গোয়াইনঘাটের বালু খেকোদের দাপট; নদীভাঙনে শতাধিক ঘরবাড়ি হুমকির মুখে
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ২১:৪১ | অনলাইন সংস্করণ
মাল্টিমিডিয়া প্রতিনিধি (সিলেট):

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের উত্তর প্রতাপপুর ও দক্ষিণ প্রতাপপুর সহ বেশকটি গ্রাম পিয়াইন নদীর ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে। বালুখেকুরা দানবযন্ত্র ড্রেজার মেশিন দিয়ে দিবারাত্রি অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এলাকার শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। উপজেলার প্রতাপপুর গ্রামের সিদ্দিক আহমদ ও সেবুল মিয়াসহ আরো অনেকে এ প্রতিবেদককে জানান, পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের উত্তরপ্রতাপপুর ও দক্ষিণ প্রতাপপুর ও লুনি গ্রামের খায়রুল আমিন, আজির উদ্দিন, নুরুল ইসলাম, সেলিম মিয়া, ফয়জুল মুরব্বি, তোফায়েল আহমদ , গোলাম মৌলা মেম্বার, সালেহ আহমেদ, সিরাজ মিয়া, রুবেল আহমদ, মানিক মিয়া, রাজ্জাক মিয়া, শুক্কুর মিয়া ও সেলিম মিয়াসহ একটি সংবদ্ধ বালু খেকু চক্র পিয়াইন নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এ দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। বালুখেকু চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায় অসহায় স্থানীয় এলাকাবাসী। যার ফলে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত আড়াই মাস ধরে গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের হাজিপুর এলাকায় পিয়াইন নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন বালুখেকুরা। এতে পিয়াইন নদীর তীরবর্তী পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের হাজিপুর, উত্তরপ্রতাপপুর ও দক্ষিণ প্রতাপপুর সহ বেশকটি গ্রামের ফসলি জমি ও বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। তারপরও বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। হাজিপুর এলাকার উত্তরপ্রতাপপুর ও দক্ষিণ প্রতাপপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অনেকের ঘরবাড়ি এরই মধ্যে ভেঙে গেছে। কারও বাড়ির রান্নাঘরের চুলা ভাঙনের প্রান্তসীমায়।
হেলেনা বেগম নামের একজন গৃহিণী জানান, তার তিনটি সন্তান। স্বামী-সন্তান নিয়ে এখন তাদের থাকার জায়গা নেই। তিনি বলেন, আগে বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় একজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সে আশ্রয়ও এবার ভেঙে গেলো। এখন কোথায় যাবো আমরা?
গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ঘরবাড়ি থেকে নদী ৫০০ মিটার দূরে থাকলেও ভাঙতে ভাঙতে এবার বাড়ির সীমানায় এসে ঠেকেছে। অনেকে এরই মধ্যে সব হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছেন। দ্রুত নদীভাঙন প্রতিরোধ না করা গেলে গ্রামের রাস্তাঘাটসহ প্রায় ১০০ বাড়ি পিয়াইনগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। স্থানীয়রা আরো জানান, হাজীপুর ও প্রতাপপুরের বালু উন্নতমানের বালু। প্রতি ঘনফুট বালু ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়। বালুখেকুদের কারণে সরকারের উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বাড়িঘর-ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের লুনি গ্রামের অভিযুক্ত খায়রুল আমিন জানান, তিনি বালুখেকুচক্রের সাথে সম্পৃক্ত নয়। প্রমাণ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে।
প্রবীণ সাংবাদিক কামাল উদ্দিন আহমদ বলেন, পিয়াইন নদীর হাজীপুর এলাকা থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানান প্রবীণ ওই সাংবাদিক।
গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ সরকার তোফায়েল আহমদ বলেন, হাজীপুর এলাকায় পিয়াইন নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। পুলিশ ওই এলাকা থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার রতন কুমার অধিকারী জানান, হাজিপুর এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে একটি পুলিশ টীম সেখানে পাঠিয়েছি। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।