইনার বন্দরে নেমেছে ২২৫৩ টিইইউ, আর ঢাকা আইসিডি (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) থেকে এসেছে ৬৩ টিইইউ।
অফডকগুলো থেকে রফতানিপণ্য ভর্তি কনটেইনার এসেছে ৪৯৩ টিইইউ এবং খালি কনটেইনার এসেছে ১৩৮১ টিইইউ। একই ভাবে জাহাজীকরণ হয়েছে ৩৪১২ টিইইউ কনটেইনার। ৭২ টিইইউ কনটেইনার ঢাকা আইসিডিতে পাঠানো হয়েছে।
অফডকগুলোতে আমদানিপণ্য ভর্তি কনটেইনার পাঠানো হয়েছে ১৫৩ টিইইউ। বন্দর থেকে ৯০৯ টিইইউ খালি কনটেইনার অফডকগুলোতে পাঠানো হয়েছে। ৩৬৩ টিইইউ আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার অনচেচিজ সরাসরি আমদানিকারকদের ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বন্দরের অভ্যন্তর থেকে ২৫৮ টিইইউ কনটেইনার পণ্য খালাস দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, কাস্টমসের কর্মসূচির কারণে শনি ও রোববার শুল্কায়নসহ আমদানি-রপ্তানির স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এতে রপ্তানির জন্য কনটেইনারগুলো নির্ধারিত সময়ে জাহাজীকরণ সম্ভব হয়নি। যে কারণে কনটেইনার জাহাজগুলোকে সিডিউল অনুযায়ী বার্থিংয়ের সুযোগ দেওয়া যায়নি। এতে বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনার জট বেড়েছে।
আমার বার্তা/এমই