ফ্লাইটে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ

প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৫, ১২:০৮ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

বিমানের ফ্লাইটে সহকর্মী এক নারী কেবিন ক্রুকে যৌন নিপীড়ন করেছেন বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট পার্সার আবদুর রহমান সুমন—এমন অভিযোগ উঠলেও ঘটনার প্রায় তিন সপ্তাহ পরও শুরু হয়নি তদন্ত। উল্টো ভুক্তভোগীকে অভিযোগ তুলে নিতে চাপ ও হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও অভিযুক্ত সুমনকে দেওয়া হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক রুটের দায়িত্ব। এ ঘটনায় বিমানের নারী কর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে চরম উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতা।

গত ১ মে বিজি-০১৪৭ ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে দুবাই যায় এবং ৩ মে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় ফেরে। ওই ফ্লাইটেই প্রধান কেবিন ক্রুর দায়িত্বে ছিলেন আবদুর রহমান সুমন। অভিযোগ অনুযায়ী, যাত্রীসেবা শেষে ফ্লাইট কিছুটা শান্ত হলে সুমন ডেকে নেন নারী কেবিন ক্রুকে। কানের কাছে ফিসফিস করে বলতে থাকেন নানা অশালীন ও যৌন নিপীড়নমূলক কথা। এতে বিব্রত হলেও পেশাদারিত্ব বজায় রেখে মৃদু প্রতিবাদ জানান তিনি। কিন্তু সুমন তাতে দমে যাননি। বরং স্পর্শকাতর অঙ্গ নিয়ে মন্তব্য করার পাশাপাশি বলেন, ‘আমরা বাবা এবং মেয়ের মতো, আমি তোমাকে আমার বিছানায় ডাকছি না…’।

ওই নারী কর্মী বিমানের গ্রাহকসেবা পরিদপ্তরে ৪ মে ইমেইলে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের কপি দেওয়া হয় বিমানের ফ্লাইট সেফটি বিভাগেও। অভিযোগ দেওয়ার পর থেকেই তাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। অভিযোগটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিপীড়ন প্রতিরোধ কমিটিতে পাঠানো হয়নি, বরং ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একজন ফ্লাইট সার্ভিস কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘটনাটি বিমানের অনেকেই জানেন। লিখিত অভিযোগের পর সুমনকে পাঁচ দিন দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখা হলেও কেবিন ক্রু ইউনিয়নের কিছু নেতার চাপে তাকে পুনরায় দায়িত্বে বহাল করা হয়। এমনকি ঢাকা-রোম-ঢাকা রুটের মতো গুরুত্বপূর্ণ ফ্লাইটেও তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বিমানে নারী সংক্রান্ত ছোটখাটো ঘটনায় অনেককে চাকরিচ্যুত কিংবা ওএসডি করা হয়েছে। কিন্তু স্পষ্ট যৌন নিপীড়নের ঘটনায় কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ থাকায় নারী কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।’

লিখিত অভিযোগে নারী কেবিন ক্রু উল্লেখ করেন, ফ্লাইটের মধ্যে অনুমতি ছাড়াই সুমন তার কাছে এসে বাজে ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলেন। এতে তিনি ফ্লাইটে অনিরাপদ অনুভব করেন এবং মানসিকভাবে অস্থির হয়ে পড়েন। সুমন অন্য সহকর্মীদের সামনেও তার শরীর নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন এবং যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আবদুর রহমান সুমন বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি শুনেছি, তবে কী অভিযোগ জানি না। অফিস থেকেও কিছু জানায়নি।’ অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হলে তিনি দাবি করেন, ‘ইন ফ্লাইটে অভিযোগ দেওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের গ্রাহকসেবা পরিদপ্তর থেকে যে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়নি, তা বেরিয়ে আসে অভিযুক্ত সুমনের কণ্ঠেই। তিনি তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হলে কী হবে, শাস্তি হবে!’

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের গ্রাহকসেবা পরিদপ্তরের পরিচালক মো. রাশেদুল করিম বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে রাজি নন। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিমানের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।

পরে বিমানের মুখপাত্র ও জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এবিএম রওশন কবীর বলেন, ‘অভিযোগটি যাচাই-বাছাই চলছে। প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট সার্ভিস সূত্র বলছে, সুমনের বিরুদ্ধে অতীতেও মৌখিকভাবে যৌন হয়রানির অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। চাকরি জীবনের শুরুর দিকেও এমন এক ঘটনায় তিনি বিভাগীয় শাস্তির মুখোমুখি হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকার পরও বিমানের একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় তিনি বারবার রক্ষা পাচ্ছেন বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

 

আমার বার্তা/এল/এমই