ময়মনসিংহে পাঙাশ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন খামারিরা
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১০ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

দেশের অন্যতম প্রধান মৎস্য উৎপাদন কেন্দ্র ময়মনসিংহে পাঙাশ মাছের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে। মাছচাষিরা বলছেন, খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, উৎপাদন খরচে লাগামহীন চাপ এবং বাজারে ন্যায্যদাম না পাওয়ার কারণে তারা পাঙাশ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। অনেকে পুকুর খালি রেখে দিয়েছেন, কেউ কেউ আবার অন্য জাতের মাছচাষে ঝুঁকছেন।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে সর্বোচ্চ ৫ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন পাঙাশ উৎপাদন হয়েছিল। এরপর থেকেই উৎপাদন কমতে থাকে। পরের বছর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উৎপাদন কমে হয় ৪ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে উৎপাদন আরও ৫০ হাজার মেট্রিকটন কমে।
এদিকে পাঙাশ উৎপাদনে বিখ্যাত ময়মনসিংহ জেলায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ লাখ ৮২ হাজার ৫৬৭ মেট্রিক টন পাঙাশ উৎপাদন হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯১ হাজার ৭৬১ মেট্রিক টন ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ লাখ ১১ হাজার ৭৪৯ মেট্রিক টন পাঙাশ মাছ উৎপাদন হয়। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ১ লাখ ১১ হাজার ৯৭৬ মেট্রিক টন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে পাঙাশ উৎপাদন খাত একটি নীরব সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা ও প্রোটিনের জোগানে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। একদিকে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে, অন্যদিকে বাজারে ন্যায্য দাম পাওয়া যাচ্ছে না। এই দ্বিমুখী চাপে পড়ে পাঙাশ চাষি ও এই খাতের সঙ্গে যুক্ত মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। আর্থিক অনিশ্চয়তা, ব্যাংকঋণের বোঝা, খাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের বোঝা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চাষিরা। অনেকেই লাভের আশায় চড়া সুদে এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন, কিন্তু লাভতো দূরের কথা- মূলধন রক্ষা করাই এখন চ্যালেঞ্জ। এখন প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ ও কার্যকর নীতিমালা, যেন মানুষের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ মাছটি টিকিয়ে রাখা যায়।
‘আমরা টন হিসেবে খাদ্য কিনি। ২০২৩ সালে পোনা পাঙাশের খাদ্য কিনতে আমাদের প্রতি কেজিতে পাইকারি দাম পড়ত ৯০ টাকা, এখন পাইকারিভাবে ১২৮ টাকা কেজি কিনতে হচ্ছে। খামারিরা আমাদের কাছ থেকে এই খাদ্য ১৩৬ টাকা কেজিতে কিনে মাছকে খাওয়াচ্ছেন।’
চাষিরা বলছেন, পাঙাশ মাছ উৎপাদনে ৭০-৮০ শতাংশ ব্যয় খাবারের পেছনেই যায়। পাঙাশ বাজারে সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে মাছের খাদ্যের দাম কেজি প্রতি ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে চাষিদের মুনাফা মার্জিন নেমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোঠায়। ফলে অনেক খামারি পাঙাশ চাষ ছেড়ে দিয়েছেন।
জেলার ত্রিশাল উপজেলার বৈলর এলাকার পাঙাশ চাষি মো. আফজালুর রহমান। তিনি বলেন, এক বছর আগেও এক কেজি খাদ্য কিনেছি ৯০ টাকা দরে। এখন সেটা কিনতে হচ্ছে ১৩৬ টাকায়। মাছের খাদ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলেও পাইকাররা উপযুক্ত দাম না দেওয়ায় আমাদের পোষাচ্ছে না।
একই উপজেলার সফল মাছচাষি হিসেবে পরিচিত জয়নাল আবেদিন। তিনি বলেন, কয়েকটি পুকুরে পাঙাশ চাষ করতাম। বর্তমানে খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং মাছ বিক্রির সময় পাইকার ও আড়তদারদের দিক থেকে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় পাঙাশ চাষ কমিয়ে দিয়েছি।
আমার বার্তা/এল/এমই
