রাতের আঁধারে মেঘনা নদীতে ৯ ঘণ্টা সাতরে বাঁচলেন গৃহবধু

প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৩, ২১:৪৫ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন ডেস্ক

পরিবারের সঙ্গে ঈদ করে ঢাকায় ফিরছিলেন গৃহবধূ জোহরা বেগম। কিন্তু কে জানতো তার জন্য কি অপেক্ষা করছে। 

জোহরা শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের পশ্চিম বিষকাটালি গ্রামের জহিরুল ইসলামের স্ত্রী। স্বামী-সন্তানের সঙ্গে তিনি নারায়ণগঞ্জে থাকেন। 

গ্রামের বাড়িতে ঈদ করে বুধবার রাতে ঈগল-৩ লঞ্চযোগে  ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাত সাড়ে ৯টার দিকে  মাইঝাগা ঘাট থেকে লঞ্চে ওঠেন। সাড়ে ১০টার দিকে লঞ্চটি ঠান্ডাবাজার এলাকায় পৌঁছালে অসাবধানতাবশত জোহরা লঞ্চের দ্বিতীয় তলা থেকে নদীতে পড়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে স্বজনেরা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে দুর্ঘটনার তথ্য জানান। খবর পেয়ে রাতে পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা ওই গৃহবধূকে উদ্ধারে অভিযান চালান।

চলন্ত লঞ্চ থেকে পড়ে গিয়ে টানা ৯ ঘণ্টা মেঘনা নদীতে ভেসে ছিলেন গৃহবধূ জোহরা বেগম (৩৮)। জীবন বাঁচাতে রাতের আঁধারে অদম্য প্রাণশক্তি দিয়ে স্রোতের সঙ্গে টিকে ছিলেন তিনি।
স্থানীয় লোকজন ও জেলেরা জানান, লঞ্চ থেকে পড়ার পর জোহরা নদীতে ভাসতে থাকেন। সারা রাত তিনি নদীতে ভেসে ছিলেন। স্রোতে তিনি এক কিলোমিটার ভাটিতে ঠান্ডাবাজারের কাছাকাছি চলে আসেন

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে জেলেরা তাঁকে উদ্ধার করলে কোস্টগার্ডের সদস্যরা তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেন। লঞ্চ থেকে পড়ে ওই নারীর বাঁ পা ভেঙে গেছে। তাঁকে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।সেখান থেকে তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

গোসাইরহাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মামুন হোসেন বলেন, রাতের আঁধারে গভীর খরাস্রোত নদীতে পড়ে একজন নারীর বেঁচে থাকার কথা না। অলৌকিকভাবে তিনি বেঁচে গেছেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জোহরা বেগমের সঙ্গে কথা বললে তিনি  বলেন, ‘নদীতে পড়ে যাওয়ার পর তলিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার একটাই চিন্তা ছিল, বাঁচতে হবে। বাঁচার ইচ্ছাশক্তি নিয়ে ভেসেছিলাম। চেষ্টা করছিলাম তীরের দিকে যাওয়ার। রাত থাকায় কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। শুধু ভেসে ছিলাম। লঞ্চ থেকে পড়ে যাওয়ার সময় পায়ে আঘাত পেয়েছিলাম। সেই আঘাতের প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছিল। এরপর বাঁচার জন্য নদীতে ভেসেছিলাম।’

জোহরের স্বামী জহিরুল ইসলাম বলেন, নিখোঁজের পর খোঁজাখুঁজি করে যখন তাঁকে পাওয়া যাচ্ছিল না, ধরেই নিয়েছিলাম হয়তো জীবিত পাবো না। আল্লাহর রহমতে তাঁকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। সন্ধ্যায় তাঁর পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।

এবি/টিএ