
স্বচ্ছতা, ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে কয়রা উপজেলায় যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হলো আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপিত হয়। দিনব্যাপী আয়োজনে ছিল বর্ণাঢ্য র্যালি, সচেতনতা কার্যক্রম ও আলোচনা সভা।
সকাল ১১টায় কয়রা সদরের কেন্দ্রীয় এলাকাসমূহ প্রদক্ষিণ করে একটি সচেতনতামূলক র্যালি বের হয়। র্যালির ব্যানারে ‘দুর্নীতি নয়—সততার পথে এগিয়ে চলি’ স্লোগানে অংশগ্রহণকারীরা দুর্নীতি প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার আহ্বান জানান। র্যালিতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
র্যালি শেষে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তারা দুর্নীতির ক্ষতিকর প্রভাব, প্রতিরোধ কৌশল এবং সমাজে নৈতিকতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তারা বলেন, দুর্নীতি কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ নয়, এটি সমাজে বৈষম্য, অবিচার ও অস্থিরতা বাড়ায়। দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রশাসনিক কঠোরতার পাশাপাশি জনগণের সচেতন অংশগ্রহণকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন বক্তারা।
সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার মোঃ মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, পরিবার থেকেই সততা ও নৈতিকতার চর্চা শুরু হওয়া উচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতিবিরোধী মূল্যবোধ শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। খুলনা জেলা বিএনপির সদস্য এম এ হাসান বলেন, দুর্নীতিকে শেকড় থেকে উৎখাত করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পাশাপাশি নাগরিক সমাজকেও সোচ্চার হতে হবে।
এ সময় বক্তব্য দেন উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার মোঃ আহাদ আলী, ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক মোঃ মাসুম বিল্লাহ, কয়রা সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক তরুণ কান্তি মণ্ডল, সাংবাদিক মোঃ রিয়াছাদ আলী, শেখ মনিরুজ্জামান মনু, মাষ্টার আঃ রউফ, জিএম নজরুল ইসলাম, শাহিদুল ইসলাম ও মোঃ ফরহাদ হোসেন।
বক্তারা বলেন, উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি। সেবা খাত, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসনসহ সবক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করলেই দুর্নীতি কমবে। তারা আরো বলেন, প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে অনলাইন সেবা, তথ্যের উন্মুক্ততা ও ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা দুর্নীতি কমাতে বড় ভূমিকা রাখছে। তাই সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল সিস্টেম আরও জোরদার করার আহ্বান জানান তারা।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা দুর্নীতি প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত ক্যাম্পেইন পরিচালনা, শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা কর্মসূচি জোরদার এবং সামাজিক মূল্যবোধ পুনরুদ্ধারের বিষয়ে সুপারিশ করেন।
দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে স্থানীয় জনসাধারণের অংশগ্রহণ ছিল উৎসাহব্যঞ্জক। বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, সম্মিলিত উদ্যোগ ও সততার চর্চা বৃদ্ধি পেলে কয়রায় একটি স্বচ্ছ, ন্যায়ভিত্তিক ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে উঠবে।

