ভারতের কারাগারে আটক থাকা ৩২ জেলেকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর
প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:৩৯ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

টানা ৩ মাস ধরে ভারতের কারাগারে থাকা ৩২ জেলেকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে মোংলার কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে প্রধান কার্যালয়ে এই জেলেদের আনুষ্ঠনিকভাবে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাংলাদেশ ও ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা ও বন্দি বিনিময় চুক্তির অংশ হিসেবে এই জেলেদের বিনিময় করা হয়।
কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন জানায়, বাংলাদেশ-ভারত আন্তর্জাতিক সমূদ্র সীমারেখা সংলগ্ন বাংলাদেশ জলসীমার মধ্যে অবৈধভাবে মৎস্য আহরণরত অবস্থায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী গত ১২ জুলাই এবং ২ আগস্ট এফবি মা মঙ্গল চন্ডি-৩৮, এফবি ঝড় এবং এফবি পারমিতা-৪ নামের ৩টি ভারতীয় ফিশিং বোটসহ ৪৭ জন জেলেসহ আটক করে।
অপরদিকে, গত ১২ এবং ১৭ সেপ্টেম্বর ভারতীয় জলসীমায় মৎস্য আহরণের অভিযোগে ২টি বাংলাদেশি ফিশিং বোটসহ ৩২ জন জেলেকে আটক করে ভারতীয় কোস্টগার্ড।
অতঃপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার মাধ্যমে আটক থাকা জেলেদের বন্দি বিনিময়ের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তার অংশ হিসেবে ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ-ভারত আন্তর্জাতিক মেরিটাইম বাউন্ডারি লাইনে বাংলাদেশে আটক থাকা ৪৭ জন ভারতীয় জেলেকে ৩টি ফিশিং বোটসহ ভারতীয় কোস্টগার্ডের নিকট হস্তান্তর করা হয়। একই সঙ্গে ভারতে আটক থাকা ৩২ জন বাংলাদেশি জেলেসহ একটি ফিশিং বোট ‘এফবি মায়ের দোয়া’ ভারতীয় কোস্টগার্ড হতে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড গ্রহণ করে এবং অপর একটি বোট গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান কোস্টগার্ড কর্মকর্তারা।
কোস্টগার্ড যুদ্ধ জাহাজ বিসিজিএস কামরুজ্জামানের অধিনায়ক কমান্ডার শুয়াইব বখতিয়ার রানা বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমঝোতায় দুই দেশে বন্দি থাকা জেলেদের হস্তান্তর করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশি সম্পদ রক্ষা ও জেলেদের স্বার্থ্য রক্ষায় এই ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে জেলেরা জানান, ভারতের জেলে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশি জেলেদের নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের মাছ, নগদ টাকা ও মূল্যবান মালামাল নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনায় কোস্টগার্ড ও সরকারের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন তারা।
অন্যদিকে ৩২ জেলে ছাড়াও ভারতের জেলে শতাধিক মৎস্যজীবীসহ বিভিন্ন অপরাধে আটক বাংলাদেশিরা রয়েছেন। তারা ওখানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বাংলাদেশ সরকারের কাছে ভারতে আটক জেলেসহ অন্যান্যদের ফিরিয়ে আনার দাবি জানান জেলেরা।
ভারতের হাতে আটক হয়ে ফেরত আসা জেলে মো. ইউনুস বলেন, তিন মাস ভারতের জেলে ছিলাম। ভারতের জেলে থাকা অবস্থায় আমাদের অমানসিক নির্যাতন করেছে। সেখানে আমার মতো আরও অনেক বাংলাদেশি আটক আছে। আমাদের কষ্টের শেষ নেই। সরকারের কাছে অনুরোধ, তাদেরও যেন দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
আরেক জেলে মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ভারতের জেলে প্রতিদিন আতঙ্কে ছিলাম। পরিবার কি অবস্থায় আছে জানতাম না। দেশে ফিরে যেন নতুন জীবন পেলাম। কিন্তু সেখানে এখনও বহু বাংলাদেশি আছে তাদেরও ফেরত আনার দাবি জানাই।
টলার শ্রমিক তরিকুলের ভাই হাসিব বলেন, তিন মাস ধরে দিন-রাত শুধু একটা কথাই চিন্তা করেছি—সে বেঁচে আছে তো? ভাইয়ের বাচ্চাদের কাছে বাবার খবর দিতে পারিনি। আজ তাকে জীবিত দেখে মনে হচ্ছে আল্লাহ আবার আমাদের নতুন জীবন দিলেন। সরকার আর কোস্টগার্ডের কাছে দোয়া করি যারা এখনো ফেরেনি, তাদেরও যেন দ্রুত আনা হয়।
টলার মালিক মাওলানা ফখরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ তিন মাস ৭ দিন আগে ভোলা থেকে সাগরে মাছ ধরতে যাই। ঝড়ে পথ হারিয়ে ভারতীয় বিএসএফ আমাদের আটক করে নিয়ে যায়। এরপর আমাদের সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরে জানতে পারি জেলাখানায় রাখা হয়েছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড তাদের উদ্ধার করেছে—এর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমার টলারের ১৯ জন জেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। একই সঙ্গে ভারতীয় জেলেদের ক্ষেত্রেও মানবিক আচরণের অনুরোধ জানাই।
আমার বার্তা/এমই
