
নারীর অধিকার, নিরাপত্তা ও সমাজে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে কয়রা উপজেলায় যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হলো আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস। উপজেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপিত হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বেগম রোকেয়া ছিলেন উপমহাদেশে নারী জাগরণের অগ্রদূত। তাঁর শিক্ষা, সচেতনতা ও অধিকার আন্দোলনের চর্চাই পারে সমাজে প্রকৃত নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠা করতে।
সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিক আলোচনা সভা শুরু হয়। উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার মোঃ মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, নারী নেত্রী, সামাজিক কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। আলোচনায় বক্তারা বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে পরিবার, সমাজ ও প্রশাসনের যৌথ ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ঘরে ও বাইরে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ, সচেতনতা বৃদ্ধি ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন প্রয়োজন।
সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, নারী নির্যাতন কমাতে শিক্ষার পরিধি আরও বিস্তৃত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মাঝে মানবিক মূল্যবোধ, সহমর্মিতা—এসব গুণাবলি গড়ে তুলতে শিক্ষকদের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। খুলনা জেলা বিএনপির সদস্য এম এ হাসান বলেন, সমাজের প্রতিটি মানুষকে নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মানসিকতা অর্জন করতে হবে, তাহলেই নির্যাতন কমবে।
উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার মোঃ আহাদ আলী নারী নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জরুরি সেবা খাতের ভূমিকার কথা তুলে ধরে বলেন, সহিংসতা বা দুর্ঘটনার মুহূর্তে দ্রুত সেবা নিশ্চিত করতে ফায়ার সার্ভিস প্রস্তুত আছে। ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক মোঃ মাসুম বিল্লাহ বলেন, অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হলে নারী সমাজ আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে—যা নির্যাতন প্রতিরোধে বড় ভূমিকা রাখে।
এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন কয়রা সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক তরুণ কান্তি মন্ডল, অদম্য নারী ডাক্তার মহসিনা রহমান, মানষী মন্ডল ও নারী নেত্রী মুর্শিদা খাতুন। তারা বলেন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধের প্রথম ধাপ হলো মৌনতা ভাঙা। পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে বা সমাজে যে কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার হলে নারীদের আইনি সাহায্য ও সহায়তা নেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া জরুরি। সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীকে মর্যাদা দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করতে সবাইকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
আলোচনা শেষে সমাজে বিশেষ অবদান রাখায় ৫ জন অদম্য নারীকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন শিক্ষাক্ষেত্র, স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক উন্নয়ন ও নারী অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পেশার নারী। তাদের শ্রম, সাহস ও আত্মনিবেদনকে উদযাপনের মাধ্যমে দিবসটি আরও অর্থবহ হয়ে ওঠে।
উপজেলা প্রশাসন আশা প্রকাশ করে জানায়, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক সহযোগিতার মাধ্যমেই নারীর প্রতি সহিংসতার অবসান ঘটানো সম্ভব। বেগম রোকেয়ার আদর্শ অনুসরণ করে নারী শিক্ষা ও স্বাবলম্বিতা বৃদ্ধিতেও আরও উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য, যা নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ইতিবাচক বার্তা বহন করে।

