ফেরি পাচ্ছে দ্বীপের বাসিন্দারা, বদলে যাবে অর্থনীতি

প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৩৩ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

  .

স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে নিরাপদ ও নিয়মিত ফেরি যোগাযোগ পেতে চলেছে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এখন বাস্তব রূপ নিতে যাচ্ছে। ফেরি চালু হলে সরাসরি গাড়ি চলাচল সম্ভব হবে, মালবাহী ট্রাক দ্বীপে পৌঁছাতে পারবে সহজে। এতে হাতিয়ার অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা।

হাতিয়া পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই দ্বীপে সাড়ে সাত লাখ মানুষের বসবাস। এতদিন মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌযান—সিট্রাক, ট্রলার ও স্পিডবোট। পুরোনো সিট্রাকের নিত্য বিকল হওয়া, প্রতিকূল আবহাওয়ায় নৌযান বন্ধ থাকা, ট্রলারডুবির ঝুঁকি—সব মিলিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো যাত্রীদের।

বহু সরকারের আশ্বাসেও বড় কোনো উন্নয়ন হয়নি এ যোগাযোগ ব্যবস্থায়। ব্যবসায়ীরা এখনো মান্ধাতার আমলের ট্রলারে মালামাল আনা–নেওয়া করতেন। বর্ষায় নৌদুর্ঘটনায় বহু ব্যবসায়ী পথে বসেছেন বলেও জানান স্থানীয়রা।

এ অবস্থায় নলচিরা ও চেয়ারম্যান ঘাটে ফেরিঘাট নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। দুই পাড়ে এখন চলছে ব্যস্ততা—ভরাট, সড়ক নির্মাণ, ল্যান্ডিং স্টেশন স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দ্রুতই এখানে ফেরি চালু করা সম্ভব হবে।

সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে নলচিরা ঘাটে দেখা যায় স্থানীয় ব্যবসায়ী দুলাল ব্যাপারীকে। ঘাটের অগ্রগতি নিজ চোখে দেখতেই তার প্রতিদিনের এই যাতায়াত। তিনি বলেন, আমরা কখনো ভাবিনি ফেরি আসবে। এখন চোখের সামনে ঘাট হচ্ছে। শতাধিক শ্রমিক দিনরাত কাজ করছে। ফেরি চালু হলে প্রথম উপকার পাবে ব্যবসায়ীরা। মালবাহী ট্রাক দোকানের সামনে পর্যন্ত আসবে—ঝুঁকি কমবে, খরচও অনেক কমবে।

এক সময় চট্টগ্রাম বা চাঁদপুর থেকে ট্রলার বোঝাই করে মাল আনতে গিয়ে কতবার ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে—সেই অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করেন তিনি।

নদীর তীরে কথা হয় পল্লী চিকিৎসক তানভির উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, নৌযান বন্ধ থাকায় অসংখ্য জরুরি রোগীকে ঘাটে আটকা পড়ে থাকতে দেখেছেন তিনি। গর্ভবতী মায়েরা, মুমূর্ষ রোগী—নদী উত্তাল হলে কারো পার হওয়া যায় না। কিছুদিন আগে অনার্স ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগের দিন নৌযান বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় পাঁচশ শিক্ষার্থী ঘাটে আটকা পড়ে। ফেরি চালু হলে এই ভোগান্তি অনেকটাই কমে যাবে, বলেন তিনি।

ইলিশ, ঢাল, বাদাম, ধানসহ হাতিয়ার উৎপাদিত পণ্য এতদিন ছোট নৌযানে ঝুঁকি নিয়ে আনা–নেওয়া হতো। ফেরি চালু হলে এসব পণ্য ট্রাকে করে মোকামে পাঠানো যাবে। এতে নষ্ট হওয়া পণ্য রক্ষা পাওয়া ও সঠিক মূল্য পাওয়ার সুযোগ বাড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

হাতিয়া সম্মিলিত সামাজিক সংগঠনের সদস্য মো. জুয়েল জানান, ফেরি চালুর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন দ্বীপের মানুষ। এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদসহ অনেকেই বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে এই দাবিকে এগিয়ে নিয়েছেন। নৌ–উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন কয়েক দফা পরিদর্শনের পর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের গতি পায়। 

বিআইডব্লিউটিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ এস এম আশরাফুজ্জামান বলেন, ফেরি চালুর জন্য আপাতত দুই পাড়ে লো-ওয়াটার ও মিড-ওয়াটার—মোট চারটি র‌্যাম্পের কাজ চলছে। জোয়ার-ভাটায় যাতে গাড়ি ওঠানামা করতে পারে, সে হিসেবে ঘাট নির্মাণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি জেটি, যাত্রীছাউনি, ব্যাংক প্রোটেকশনসহ আরও কয়েকটি কাজের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। অনুমোদন মিললেই সেগুলোও দ্রুত করা হবে।

আমার বার্তা/জেএইচ