মুরাদনগর ধর্ষণকাণ্ড; অবশেষে ভুক্তভোগী নারীর মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন
প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৫, ১৬:২৬ | অনলাইন সংস্করণ
হাবিবুর রহমান মুন্না, কুমিল্লা প্রতিনিধি( মাল্টিমিডিয়া ) :

কুমিল্লা মুরাদনগরের পাঁচকিত্তার বাহেরচর গ্রামের আলোচিত ধর্ষণকান্ডের ভুক্তভোগী নারীর অবশেষে ডাক্তারি পরীক্ষা (ফরেনসিক) সম্পন্ন হয়েছে। অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে ও বিশেষ নিরাপত্তা দিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে ধর্ষণের শিকার ২৫ বছর বয়সী ওই নারীকে পুলিশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে ভুক্তভোগী নারীর পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।
এর আগে ঘটনার পরদিন ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে নিয়ে পুলিশ ডাক্তারি পরীক্ষা করানোর জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসলে প্রথমদিকে রাজি থাকলেও পরে বিদেশে অবস্থানরত তার স্বামীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার পর পরীক্ষা করাতে অস্বীকৃতি জানান। অবশেষে ঘটনার ১২ দিনের মাথায় ধর্ষণের শিকার ওই নারী ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে স্বেচ্ছায় রাজি হলে সেই পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়।
বুধবার সকালে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মুরাদনগর থানার এসআই রুহুল আমিন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার পর গত ২৭ জুন দুপুরে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ওই নারীকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা প্রক্রিয়া শুরুর আগেই ভুক্তভোগী নারী তার মত বদলান। তিনি কর্তব্যরত চিকিসককে জানিয়ে দেন, পরীক্ষাতে তার সম্মতি নেই। যে কারণে ওই সময় পরীক্ষাটি সম্পন্ন করতে পারেননি চিকিৎসক।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আরো জানান, আইনানুযায়ী ভুক্তভোগী নারী ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে না চাইলে তাঁকে বাধ্য করার সুযোগ নেই। এ জন্য ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য কুমিল্লা নিয়েও তিনি এখন তাঁর পিত্রালয়ে থাকছেন না। নিজের হেফাজতে অন্যত্র থাকলেও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি ডাক্তারি পরীক্ষার গুরুত্ব বুঝে স্বেচ্ছায় রাজি হলে মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষা না হলে ধর্ষণ হয়েছে প্রমাণ করা কঠিন হতো। এখন এই পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ায় এটি মামলার তদন্তের জন্য ইতিবাচক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। ধর্ষণের সময় ভুক্তভোগী নারীর পরনে থাকা পোশাকসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।
এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ জুন রাতে মুরাদনগরে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের পর নির্যাতন, নিপীড়ন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি আইনে পৃথক দুটি মামলা করেন। ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ফজর আলী গ্রেফতার হলেও তিনি এখনো পুলিশ হেফাজত থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশি পাহারায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক এস এম সাইফুল হাছিব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, ফজর আলীর হাতে ও পায়ের চারটি স্থানে হাড় ভেঙে গেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাটা-ছেঁড়া রয়েছে। ক্ষত শুকানোর পর অস্ত্রোপচার করতে হবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, ফজর আলীর অবস্থা এখনো তেমন উন্নতির দিকে যায়নি। তাঁর অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। হাসপাতাল থেকে তাঁকে ছাড়পত্র দিতে অন্তত দুই মাস সময় লাগতে পারে।
তিনি আরও জানান, ওই ঘটনায় ভুক্তভোগীকে নিপীড়ন ও বিবস্ত্রের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার প্রধান হোতা হিসেবে অভিযুক্ত ফজর আলীর ছোট ভাই শাহপরান পর্নোগ্রাফি মামলায় আটক হয়ে বর্তমানে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। আজ বুধবার শাহপরানের রিমান্ড আবেদনের শুনানি হবে। এর আগে এই মামলায় গ্রেফতার চারজনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।