ইলেকশন কাকে বলে দেখবে কক্সবাজার পৌরবাসী

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৩, ২০:২৬ | অনলাইন সংস্করণ

  কক্সবাজার প্রতিনিধি

*কমিশনারের হাতে হাত রেখে ৫ মেয়র প্রার্থীর শপথ
*পেশীশক্তি ও কালো টাকার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
*প্রতি কেন্দ্রে থাকবে সিসি ক্যামেরা
*ভোট প্রদানে প্রভাব বিস্তার করলে গ্রেপ্তার
*প্রাইভেট গোয়েন্দা দিয়ে বিদেশীরাও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে

 

কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) মোঃ আহসান হাবিব খান বলেন, 
ইলেকশন কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি, তা কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে দেখিয়ে দেওয়া হবে। 

৩ জুন শনিবার সকালে পাবলিক লাইব্রেরীর শহীদ সুভাষ হলে প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

তিনি বলেন, আগামী প্রজন্মের জন্য একটি দৃষ্টান্তমূলক  নির্বাচন উপহার দেওয়া হবে। কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে কেউ পেশীশক্তি ও কালো টাকার ব্যবহার করলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এসব কথার সঙ্গে একমত হয়ে নির্বাচন কমিশনারের হাতে হাত রেখে ওয়াদা দিয়েছেন ৫ মেয়র প্রার্থী। 


প্রধান অতিথির বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, কক্সবাজার পৌর নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। প্রত্যেকটি কেন্দ্রে বসানো হবে সিসি ক্যামেরা। কোন প্রার্থীর সমর্থক কিংবা এজেন্ট ভোট প্রদানে প্রভাব বিস্তার করলে গ্রেপ্তার করা হবে। 

তিনি আরও বলেন, অধিকাংশ প্রার্থী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করছে। তাই সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে। কেউ নির্দেশনা না মানলে প্রার্থীতা বাতিল করা হবে। 

জেলা প্রশাসন ও নির্বাচন অফিসের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) মোঃ আহসান হাবিব খান বলেন, আপনারা আমার আসল রূপটা হয়তো দেখেননি। আমি কম বুঝি সোজা বুঝি। উপরে আল্লাহ নীচে বিবেক। এর মাঝামাঝি আমার আর কিছু কাজ করে না। কোন চাপ, শক্তি, প্রলোভন নীতিপথ থেকে আমাকে সরাতে পারে না। যারা আমার সঙ্গে কাজ করেছে তারা আমাকে চেনে। কেউ অন্যায় করলে, আচরণবিধে লঙ্ঘন করলে দুই কলম লিখে দেন। ভিডিও ফুটেজ দেন। দেখেন, কী কাজ হয়। তাকে ঢাকায় তলব করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোন ছাড় নাই। প্রয়োজনে প্রার্থীতা বাতিল করব। 

উপস্থিত প্রার্থীদের উদ্দেশ্য করে নির্বাচন কমিশনার বলেন, অনুগ্রহ করে সঠিক কাজটা করেন। আমরা কেন আপনার দিকে আঙ্গুল তুলবো? আমার দিকে যদি কেউ আঙ্গুল তুলে, আমি তার আঙ্গুলটা ভেঙ্গে দিতে চাই। আমার দ্বারা অন্যায়, অবিচার এবং পক্ষপাতিত্বমূলক কিছুই হয় না। আমি আত্মবিশ্বাসী। কথাগুলো কিন্তু আমি বলছি এক বছর তিন মাস পরে। এক বছর প্রমাণ করেছি। 

ইভিএমে ভোট প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ইভিএম হচ্ছে স্বচ্ছতার প্রতীক। একদিন সময় আসবে যারা স্বচ্ছ ভোট চায়, যারা সৎ মানুষ, যাদের কালো টাকা নাই তাদের জন্য একমাত্র পন্থা ইভিএম। 

আমরা সুন্দর এবং গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন উপহার দিতে চাই। এ জন্য প্রার্থী, ভোটারসহ সকলের সহযোগিতা দরকার। 

কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে কোন প্রকার মেকানিজম, ইঞ্জিনিয়ারিং এর কোন সুযোগ নাই জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) মোঃ আহসান হাবিব খান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে কমিশনের সদিচ্ছার কোন অভাব নেই। সকলকে আচরণবিধি মানতে হবে।

ভোটের মাঠে সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা, এমনকি প্রাইভেট গোয়েন্দা দিয়ে বিদেশীরাও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে। আচরণ বিধি লঙ্ঘন করায় গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আগের দিন একজন প্রভাবশালী কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে কক্সবাজারেও প্রার্থীতা বাতিল করতে দ্বিধা করা হবে না কমিশন। এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ ও "জিরো টলারেন্স" নীতি অবলম্বন করা হবে। 

এজন্য কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনের সকল আপডেট রিপোর্ট নির্বাচন কমিশনের সদর দপ্তরে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন কমিশনার মোঃ আহসান হাবিব খান।

তিনি আরো বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন মানেই কমিশন, প্রশাসনসহ সবার সাফল্য। যেহেতু কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের প্রত্যেক বুথে সিসি ক্যামেরা থাকবে, সুতরাং সিসি ক্যামেরা ফুটেজ, গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও জেলা নির্বাচন অফিসের উদ্যোগে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুল ইসলাম, জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার এস.এম শাহাদাত হোসেন।

কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার শিমুল শর্মার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় নৌকার মেয়র প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী, নারিকেল গাছ প্রতীকের নাগরিক কমিটি মনোনীত স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ, হেলামেট প্রতীকের জগদীশ বড়ুয়া পার্থ, হাতপাখা প্রতীকের জাহেদুর রহমানসহ কাউন্সিলর প্রার্থীরা নানা অভিযোগ ও প্রশ্ন তুলে ধরেন।

সভা শেষে কমিশনার মোঃ আহসান হাবিব খান দর্শক গ্যালারীতে গিয়ে ৫ জন মেয়র প্রার্থীর হাতে হাত রেখে নির্বাচনে আচরণবিধি মেনে চলতে, পরিবেশ সুষ্ঠু রাখাতে ওয়াদা করান।

আগামী ১২ জুন কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচন। সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। পৌরসভায় ১২টি ওয়ার্ডে মোট ৪৩ টি ভোট কেন্দ্রে ২৪৪ টি বুথ রয়েছে। অস্থায়ী বুথ রয়েছে আরো ১৪ টি। 

নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত হালনাগাদ করা ভোটার তালিকায় কক্সবাজার পৌরসভায় মোট ৯৫ হাজার ৩৮৬ জন ভোটার রয়েছে। তারমধ্যে, ৫০ হাজার ১৮৪ জন পুরুষ ভোটার এবং ৪৫ হাজার ২০২ জন মহিলা ভোটার।

এবি/টিএ