মাংসের দোকানে ক্রেতা নেই, মাছ-মুরগিতে স্বস্তি খুঁজছে মানুষ
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৫, ১১:১২ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

ঈদুল আজহার পর রাজধানীর বাজারে মাংসের বেচাকেনা অনেকটাই থমকে গেছে। বাজারে গরু-খাসির মাংস পাওয়া গেলেও ক্রেতার দেখা নেই। তবে কিছুটা কমেছে মাছ-মুরগির দাম। ফলে ঈদের পরে মাছ, মুরগি ও ডিমের বাজারে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ।
একদিকে ঈদে কোরবানির কারণে অনেক পরিবার এখনো রান্না করছেন কোরবানির মাংস। অন্যদিকে যারা কোরবানি দেননি, তাদের বড় একটি অংশ গরু বা খাসির মাংস কিনতে গিয়ে অতিরিক্ত দামের কারণে ফিরে আসছেন দোকান থেকে। তবে তুলনামূলক সস্তা মাছ, ব্রয়লার মুরগি ও ডিম স্বস্তির জায়গা হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের কাছে।
শুক্রবার (১৩ জুন) সকালে রাজধানীর বনশ্রী, রামপুরা এবং মালিবাগ এলাকার একাধিক বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদ-পরবর্তী বাজারে মাংসের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকায় মাছ, মুরগি ও ডিমের বাজারে ফিরেছে স্বাভাবিক গতি। সাশ্রয়ী মূল্য, স্বস্তি এবং চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকায় এই তিনটি পণ্যই হয়ে উঠেছে শহরের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের ভরসার জায়গা। বাজারে সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য থাকলে আগামী কয়েকদিনে মূল্য আরও স্থিতিশীল হবে বলেই মনে করছেন বিক্রেতারা।
মুরগি-ডিমেই চলছে অনেক পরিবার
রাজধানীর মালিবাগ বাজারে দেখা গেছে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। সোনালি মুরগি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, লাল লেয়ার ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগি এখনও কেজি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা।
রাবেয়া খাতুন পেশায় একজন স্কুলশিক্ষিকা। তিনি বলেন, ঈদের পর পরিবারে আর কেউই মাংস খেতে চাচ্ছে না। গরু-খাসির মাংসে যেন অনেকটা বিতৃষ্ণা চলে এসেছে। তাই সোনালি ও ব্রয়লার মুরগি কিনেছি। মুরগির দামটা আমার কাছে অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশ কমই মনে হয়েছে। মোটামুটি সস্তা হওয়ায় এখন মুরগির মাংস সবাই খেতে পারে।
মুরগি বিক্রেতা নুরুল ইসলাম বলেন, ঈদের পর দুই দিন বিক্রি একেবারে থেমে গিয়েছিল। এখন আবার একটু গতি এসেছে। দামও একটু কমে এসেছে, সেটা ভালো লক্ষণ। তবে দেশি মুরগিতে আগ্রহ কম, দাম বেশি, তাই মানুষ হাতই দিচ্ছে না।
ডিমের বাজারেও রয়েছে কিছুটা স্বস্তি। আজ রাজধানীর বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা।
ডিম কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী সাইফুল ইসলাম বলেন, সকাল-বিকেল মিলিয়ে পরিবারে প্রতিদিন ডিম লাগে। আগে ডজনপ্রতি ১০ টাকাও বেশি দিতাম। এখন ১৩০ টাকায় পেয়ে কিছুটা ভালো লাগছে। সব জিনিসের দাম যখন বাড়ছে, তখন অন্তত ডিমে স্বস্তি পাচ্ছি।
ডিম বিক্রেতা ইকবাল হোসেন বলেন, ঈদের পর ডিমের চাহিদা বেড়েছে। সবাই এখন ঘরে ফিরেছে, অফিস-স্কুলও খুলছে, তাই আবার প্রতিদিনকার খাবারে ডিমের ব্যবহার বাড়ছে। দাম একটু কমেছে সরবরাহ ভালো থাকায়।
মাছের বাজারে ভিড়, দামও কিছুটা সহনীয়
ঈদের ছুটি শেষে মাছের বাজারে ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। অনেকেই বলছেন, বাড়িতে কোরবানির মাংস শেষ, এখন মাছের দিকেই ঝুঁকছেন। বাজারে আজ বড় রুই বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়, কাতল ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা, পাবদা ৩৫ থেকে ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, কৈ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। তবে দেশি জাতের শিং ও কৈ যথাক্রমে ১২০০ ও ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
রামপুরা বাজারে মাছ কিনতে আসা আকবর হোসেন নামক এক ক্রেতা বলেন, ঈদের পর মন চাচ্ছে হালকা কিছু খেতে। মাংস খেতে খেতে হাঁপিয়ে গেছি। এখন বাজারে এসে রুই মাছ কিনেছি ৩০০ টাকা কেজিতে, যা সাধারণত ৩৪০ টাকায় কেনা হতো। দামটা একটু কমতি দেখে বেশ খুশি হলাম।
মাছ বিক্রেতা হাসান আলী বলেন, ঈদের আগে মাছ একদম চলেনি। এখন আবার চাহিদা বেড়েছে। দামও কিছুটা কম, সরবরাহ ভালো। তবে দেশি শিং-কৈ এখনও খুব দামি, কারণ এগুলো খুঁজে পাওয়া কঠিন।
অন্যদিকে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ টাকা কেজি দরে। কিন্তু ক্রেতা নেই বললেই চলে।
মগবাজারের মাংস বিক্রেতা হাফিজুর রহমান বলেন, সকাল থেকে মাংস ঝুলিয়ে রেখেছি, বিক্রি খুব একটা নেই। সাধারণত ঈদের পর এই সময়টাতে বিক্রি কমই থাকে। ঈদের পর মানুষ মাছ-মুরগিতেই চলে গেছে। যেকারণে কেউ কেউ দাম জিজ্ঞেস করে, শুনে চলে যায়।