রাজবাড়ী পরিষ্কারের সময় বিশাল আকৃতির লোহার কড়াই মিললো

প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:০৪ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

দিনাজপুর রাজজবাটি (রাজবাড়ী) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার সময় একটি বিশাল আকৃতির লোহার কড়াই পাওয়া গেছে। 

বুধবার (২২অক্টোবর) দিনাজপুর রাজমহলের একটি কক্ষ থেকে ধ্বসে পড়া সুড়কি সরানোর সময় বিশাল আকৃতির এই কড়াইটি পাওয়া যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, কড়াইট চওড়া চার দিকে ৪৮ইঞ্চি (৪ ফুট) গোলাকার সমতল এবং ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি প্রাচীর। দুই পাশে দুটি বিশাল আকারের গোল আংটা লাগানো। পুরো কড়াইটি লোহার তৈরি।

স্থানীয়দের থেকে জানা গেছে, কড়াইটি রাজা মহারাজাদের আমলে রান্নার কাজে ব্যবহৃত হতো।

অনেক বলছেন, মহারাজা চলে যাওয়ার পর রাজবাড়ীটি ইপিআর ক্যাম্প করা হয়েছিল, এটি তাদের রান্নার কাজে ব্যবহৃত কড়াই, আবার কারও মতে পুণ্যাহ উৎসবে বিশেষ আকৃতির পুরি তৈরির জন্য এই কড়াই ব্যবহার করা হত।

দিনাজপুরে শেষ রাজা জগদীস নাথ রায় বাহাদুর ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান বিভক্তের পর ১৯৫৬ সালে দিনাজপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। এরপর তিনি সবকিছু ফেলে বাংলাদেশ থেকে ভারতে চালে যান। সেই থেকে রাজবাড়ীটি অযত্নে অবহেলায় পড়েছিল। দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে রাজবাড়ী দরজা জানালাসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়ে যায়। রাজবাড়ীটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।

জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম রাজবাড়ীটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম শুরু করেছেন। বুধবার পরিষ্কার করার সময় রাজমহলের একটি কক্ষ থেকে বিশাল আকৃতির কড়াইটি উদ্ধার হয়।

সজিব চন্দ্র রায় ও সুমিল অধিকারি বলেন, এটি রাজাদের আমলেরই কড়াই হবে। সে সময় রাজাদের যারা খাজনা দিত তাদের জন্য হালখাতার মতো অনুষ্ঠান করা হত। সেই অনুষ্ঠানে অনেক লুচি পুরি বুন্দিয়া তৈরি করতে এই কড়াই ব্যবহার হত। এটি আকারে অনেক বড় ও অনেক ওজন হওয়ায় হয়তো কেউ নিয়ে পালাতে পারেনি। খসে পড়া সুড়কিতে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল।

রাজবাড়ীর বাসিন্দা মো. হেলাল হোসেন বলেন, অনেক পুরোন এই কড়াইটি খসে পড়া সুড়কি সরানোর সময় পাওয়া গেছে। তারপর থেকে অসংখ্য মানুষ এটি দেখার জন্য ভিড় করেছে। এটি বর্তমানে মন্দির প্রাঙ্গণে রয়েছে।

দিনাজপুরের সাংবাদিক কলামিস্ট, লেখব ও গবেষক আজাহারুল আজাদ জুয়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির কিছু বছর পর সর্বশেষ মহারাজা জগদীস নাথ রায় বাহাদুর সব ফেলে ভারতে চালে যান। তারপর এটি দীর্ঘদিন ইপিআর বাহিনীর ক্যাম্প করা হয়। পরে তারা এখান থেকে বর্তমান বিজিবি ক্যাম্প কুঠিবাড়ীতে চলে যায়। তা ছাড়াও রাজবাড়ীতে রাজাদের আমল থেকেই পুণ্যাহ উৎসব পালিত হত। আসলে এটি কার আমলে তৈরি করা হয়েছে, কারা ব্যবহার করেছে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা খুব কঠিন। তবে রাজা মহারাজারা দেশ ত্যাগ সময় এখনও শতবর্ষ হয়নি। তাই কড়াইটি রাজা মহারাজাদের আমলের নয় এটিও বলা যাবে না।

তবে জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, উদ্ধার হওয়া কড়াইটি দিনাজপুর জাদুঘরে জমা দেওয়া হবে। এখন সেটি রাজবাড়ীর শ্রী শ্রী কালিয়াজিউ মন্দির প্রাঙ্গণে রাখা হয়েছে।

আমার বার্তা/এল/এমই