ভাঙ্গাবাসীকে মুক্তির দাবিতে উত্তাল মহাসড়ক
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:০৬ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে কেটে নিয়ে ফরিদপুর-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদে মহসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন এলাকাবাসী। এ সময় তাদের ‘ভাঙ্গার এক ইঞ্চি মাটিও নগরকান্দার সঙ্গে মিশতে দেয়া হবে না, ‘রক্ত লাগলে রক্ত নে, ভাঙ্গাবাসীকে মুক্তি দে’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয় মহাসড়ক।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা গোলচত্বরের আশপাশেসহ ৬টি স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছ ফেলে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন তারা। এতে ২১ জেলার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে প্রায় ২৫ কিলোমিটার মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ আন্দোলনে নারীদেরও অংশ নিতে দেখা গেছে।
এ দিকে তীব্র গরমে আন্দোলনে অংশ নেয়া ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে হিটস্ট্রোকে হাবিবুর রহমান হাবিব (৪৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
মহাসড়কে আন্দোলনচলাকালে এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হাজারো জনতা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের হামিরদী ইউনিয়নের পুকুরিয়া, মাধবপুর বাসস্ট্যান্ড এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মুনসুরাবাদ বাসস্ট্যান্ড ও আলগী ইউনিয়নের সুয়াদী এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর পর্যন্ত অবরোধ চলছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
এ সময় হাজার হাজার অবরোধকারীদের কারণে সব ধরণের যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
জানা যায়, গত ৪ সেপ্টেম্বর আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ সংসদীয় আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ তালিকায় ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসনের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনে (সালথা-নগরকান্দা) অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিষয়টি নির্বাচন কমিশন হতে প্রকাশের পর থেকে ভাঙ্গা উপজেলাবাসীসহ ওই আসনের কাজ করা রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
সীমানা পুনর্বহালের দাবিতে গত শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে ও সন্ধ্যায় দুই দফায় ৯ ঘণ্টা ভাঙ্গা উপজেলা দিয়ে যাওয়া ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মনসুরাবাদ এবং ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের হামিরদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবরোধ ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করা হয়। এদিনও দুটি মহাসড়কের অন্তত ২১টি জেলার সব ধরনের যান চলাচল ৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকে।
এক পর্যায়ে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানুর রহমান, ওসি মো. আশরাফ হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতি আশ্বস্ত করলে অবরোধ তুলে নেয় জনতা।
এ দিকে মঙ্গলবার একই দাবিতে ভাঙ্গা উপজেলাবাসী পুনরায় সকাল থেকে তৃতীয় দফায় দুটি ইউনিয়ন ফিরে পেতে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছ ফেলে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ ঘটনায় দক্ষিণ অঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনায় বিভিন্ন পর্যায়ের যানবাহন বন্ধ থাকায় দীর্ঘ প্রায় ২৫ কিলোমিটার মহাসড়ক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে কয়েক হাজার যাত্রী চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
ফরিদপুর শহর থেকে বাসে করে ভাঙ্গার দিকে যাওয়া শারমিন আক্তার নামে ভাঙ্গার পুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ফরিদপুর শহর থেকে ভাঙ্গায় যাওয়ার পথে আমাকে তালমার মোড়ে নামিয়ে দেয় বাস। সামনে আবার অবরোধ করে রাখা হয়েছে। এজন্য হেঁটে স্কুলের দিকে রওনা হয়েছি। জানি না কখন পৌঁছাতে পারবো। তবে ভাঙ্গাবাসীর যৌক্তিক দাবিকে তিনি সমর্থন করেন।
কথা হয় ফরিদপুর শহরের বাসিন্দা মুন্নি খানমের (৪৫) সঙ্গে। তিনি জানান, সকাল ৮টার দিকে ফরিদপুর থেকে প্রাইভেটকারে জরুরি কাজে বিদেশগামী ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। মহাসড়ক অবরোধের কারণে তিনিও ফরিদপুর ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
মুন্নি খানম আরও বলেন, ‘আমার ছেলের বিদেশে যাওয়ার জন্য টাকা পয়সা নিয়ে সমস্যা হয়েছে এজেন্সির সঙ্গে। টাকা ফেরত পেতে মামলা করেছিলাম, আজকে এজেন্সির সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে বসার কথা ছিলো। গাড়ি ভাড়া করে সেখানে যাচ্ছিলাম, কিন্তু যাওয়া হলো না। এতে আমি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হলাম।’
আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিক মিঞা জানান, আমাদের দুটি ইউনিয়ন কেটে নেয়ার আগে আমাদের অবগত করার দরকার ছিলো। ভাঙ্গা উপজেলার দুটি ইউনিয়ন পুনরায় ফরিদপুর-৪ আসনে যুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে। নির্বাচন কমিশন থেকে ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য মহাসড়ক অবরোধ থাকবে।
ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম বলেন, ‘আমাদের দুটি ইউনিয়ন কেটে নেয়া ঠিক হয়নি। আমরা যৌক্তিক দাবিতে শান্তিপূর্ণ অবরোধ করেছি। এর আগে গত শুক্রবার বিক্ষোভ আন্দোলন করেও কোনো সমাধান পাইনি আমরা।’
তিনি বলেন, আমাদের ফরিদপুর-৪ আসনের নেতা শহিদুল ইসলাম বাবুল আদালতে রিট করেছেন। রিটের ২৪ ঘণ্টা পার হলেও নির্বাচন কমিশন থেকে দুটি ইউনিয়ন ফিরিয়ে দেয়ার ঘোষণা না আসায় বাধ্য হয়ে আম-জনতা নিয়ে রাস্তায় নেমেছি।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে মহাসড়ক অবরোধে গিয়ে হিটস্ট্রোকে ‘আন্দোলনকারীর’ মৃত্যু
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রোকিবুজ্জামান বলেন, মহাসড়কটি সবদিক দিয়ে আটকে ফেলায় চারদিকেই যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে রাখায় আমাদের পুলিশের গাড়িও মুভ করতে ঝামেলা হচ্ছে। তবে শান্তিপূর্ণ অবরোধ চলছে। এখন পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
২০১৩ সালের আগে বর্তমান ফরিদপুর-৪ আসনের তিনটি উপজেলার মধ্যে (সদরপুর-চরভদ্রাসন) উপজেলা ছিলো ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসন। এ ছাড়া ভাঙ্গা উপজেলা ছিল ফরিদপুর-৫ আসনের অন্তর্ভুক্ত। পরে ২০১৩ সালে দেশের সংসদীয় আসন সংখ্যা পুনর্বিন্যাসের সময় ফরিদপুরের ৫টি সংসদীয় আসনকে ভেঙে ৪টি করা হয়।
আমার বার্তা/এল/এমই