নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তাল সাগর, ঘাটে ফিরেছে হাজারো ট্রলার

প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ১৭:৪৮ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে পটুয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চল কলাপাড়া-কুয়াকাটা সংলগ্ন সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। ঘাটে ফিরেছে হাজার হাজার মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার। পর্যটকও কমেছে কুয়াকাটায়। বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবে আকাশ ঘন মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে।

গত দুই দিন ধরে উপকূলের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি ও মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। তাই পায়রাসহ দেশের সব সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার গুলোকে উপকূলের কাছাকাছি এলাকায় চলাচল করতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। 

সোমবার (১৯ আগস্ট) সকাল থেকে মৎস্য বন্দর আলীপুর ও মহিপুরের ঘাটগুলোতে হাজারো জেলের সমাগম দেখা যায়। দুই পাড়ের বাজারগুলো জেলেদের আগমনে সরগরম হয়ে আছে। তবে ঘাটে ফেরা অধিকাংশ ট্রলারগুলোই ফিরেছে শূন্য হাতে। জেলেরা বলছে বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবে মাছ ধরে শান্তি নেই সমুদ্রে। 

আবহাওয়া অফিস বলছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপটি আজ সকাল ৬টায় পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আগামীকাল সকাল নাগাদ দক্ষিণ ওড়িষ্যা-উত্তর অন্ধ্র প্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা দিয়ে যে কোনো সময় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।

সমুদ্র থেকে ঘাটে আসা ট্রলার এমভি সামিয়ার মাঝি ফোরকান হাওলাদার বলেন, সমুদ্রে গিয়ে কোনোভাবেই টিকে থাকতে পারি না। ৪-৫ লাখ টাকার বাজার নিয়ে সমুদ্রে গিয়ে বৈরী আবহাওয়ার কারণে খালি হাতে ঘাটে ফিরে আসতে হয়। মাছ ধরতে না পারলে পরিবার নিয়ে কী খাব বুঝতে পারছি না। মহাজনের থেকে টাকা চাইব সে মুখও আমাদের নেই। কারণ তাদেরতো প্রতিবার ৪-৫ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। এখন বর্তমানে সব ট্রলারগুলো ঘাটে অবস্থান নিয়ে আছে, আবহাওয়া ভালো হওয়ার অপেক্ষা করছি আমরা। 

এমভি বাচ্চু ট্রলারের মালিক আবুল হোসেন বলেন, বছরে দুইটি সরকারি নিষেধাজ্ঞা এবং প্রাকৃতিক নিষেধাজ্ঞায় আমাদের মৎস্য পেশা এখন ধ্বংসের দিকে। কারণ এই ব্যবসায় আমাদের কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা, এখন যদি সমুদ্রে মাছ ধরতে না পারি তাহলে পথে বসে যেতে হবে আমাদের। কারণ অধিকাংশ মৎস্য ব্যবসায়ীর বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা করছে। 

এদিকে কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এমএম মোতালেব শরীফ জানান, বর্ষা মৌসুমে এমনিতেই পর্যটক অনেকটা কম থাকে কুয়াকাটায়। এর মধ্যে এ রকম টানা বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবে পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে কুয়াকাটা। গত শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটিকে কেন্দ্র করে কুয়াকাটায় ব্যাপক পর্যটকের সমাগম হয়েছিল। কিন্তু গত দুদিন ধরে তা ভাটা পড়তে শুরু করেছে। মূলত নিম্নচাপের প্রভাবে পর্যটন নগরী কুয়াকাটাসহ উপকূলের আকাশ কালো হয়ে আছে। থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে, বাতাস বইছে। বৈরী আবহাওয়ার এ প্রভাব না কাটলে কুয়াকাটায় পর্যটক বাড়বে না। 

জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা আক্তার জাহান বলেন, এই পরিস্থিতি আগামী ২৪-৭২ ঘণ্টা চলমান থাকবে। তাই উপকূলের সাধারণ মানুষদের সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় যে কোনো সময় দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তাই মাছ ধরার সকল নৌকা ও ট্রলারগুলোকে ঘাটে অবস্থান নিতে বলা হয়েছে। এবং পর্যটন নগরী কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। 


আমার বার্তা/এমই