‘কোকা-কোলা বাংলাদেশ’কে অধিগ্রহণ করছে তুরস্কের সিসিআই
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:১৩ | অনলাইন সংস্করণ
অনলাইন ডেস্ক:

বাংলাদেশে কোক ব্র্যান্ডের উৎপাদন, বিক্রয় এবং বিতরণের সাথে জড়িত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুটি কোমল পানীয় প্রস্তুতকারক কোম্পানি কোকা-কোলা এবং পেপসিকো। প্রতিষ্ঠান দুটি বাংলাদেশের কোমল পানীয়ের বাজারকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত উন্নীত করেছে। কোমল পানীয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর মাধ্যমে সমৃদ্ধ এবং বিস্তৃত করেছে ব্যবসায়িক পরিসর। পরবর্তীতে প্রাণ, আকিজ এবং পারটেক্সের মতো স্থানীয় কিছু পানীয় প্রস্তুতকারকদের সাথে সমন্বিত হয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এক বৃহৎ বাজার।
অধিগ্রহণের এই প্রক্রিয়ায় এবার তুরস্কের কোমল পানীয় কোম্পানি কোকা-কোলা আইসেসেক (সিসিআই) বাংলাদেশের কোমল পানীয় কোম্পানি কোকা-কোলা বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিসিবিবি) অধিগ্রহণ করার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ১৩০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে স্বাক্ষরিত হয়েছে এই চুক্তি। বিনিময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করার অঙ্গীকার কোম্পানিটির।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সিসিআইয়ের ওয়েবসাইটে পোস্ট করা একটি বিবৃতি অনুসারে, চুক্তি অনুযায়ী সিসিআই ১৩০ মিলিয়ন বা ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যে সিসিবিবি শেয়ারের ১০০ শতাংশ অধিগ্রহণ করবে। চুক্তিতে আরও বলা হয়, ক্লোজিং অডিট সমাপ্তির পর সমাপ্তির তারিখ থেকে সিসিবিবি-এর সঠিক নেট আর্থিক ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করার জন্য ইক্যুইটি মূল্য একটি পোস্ট-ক্লোজিং মূল্য সমন্বয় প্রক্রিয়ার অধীন হবে।
সিসিআই জানায়, সিসিআই ইন্টারন্যাশনাল হল্যান্ড বিভি (সিসিআইএইচবিভি) বিদ্যমান নগদ সংস্থান দ্বারা অধিগ্রহণের অর্থায়ন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং সিসিআই-এর নেট লিভারেজের ওপর এর সামান্য প্রভাব ফেলবে। ঢাকায় নিয়ন্ত্রক অনুমোদনের পর চুক্তিটি বন্ধ হয়ে যাবে বলেও আশা করা হচ্ছে। অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিসিবিবির কর্মকর্তারা।
সিসিআই ঘোষণা করে, সম্পূর্ণ মালিকানাধীন সাবসিডিয়ারি সিসিআইএইচবিভি এবং কোকা-কোলা কোম্পানির একটি সহায়ক সংস্থার সাথে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সিসিআইএইচবিভি প্রধান সরাসরি শেয়ারহোল্ডার হবে।
কোকা-কোলা কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল বেভারেজ প্রাইভেট লিমিটেড (আইবিপিএল)। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ৭৪ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে ময়মনসিংহের ভালুকায় প্ল্যান্টটি প্রতিষ্ঠা করে। এর সাত বছর পরই সিসিবিবি ইস্তাম্বুলভিত্তিক কোম্পানিতে স্থানান্তরিত হতে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি অন্যান্য অবকাঠামোও গড়ে তোলা হয়েছে।
স্থানীয় ফার্ম আব্দুল মোনেম লিমিটেড হলো বাংলাদেশের আরেকটি বোতলজাত কোকা-কোলা পানীয়ের কোম্পানি। এখানে ২০২২ সালের মধ্যে (তিন বছরে) ১০ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি বার্ষিক বৃদ্ধির হার নিবন্ধিত করেছে নন-অ্যালকোহলযুক্ত রেডি-টু-ড্রিংক মার্কেট।
বাংলাদেশের কোমল পানীয়ের বর্তমান বাজারের মূল্য আনুমানিক ৪ হাজার কোটি টাকা থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা। সিসিআই-এর মতে, বাংলাদেশে নন-অ্যালকোহলযুক্ত রেডি-টু-ড্রিংক বাজারটি ২০৩২ দশকের মধ্যে ১২ শতাংশ বার্ষিক গড় বৃদ্ধির নিবন্ধন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সিসিআই কোকা-কোলার ব্র্যান্ড তৈরি, বিতরণ এবং বিক্রি করার সাথে সম্পৃক্ত। আজারবাইজান, ইরাক, জর্ডান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, পাকিস্তান, সিরিয়া, তাজিকিস্তান, তুরস্ক, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তানসহ বিশ্বের ১১টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে তাদের কার্যক্রম রয়েছে।
সিসিআই-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা করিম ইয়াহি বলেছেন, ‘আমরা সিসিবিবি অধিগ্রহণের চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পেরে খুবই আনন্দিত। আমরা এই পদক্ষেপকে ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় বাজারে প্রবেশের একটি দুর্দান্ত সুযোগ হিসেবে দেখছি। সিসিআই-এর মূল দক্ষতা স্থাপনের মাধ্যমে বাজারমূল্য বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে। এই অধিগ্রহণ চুক্তি সিসিআই-এর জন্য আরও বৈচিত্র্যময় ভৌগলিক পদচিহ্ন তৈরি করবে এবং কোকা-কোলা কোম্পানির সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করবে।’
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পূর্বাভাসের উদ্ধৃতি দিয়ে সিসিআই বলছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০১২ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বার্ষিক গড়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অধিগ্রহণের ফলে ২০২৩ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে গড় বার্ষিক ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হারে প্রসারিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সিসিবিবি রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ এবং ঢাকা অঞ্চলে প্রায় ১০ কোটি গ্রাহককে সেবা প্রদান করে থাকে। ৩০০ জনেরও বেশি কর্মচারী রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। একটি বোতলজাত প্ল্যান্ট এবং তিনটি প্রধান গুদামসহ সিসিবিবি-এর প্রায় ৩ লাখ বিক্রয় পয়েন্ট এবং ৫০০ এর কাছাকাছি অংশীদার রয়েছে।
আমার বার্তা/জেএইচ